ঢাকা | শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ |
৩১ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

ই-কমার্সকে আরো কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক করতে করণীয়

ই-কমার্সকে আরো কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক করতে করণীয়
ই-কমার্সকে আরো কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক করতে করণীয়

অনলাইন সেবা কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত বৈদ্যুতিন কর্মকাণ্ডই হলো ই-কমার্স। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, সমন্বিত সরবরাহ নিগড় ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনেট বিপণন, ইলেকট্রনিক ইনভেনটরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, অনলাইন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ এবং স্বয়ংক্রিয় তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিসহ বিচিত্র ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এসব বিবিধ মাত্রা এগিয়ে নিতে ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো ওয়েব পোর্টাল তৈরি করে এবং ই-মেইলের মতো সাধারণ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে। এটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে অনলাইন কেনাকাটা সহজতর করে তোলে।

এ ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার সম্ভাবনা ই-কমার্সে নানা ফরম্যাটের উন্মেষ ঘটিয়েছে। এক. বিটুসি—থার্ডপার্টি বিজনেস টু কনজিউমার; দুই. সিটুসি—কনজিউমার টু কনজিউমার সেলস এবং তিন. বিটুবি—ইলেকট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ। এসব প্রক্রিয়া সম্পাদন হয় ওয়েব যোগাযোগ ও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনমিতিক তথ্য সন্নিবেশ এবং ব্যবহারের মাধ্যমে। নতুন পণ্য ও সেবা চালু করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজটি এভাবেই সম্পন্ন হয়।

ই-কমার্স শব্দটি প্রথম চয়ন ও ব্যবহার করেন ড. রবার্ট জেকবসন। তিনি ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট অ্যাসেম্বলি’স ইউটিলিটিজ অ্যান্ড কমার্স কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাক্টের শিরোনাম ও টেক্সটে তিনি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। এ আইন বলবৎ হয়েছিল ১৯৪৮ সালে।

পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে তখন থেকে ই-কমার্সের বিবর্তনের চিত্রটি সংক্ষেপে তুলে ধরছি। ১৯৮৯ সালের মে মাসে সিকোয়া ডাটা করপোরেশন কমপিউমার্কেট প্রবর্তন করেছিল। এটিই প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ই-কমার্স। এ প্লাটফর্মে বিক্রেতারা ডাটাবেজ সন্ধান করতে পারত এবং ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্রয় করতে পারত। ১৯৯৫ সালের দিকে জেফ বেজোস অ্যামাজন ডটকম চালু করেছিল। আর চীনে ১৯৯৯ সালে আলিবাবা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই জোরোলা রূপান্তর বৈশ্বিক ই-কমার্সকে ১৯৯৯ সাল নাগাদ ১৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি তাত্পর্যজনক বাজারে পরিণত হতে সাহায্য করেছিল। আয়ে লাভযোগ্যতার বড় উল্লম্ফন খুব দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পরবর্তী সময়ে মার্কিন ই-কমার্স ও অনলাইন রিটেইল সেলস প্রায় ২৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। ২০১৩ সালে ই-কমার্সের ব্যবসায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এবং সব রিটেইল বিক্রয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য আরো সাক্ষ্য দেয় যে ২০১৫ সাল নাগাদ সব ই-কমার্স প্রবৃদ্ধির মধ্যে অর্ধেকের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি খোদ অ্যামাজনের হয়েছিল। এই ধারাবাহিক ও বৈচিত্র্যময় প্রবৃদ্ধি ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে রিটেইল ই-কমার্স সেলস ২ দশমিক ৩০৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে সাহায্য করেছিল, আগের বছরের তুলনায় যা ছিল ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি।

এ ধরনের সক্রিয় প্রবণতা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মনোযোগ কেড়েছিল এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বিধিমালা করতে তাদের প্রবুদ্ধ করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইভেসি অ্যাক্ট প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে ই-কমার্স কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, সেই লক্ষ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আইনটি প্রণয়ন ও কার্যকর করা হয়েছিল। ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ই-কমার্স কর্মকাণ্ড আরো ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। অধিকন্তু, বাণিজ্যিক ই-মেইল ও অনলাইন অ্যাডভারটাইজিং ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ই-কমার্স কর্মকাণ্ডগুলোর পাশাপাশি ভোক্তা গোপনীয়তায়ও (কনজিউমার প্রাইভেসি) মনোযোগ দেয়া হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে এফটিসি অ্যাক্টের ৫ ধারার কর্তৃত্ব ব্যবহার করে—যেটি অন্যায্য কিংবা প্রবঞ্চনামূলক চর্চাগুলো নিষেধ করে—এফটিসি ভোক্তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষাসহ করপোরেট প্রাইভেসি স্টেটমেন্টের প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার অনেক ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে। সেগুলো যথাযথভাবে সমাধান করেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সাইবার স্পেসে নানা ধরনের আইনের সংঘাত বিশ্বজুড়ে ই-কমার্সের আইনি কাঠামোয় সমরূপতা আনার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ফলে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স আইনে সমরূপতা আনার উদ্দেশ্যে অনেক দেশেই ১৯৯৬ সালে ইউএনসিট্রাল মডেল আইন গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার প্রটেকশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কও (আইসিপিএন) আছে। এটি গঠন করা হয় ১৯৯১ সালে, আর তা করা হয় সরকারি ফেয়ার ট্রেড সংস্থাগুলোর একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এ পদক্ষেপ আপাতভাবে পণ্য ও সেবা উভয়ের ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত গ্রাহক সমস্যা মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতার উপায় সন্ধানে নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে পারস্পরিক সুফল ও বোঝাপড়ার জন্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ে সাহায্য করার বিষয়টিও এক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে বিবর্তিত হয়ে ই-কনজিউমার ডট গভ নামে একটি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছিল। ২০০১ সালে শুরু হওয়া এ সংগঠনটিও আইসিপিইএনের একটা উদ্যোগ। এটি এমন এক পোর্টাল, যেখানে বিদেশী কোম্পানিগুলোর অনলাইন ও লেনদেন সম্পর্কিত অভিযোগগুলো সহজেই করা যায়।

এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) নামে একটি সংস্থা আছে। মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য লক্ষ্যে এটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অন্যত্র যা ঘটেছে তার সঙ্গে সংগতি রাখতে অ্যাপেকের একটি ইলেকট্রনিক কমার্স স্টিয়ারিং গ্রুপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলজুড়ে কমন প্রাইভেসি রেগুলেশন নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব পালনে এর একটা আলাদা বিভাগও রয়েছে। এটা প্রশংসনীয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ই-কমার্স সম্পর্কিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রেজারি গাইডলাইন এবং অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজিউমার কমিশনের মানদণ্ডের ভিত্তিতে ই-বাণিজ্যের বিভিন্ন ফরম্যাট বিরাজমান। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি দেশটিতে অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দেয়। পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠান ভুল পথে পা বাড়ালে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সেখানে সুশাসনে সচেষ্ট থাকে।

ই-কমার্সের বিকাশ ও প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যও পিছিয়ে নেই। বিশ্বজুড়ে চলা ডিজিটাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংগতি রাখতে ব্রেক্সিট কার্যকর করার আগে বিভিন্ন দিক দেখভালের জন্য ২০১৩ সালে দেশটি দ্য প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পেমেন্ট সার্ভিসেস ডিরেক্টিভের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে তাদের গ্রাহকদের পেমেন্ট সার্ভিস জোগাবে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, নন-ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ইস্যুয়ার, নন-ব্যাংক মার্চেন্ট অ্যাকোয়ারারস, ই-মানি ইস্যুয়ার প্রভৃতি। পিএসআরগুলো পেমেন্ট ইনস্টিটিউশন নামে (পিআই) পরিচিত একটা নতুন ধরনের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এটা করা হয়েছিল মূলত যুক্তরাজ্যে পুরো ইউরোপের মধ্যে ই-কমার্সে মাথাপিছু খরচ বেশি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে।

ভারতে ই-কমার্স ম্যাট্রিক্সের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ন্ত্রিত হয় ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে। সেখানে তথ্য অধিকার আইনও রয়েছে, যেটি এ উদ্যোগকে আরো পৃষ্ঠপোষকতা জোগায়। এভাবে চলছে। তবে চমকপ্রদ একটি তথ্য হলো, দেশটিতে ৭৫ শতাংশের বেশি ই-রিটেইল কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে এখনো গ্রাহকরা ক্যাশ অন ডেলিভারি প্রাধান্য দেয়। বিশেষ করে কভিড মহামারীর অভিঘাতের কারণে এ প্রক্রিয়া আরো যথেষ্ট ভিত্তি পেয়েছে, পাকাপোক্ত হয়েছে।

চীনে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশনস (২০০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণীত) দেশটির শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে (এমআইটি) ই-কমার্সসহ সব ধরনের টেলিকমিউনিকেশন সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি বিভাগ হিসেবে ক্ষমতায়ন করেছে। ফলে দেশটি ই-কমার্স আইনের আরো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারে সমর্থ হয়েছিল। ইতিবাচক প্রবণতা হলো, চীনের ই-কমার্সের ব্যাপকতা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। কারণ দেশটির প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। চীনের অনলাইন বিক্রয় ২০১৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ২৫৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল এবং ওই সময়ে মোট চীনা ভোক্তা রিটেইল সেলসে এর অবদান ছিল ১০ শতাংশ। এ ডিনামিক্স তখন থেকেই বাড়তে থাকে। কেননা চীনা রিটেইলাররা ভোক্তাদের অনলাইন শপিং আরো আরামদায়ক করে তুলতে সমর্থ হয়েছিল।

ই-কমার্স ভোক্তাদের ভৌগোলিক বাধা পার হতে সাহায্য করেছিল এবং যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময়ে তাদের পণ্য কেনার সুযোগ দিয়েছিল। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে অনলাইনের সহজতা। কারণ ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনলাইন ও গতানুগতিক বাজারগুলোর ভিন্ন ভিন্ন কৌশল রয়েছে। বড় তাকের পরিসরের অভাবে গতানুগতিক রিটেইলাররা রকমারি পণ্য কম রাখতে পারে এবং গ্রাহক-ভোক্তাদেরও কম দিতে পারে। তবে ডিজিটালভিত্তিক অনলাইন রিটেইলাররা ভোক্তাদের অর্ডার সরাসরিভাবে উৎপাদকদের কাছে পাঠানোর মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসর সৃষ্টি করে। গতানুগতিক ও অনলাইন রিটেইলারদের প্রাইসিং কৌশলও ভিন্ন। গতানুগতিক রিটেইলারা স্টোর ট্রাফিক ও ইনভেনটরি বজায় রাখায় খরচের ভিত্তিতে তাদের দাম নির্ধারণ করে। অনলাইন রিটেইলাররা অবশ্য তাদের দাম নির্ধারণ করে ডেলিভারির গতির ভিত্তিতে।

এটা স্বীকার করা জরুরি যে ই-কমার্স তথ্য সম্পর্কিত সেবা, সফটওয়্যার অ্যাপস এবং ডিজিটাল পণ্যের কারণে নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতেও সাহায্য করেছে। অন্যদিকে এটি রিটেইল, পোস্টাল ও ট্রাভেল এজেন্সির মতো ক্ষেত্রগুলোয় চাকরিচ্যুতি ঘটিয়েছে। বিশ্লেষকরা এসব ফ্যাক্টরের উভয়ই বিবেচনায় নিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে উভয় ফ্যাক্টরেরই নিজস্ব অর্থময়তা, মাত্রা আছে। সাধারণত মনে করা হয়, ই-কমার্সের উন্নয়ন বিপুল পরিমাণ তথ্য, গ্রাহক চাহিদা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সামলাতে প্রয়োজন হওয়া উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ইঙ্গিত রয়েছে যে এটা তরুণ জনগোষ্ঠীকে আরো বেশি ডিজিটাইলাজড ও সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করবে। এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে গ্রাহকদের কাছে সময়মতো ডেলিভারির জন্য পর্যাপ্ত মজুদ প্রয়োজন হওয়ায় এক্ষেত্রে ওয়্যারহাউজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়েছে এবং বিপরীতক্রমে এটি সামলাতে, তত্ত্বাবধান করতে, অর্গানাইজ করতে আরো কর্মীর প্রয়োজন হবে। এটা যেন একই মুদ্রার উল্টো পিঠ। কোনো কোনো খাতে চাকরিচ্যুতি ঘটালেও অন্য অনেক খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে বৈকি।

