ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ |
৪০ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

ফায়ার সেফটি শিল্পে বিকাশে বড় বাধা আমদানিনির্ভরতা - এম. মাহমুদুর রশিদ

ফায়ার সেফটি শিল্পে বিকাশে বড় বাধা আমদানিনির্ভরতা - এম. মাহমুদুর রশিদ
ফায়ার সেফটি শিল্পে বিকাশে বড় বাধা আমদানিনির্ভরতা - এম. মাহমুদুর রশিদ

ভবিষ্যতে আর কোনো রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস কিংবা বিএম কন্টেইনার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেখতে না চাইলে, প্রতিটি ঘর এবং কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইলেকট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) মহাসচিব এম. মাহমুদুর রশিদ।

একই সঙ্গে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে যথাযথ কোড মেনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

সম্প্রতি রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার (৬৮ মিটার) টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) গাড়ির উদ্বোধন করা হয়।

এম. মাহমুদুর রশিদ বলেন, ফায়ার সার্ভিস এখন আর সাধারন দমকল বাহিনী নয়। যেকোনো দুর্যোগেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা সর্বদা প্রস্তুত। আগে ১৪-১৬ তলা পর্যন্ত তাদের অগ্নিনির্বাপণের যন্ত্র ছিল। এখন বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টিটিএল গাড়ির মাধ্যমে ২৪ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণে সক্ষম হবে। বিশেষ করে এফআর টাওয়ার এই উচ্চতার বাধা কিভাবে ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল তা আমরা সবাই দেখেছি। সীতাকুণ্ডের ডিপোতে নিহত হন ১৩ জন ফায়ার ফাইটার। তাদের সবাই অগ্নিবীর।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা কতটা- এ প্রশ্নের জবাবে ইসাব সাধারণ সম্পাদক এম. মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের দেশের পেক্ষাপটে ফায়ার সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটা ভাগ হচ্ছে- বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তথা ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনে ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুলস-রেগুলেশন দেওয়া আছে- কী ধরনের ভবনে কী ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কোন ভবনে কী ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম কীভাবে স্থাপন করত হবে, ক্যাপাসিটি কেমন হবে- এ বিষয়গুলো বিএনবিসি কোডে বলা আছে। সুতরাং আইন অনুযায়ী এসব সরঞ্জাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আছে।

দ্বিতীয় বিষয় হলো সেফটি সচেতনতা। যেমন আমাদের দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু ক্রেতাদের অনেক রকমের নিরাপত্তা চাহিদা রয়েছে। বিদেশি যেসব ক্রেতা আমাদের গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করান তাদের বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স রয়েছে। কমপ্লায়েন্সগুলো মেনে চলা হচ্ছে প্রয়োজনীয়তা, যেটা ঐ ক্রেতাদের সচেতনতা থেকে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে। ক্রেতাদের এই কমপ্লায়েন্স কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমাদের বিএনবিসি কোডের চেয়েও বেশি এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের মালিক তার ভবনের নিরাপত্তায় নিজস্ব নানারকম প্রয়োজনীয়তা থাকে।

যেমন একটি ছোট আবাসিক ভবনে কিনবা দোকানে কিন্তু আইনঅনুযায়ী খুব বেশি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের প্রয়োজন নেই, কিন্তু সচেতনতার দিক থেকে অনেক আধুনিক সরঞ্জাম আছে যেগুলো ব্যবহার করলে অটোমেটিক ভাবে আগুন নিভে যাবে। এবং এধরণের সরঞ্জাম এর চাহিদা বেশ সাড়া পাচ্ছে। আমি অবশ্যই বলবো অগ্নিনিরাপত্তায় বাংলাদেশের মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন।

সুতরাং বলা যায়, শিল্প কারখানা ভবন হোক বা ব্যক্তিগত ভবন হোক- সব ধরনের ভবনেই অগ্নিসরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায়, এমনকি মেগা সিটিগুলো এবং দেশের প্রায় ১০০টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে- এগুলোতে অনেক ভবন হবে, শিল্প কারখানা হবে। এসব ভবনের সবগুলোতেই ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাইলজ অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এখানে উল্লেখযোগ্য, শুধু আইন থাকলেই হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে এবং জনগনকে তা মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। যেমন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অনেক গুলো পন্য, এর মধ্যে অধিকাংশ পন্যের উপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক রয়েছে। ২৫% থেকে কখনো কখনো ৯০%।গার্মেন্টস শিল্পের মতো অন্য সেক্টরগুলোর জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের আমদানি অনতি বিলম্বে সহজ করা এবং তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভবন নির্মাণে গড়ে যে খরচ হয়, তার মধ্যে দুই থেকে আড়াই শতাংশ ফায়ার সেফটি বা নিরাপত্তার জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতেই হয়। দেশে এখন অনেক মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে বিশেষ করে, এটা ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট এর একটি বড় বাজার। ফায়ার সেফটি সরঞ্জামগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে ফায়ার ডিটেকশন সিসটেম- এটি মূলত ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম। এরপর রয়েছে ফায়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এটি মূলত মেকানিক্যাল সিস্টেম। তৃতীয়টি হচ্ছে ফায়ার ডোর।

ইসাব সাধারণ সম্পাদক জানান, এ শিল্পের বিকাশে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বাধা হলে এটি সমপূর্ণ আমদানিনির্ভর একটি খাত। সব ধরনের সরঞ্জামই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এই যে এখন যেমন ডলারের রেটের কাছে টাকার মান কমে গেছে, এতে আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ডলারের মানে যদি ১০ শতাংশ এদিক-সেদিক হয়, তাহলে আমাদের ব্যয়ও বেড়ে যায় ১০ শতাংশ। আর সেটি যদি হয় ২০ শতাংশ, তাহলে ব্যয়ও বেড়ে যাবে ২০ শতাংশ। আবার এসব সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক সময় লাগে এবং অন্য অনেক পণ্য আমদানির চেয়ে ঝামেলা অনেক বেশি। প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যায় ক্লায়েন্টের কাছে পণ্য পৌঁছাতে। কখনো আরও বেশি। এর বাইরেও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এ ব্যবসায়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমরা ব্যবসা করে আসছি। তবে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। আমাদের ইসাব এর সদস্যরা তাদের নিরলস পরিস্রম এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সেক্টরকে অনেক এগিয়ে নিয়ে এসেছে। তারা বিশ্বমানের সেবা এবং পন্য সরবরাহ করছে।

তিন দিনব্যাপী অষ্টম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২২ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। এবার আসন্ন মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এক্সপোতে তিনটি ক্যাটাগরিতে পণ্য প্রদর্শিত করা হবে, যার মধ্যে থাকছে ফায়ার সেফটি সলিউশন, সিকিউরিটি সলিউশন ও অটোমেশন। এই মেলায় ২৬টি দেশের শতাধিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে।

ফায়ার সেফটি,আমদানিনির্ভরতা,এম. মাহমুদুর রশিদ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend
Vention