ঢাকা | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ |
৩১ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক করিডোরের

স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক করিডোরের
স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক করিডোরের

পদ্মা সেতু ঢাকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের শুধু যোগাযোগব্যবস্থাকে বদলে দেবে না, বদলে দেবে অর্থনীতিকে। এই সেতুর কারণে এসব অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে, দারিদ্র্য বিমোচন হবে। এই সেতুই হয়ে উঠতে পারে দেশের নতুন অর্থনৈতিক করিডর।

সেতু চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতু বিভাগ বলেছে, সার্বিকভাবে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে।

পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিডিপি একই প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার ও নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেন। সেখানে তাঁরা দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা বলেন। অবশ্য ওই গবেষণা সেতুতে রেলসেতু সংযোগ করার আগে করা।

জিডিপিতে অবদান বাড়লে স্বাভাবিকভাবে তা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপি বাড়লে দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়বে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, পদ্মার ওপারের ২১টি জেলায় ১৩৩টি উপজেলা আছে। এসব উপজেলার মধ্যে ৫৩টি উচ্চ দারিদ্র্যঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ২৯টি বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া ৪২টি উপজেলা মধ্যম দারিদ্র্য এবং ৩৮টি নিম্ন দারিদ্র্যঝুঁকিতে আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সেতু চালুর পর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হলে দ্রুত ওই এলাকার মানুষের আয় বেড়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের পরে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেশি। এ দুটি বিভাগে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে সাড়ে ২৭ ও সাড়ে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে

দেশে আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু আছে। এর মধ্যে পদ্মার ওপারে শুধু মোংলা ইপিজেড। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যশোর ও পটুয়াখালীতে আরও দুটি ইপিজেড করার প্রস্তাব আছে। এতে এ অঞ্চলে রপ্তানিমুখী খাতে নিয়োগ হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, মোংলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও পায়রা বন্দর এলাকায় চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে। গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুটি বিসিক শিল্পনগরী হচ্ছে। মাদারীপুরে তাঁতপল্লি নির্মাণের কাজও চলছে।

মহাসড়কের আশপাশে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী কলকারখানা করতে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় জমি কিনে রেখেছে।

পর্যটন খাতও অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়বে। একটি বড় শিল্পগোষ্ঠী খুলনায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

জীবনযাত্রায় অবদান

২০১৯ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। আইএমইডি কর্মকর্তারা পদ্মা সেতুর আশপাশের কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ৭৫০ ব্যক্তির ওপর জরিপ চালায়। এতে অংশ নেওয়া ৩০ শতাংশ জানান, সেতুর কাজ শেষ হলে তাঁদের আয় ১৬ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ শতাংশই মনে করেন, পদ্মা সেতুর কারণে কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে। কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাবেন। কৃষকের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য বাজারের সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠা হবে

পণ্য পরিবহন সহজ হবে

মানুষ ও পণ্যের পরিবহন সহজ হলে অর্থনীতিতে অবদান বাড়ে। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি–রপ্তানি হয়। এসব পণ্যবাহী ট্রাককে বঙ্গবন্ধু সেতু ঘুরে কিংবা মাওয়া ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, বেনাপোল থেকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আসতে এখন ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগে। পদ্মা সেতু হলে ছয়–সাত ঘণ্টায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। এতে আমদানি–রপ্তানিতে খরচ ও সময় বাঁচবে।

প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। এতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সাশ্রয়ী হবে।

আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এশিয়ান হাইওয়ে এএইচ-১-এর সঙ্গে যুক্ত হবে পদ্মা সেতু। ফলে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। কলকাতা থেকে পাঁচ–ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় আসা যাবে। কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ট্রানজিটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। সময় ও খরচ—দু–ই বাঁচবে। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।

পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, এত দিন দেশ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশ এক সূত্রে বাঁধা পড়ল। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। ওই অঞ্চল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘পিকেএসএফের মাধ্যমে আমরা মাঠ পর্যায়ে মতামত নিয়ে জেনেছি, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অতিক্ষুদ্র (৭৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ) উদ্যোক্তারা বেশ উৎসাহী। তাঁদের এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনৈতিক করিডোর,পদ্মা সেতু
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend
Vention