সন্দেহ নেই, ই-কমার্স গ্রাহকদের জন্য বাড়তি কিছু সুফল বয়ে আনে, যেহেতু তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয় না। শুধু অনলাইনে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে হয়, বিশেষ করে সেসব পণ্য কেনার জন্য, যা সংলগ্ন দোকানগুলোয় বিক্রি হয় না। এটি বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনতে গ্রাহকদের সুযোগ করে দেয় এবং তাদের মূল্যবান সময় বাঁচায়। অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে ভোক্তারাও ক্ষমতা অর্জন করে। তারা পণ্য সম্পর্কে গবেষণা এবং রিটেইলারদের মধ্যে দামের তুলনামূলক তারতম্য করতে সমর্থ হয়। অধিকন্তু, ই-কমার্স পণ্যের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে, যা দোকানের কর্মীরা দিতে সমর্থ নন। ই-কমার্স প্রযুক্তিগুলো উৎপাদক ও ভোক্তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়ানোর সুযোগ দিয়ে লেনদেন ব্যয়ও কমাতে পারে।

এর সবই ভালো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ই-কমার্স ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। ই-কমার্স রিটেইলারদের প্রবঞ্চনামূলক পদক্ষেপে অনেক ভোক্তাই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী শুধু ফেসবুকেই আট হাজার ই-কমার্স পেজ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি), বিজনেস টু কনজিউমার (বিটুসি), বিজনেস টু কনজিউমার (সিটুসি) এবং বিজনেস টু এমপ্লয়ি (বিটুই)—এ চার ধরনের ই-কমার্সই জনপ্রিয়। বিটুবি কোম্পানিগুলো অন্য কোম্পানিগুলোর জন্য সাধারণত অফিশিয়াল সরঞ্জাম, স্টেশনারি, কম্পিউটার ও ক্লিনিং কেমিক্যাল জোগান দেয়। আর বিটুসি ধরনটি বিকাশ লাভ করেছে খাবারের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। আবার বিটুইর অধীনে অনেক ওয়েবসাইট আছে, যারা বাংলাদেশে চাকরি-বাকরি সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করে।

বিশ্বের অন্য অনেক অংশের মতো বাংলাদেশে ই-কমার্স প্যারাডাইমের মধ্যে এ খাতে ডিজিটাল কারসাজির মাধ্যমে জালিয়াতির কয়েকটি ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারিতে ব্যর্থতা এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঠকানোর অভিযোগে ১৭ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। এটা একটা ভালো সূচনা।

ই-কমার্স রিটেইলারদের মধ্যে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন, বিধিমালা ও সংবিধি প্রণয়ন করা জরুরি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যথাযথ তদারকির সঙ্গে শাস্তির বিধান রেখে নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা করা প্রয়োজন। এগুলো করলেই তবে আমাদের ই-কমার্স পলিসি-২০২০, ডিজিটাল কমার্স অপারেশন গাইডলাইন-২০২১ ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা ও দুর্বৃত্তদের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী হবে বৈকি।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার; বৈদেশিক বিষয়াবলি, তথ্য অধিকার ও সুশাসন-সংক্রান্ত বিষয়ের বিশ্লেষক

ই-কমার্স,জবাবদিহিতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend
Vention