ঢাকা | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
২৬ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী বাংলাদেশ তৈরিতে ৫ সুপারিশ

২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী বাংলাদেশ তৈরিতে ৫ সুপারিশ
২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী বাংলাদেশ তৈরিতে ৫ সুপারিশ

‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উদ্ভাবন পরিকল্পনা, বিদ্যমান সুযোগকে কাজে লাগানো, উন্নত প্রযুক্তির দক্ষ ব্যবহার, ডেটা-ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এটুআই আয়োজিত ২০৪১ সালের উদ্ভাবনী বাংলাদেশ (ইমাজিনিং বাংলাদেশ ইন ২০৪১) শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ এই সুপারিশ তুলে ধরেন। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি; ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) কালেক্টিভ ইন্টিলিজেন্স, পাবলিক পলিসি অ্যান্ড সোশ্যাল ইনোভেশন-এর অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের নেস্টা’র সাবেক সিইও স্যার জিওফ মলগান, সিবিই,; যুক্তরাষ্ট্রের পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট এর প্রধান ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা জনাব মেই লিন ফাং; হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (এইচএইএফএ) সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২০ এর জন্য মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. রুহুল আবিদ, এমডি, পিএইচডি; এবং কনফিগভিআর ও কনফিগআরবট এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রুদমিলা নওশিন। প্যানেল আলোচনা মডারেট করেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।

আলোচনার শুরুতে গত ১২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি, বলেন, “আমাদের সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর এখন আমরা ‘উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট ও উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”

অধ্যাপক স্যার জিওফ মুলগান ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্র কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে বিদ্যমান অনেক চাকরির সুযোগ অদূর ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে শ্রম-নির্ভর যেসব চাকরি রয়েছে। ভবিষ্যৎ-ভিত্তিক কর্মক্ষেত্রের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এবং প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ডেটা ব্যবহার এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে।” তিনি বলেন, আমি মনে করি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সক্ষমতা তৈরি করতে পেরেছে। তারা দেশের জনগণের বুদ্ধিভিত্তিক সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পেরেছে।”

২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন নির্মূল করার বিভিন্ন উপায়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মেই লিন ফাং বলেন, “ডিজিটাল বিভাজন নির্মূলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো তাদের ফিডব্যাকগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি তার জন্য আমাদের মধ্যে অংশীদারিত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। আর ডিজিটাল বিভাজন নির্মূলে এটাই সেরা মাধ্যম হবে। এসব ফিডব্যাকগুলো সমাধান করতে পারলে সেটাই বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে। যাতে দেশের সব মানুষ ডিজিটাল উন্নয়নের সাথে যুক্ত হতে পারে।”

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) গুরুত্ব তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. রুহুল আবিদ। তিনি বলেন, “নতুন নতুন উদ্ভাবনের সাথে প্রতিযোগিতাও বাড়বে। সরকারকে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলো নুতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে পারে। ডেটা সম্পর্কিত তথ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকার নেতৃত্ব দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা সবার কাছে সাশ্রয়ী হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সকলের কাছে সহজলভ্য না হলে কেউ এ সেবা নিতে পারবে না। আর এটাকে সফল করার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।”

রোবোটিক্স, এআর এবং ভিআর-এর প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে রুদমিলা নওশিন বলেন, “অনেকদিন ধরেই প্রায় সব ধরনের কারখানায় মানুষকে সাহায্য করছে রোবট। রোবট উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং ঝুঁকির হার কম। এআর-ভিআর ও রোবোটিক্স সম্মিলিতভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং এটি আরো ভালো সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের ব্রেনকে আরো কাজে লাগাতে হবে এবং এইসবক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যত হয়তো শারীরিক শ্রমের চাকরি নাও থাকতে পারে, তবে এই চাকরিগুলো আরো ভাল কিছু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। তাই, আমি মনে করি সম্মিলিতভাবে এগিয়ে গেলে ২০৪১ সালে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এই বছর ডিজিটাল যুগে পা রেখেছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি উদাহরণ দেওয়ার মতো জাতিতে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে বাংলাদেশের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হবে ২০ বছর পরে। কেননা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্যমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক, উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে। বিগত এক যুগে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পুরনো রৈখিক উন্নয়ন মডেলগুলোকে ছাপিয়ে এবং একটি অভিনব ও বিকল্প উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি “উন্নয়নের রোল মডেল” হিসেবে প্রশংসিত হয়ে এসেছে। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্ভাবনী বাংলাদেশ,৫ সুপারিশ,২০৪১
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend