ঢাকা | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
২৭ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

পুঁজিবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ

পুঁজিবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
পুঁজিবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ

পুঁজিবাজারে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় শেয়ার কেনাবেচায় অনিয়ম করেছে বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক। ইএম পাওয়ার নামে অখ্যাত এক কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের দেড় কোটি শেয়ার সাড়ে সাত কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট সাড়ে ২২ কোটি টাকায় কিনেছে ব্যাংকটি। সাড়ে তিন বছর আগের এ বিনিয়োগের বিপরীতে এখনও এক টাকাও রিটার্ন পায়নি ব্যাংকটি। আবার প্রিমিয়ামের সাড়ে সাত কোটি টাকা ইএম পাওয়ারের হিসাবে যোগ হয়নি। এ অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিনিয়োগকে সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে সম্প্রতি পুরো বিনিয়োগের সমপরিমাণ অর্থ গত বছরের মুনাফা থেকে প্রভিশন রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাউথইস্ট ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগেও অনিয়ম করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সীমা অতিরিক্ত শেয়ার কেনে। এ অপরাধে ব্যাংকটিকে একাধিকবার জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইএম পাওয়ারে প্লেসমেন্ট :ইএম পাওয়ারে সাউথইস্ট ব্যাংক ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার পাঁচ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ১৫ টাকা দর হিসেবে মোট ২২ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও ইএম পাওয়ারের এমডি এবং সিএফও সমকালকে জানিয়েছেন, তারা অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরেই শেয়ার বিক্রি করেছেন।

ইএম পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আনসার উদ্দিন বলেন, তিনি অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরেই শেয়ার বিক্রি করেছেন। একই তথ্য জানিয়েছেন কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ ওয়ালী আশরাফ। অর্থাৎ ইএম পাওয়ারের শেয়ার কিনতে সাউথইস্ট ব্যাংক প্রিমিয়াম বাবদ সাড়ে সাত কোটি টাকা ইএম পাওয়ারের অ্যাকাউন্টে যোগ হয়নি। তিনি আরও জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে তাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, তাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়।

সাউথইস্ট ব্যাংকের নথি বলছে, এ শেয়ার কিনতে অভিহিত মূল্যের হিসাবে একটি চেকে ১৫ কোটি টাকা এবং প্রিমিয়াম হিসেবে পৃথক আরেক চেকে মোট সাড়ে সাত কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। প্রিমিয়ামের টাকা ইএম পাওয়ারের হিসাবে যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে না গেলে তবে কে এ টাকা নিয়েছেন, কেউ তা স্বীকার করছেন না। এছাড়া কোম্পানির হিসাবে কোনো প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট নেই।

শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় শেয়ার কেনাবেচার ঘটনায় মূল টাকা বা প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে সাধারণত ব্যক্তির শেয়ার কেনায় এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকের বিনিয়োগে এমন জালিয়াতির ঘটনা নতুন ও অভিনব।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অধিক লাভজনক কোম্পানির শেয়ার প্রিমিয়ামে বিক্রি হতে পারে, হয়ও। কিন্তু অখ্যাত ও অলাভজনক কোম্পানির শেয়ার প্রিমিয়ামে কেনা সন্দেহজনক। এক্ষেত্রে এমন শেয়ার কেনাবেচায় অহরহ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন জালিয়াতি হলে তা খুবই দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা উচিত।

জানা গেছে, ইএম পাওয়ার মূলত আমদানি করা জেনারেটর বিক্রি করে। কিন্তু জেনারেটর উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে একাধিক বড় কোম্পানির সিনিয়র পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা এমন কোম্পানির নাম কখনও শোনেননি বলে জানান। কোম্পানিটির অবস্থা বিষয়ে ধারণা পেতে এর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি স্বাক্ষরবিহীন অতিসংক্ষিপ্ত একটি আর্থিক বিবরণী পাঠায়। এতে দেখা যায়, এ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার চারজন এবং পরিশোধিত মূলধন ৫৫ কোটি টাকা অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার সাড়ে পাঁচ কোটি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আনসার উদ্দিনের শেয়ার ২ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার এবং তার স্ত্রী উম্মে বুশরার শেয়ার পৌনে ৯ লাখ। দ্বিতীয় শীর্ষ শেয়ারহোল্ডার সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার দেড় কোটি, তৃতীয় সর্বোচ্চ শেয়ার বে লিজিংয়ের।

সন্দেহজনক এ বিনিয়োগের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিংয়ের আদেশ দিয়ে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, পরিচালনা পর্ষদের সম্মতি ছাড়া ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর ইএম পাওয়ার নামক কোম্পানিতে সাড়ে ২২ কোটি টাকার মূলধনি বিনিয়োগের বিপরীতে কোনো রিটার্ন না পাওয়ায় এবং সংশ্নিষ্ট কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন সংরক্ষণ না করায় এ বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ইএম পাওয়ারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে স্বীকার করছেন সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল আহমেদ চৌধুরী। সমকালকে তিনি বলেন, 'এরই মধ্যে কোম্পানিটির লোকজনকে ডাকিয়েছি, তাদের থেকে বিনিয়োগের টাকা ফেরত নেব।' শেয়ারপ্রতি পাঁচ টাকা প্রিমিয়ামসহ ১৫ টাকা দরে শেয়ার কেনা হলেও কোম্পানিটি ১০ টাকা করে বিক্রি করেছে- ইএম পাওয়ারের এমন দাবি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানি প্রিমিয়ামসহ টাকা চেয়েছিল। ব্যাংক সেভাবে দিয়েছে।

ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের সীমা অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে না পারার কারণ বিষয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি বলেন, শেয়ারবাজারে এ কোম্পানির খুব একটা শেয়ার কেনাবেচা হয় না। বুধবারও তিন হাজার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ পালনে বিলম্ব হচ্ছে।

পুঁজিবাজার,সাউথইস্ট ব্যাংক,ঝুঁকিপূর্ণ,সন্দেহজনক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend