ঢাকা | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
১৯ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

সিরামিক টাইলসের বাজার ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা

সিরামিক টাইলসের বাজার ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা
সিরামিক টাইলসের বাজার ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা

পাঁচ বছর আগে দেশে সিরামিক টাইলসের বাজারের আকার ছিল ৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার। তার মধ্যে ৭১ শতাংশ ব্যবসা ছিল দেশীয় কোম্পানির কাছে। বাকিটা ছিল আমদানি হওয়া বিদেশি টাইলসের দখলে। গত অর্থবছরে টাইলসের সেই বাজার বেড়ে ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে দেশীয় কোম্পানির হিস্যাও বেড়ে হয়েছে ৮৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রুচির পরিবর্তন এবং রাজধানীর বাইরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে টাইলসের বাজার বড় হচ্ছে। সেই বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিস্যাও বাড়ছে। তাতে আমদানি কমছে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আসায় টাইলসে স্বনির্ভরতার পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সিরামিক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্ভাবনা থাকায় সিরামিক খাতে দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। মানসম্মত টাইলস দেশেই উৎপাদিত হওয়ায় বিদেশি টাইলস ছেড়ে দেশে উৎপাদিত টাইলসের প্রতি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। করোনাকালে জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় আমদানি করা টাইলসের দাম বেড়েছে। তাতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা আরেক দফা বেড়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে সিরামিকের উপখাত হচ্ছে তিনটি—তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। এসব পণ্য উৎপাদনে ৭০টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ২০টি তৈজসপত্র, ৩২টি টাইলস ও ১৮টি স্যানিটারিওয়্যারের কারখানা।

সিরামিক খাতের বেশির ভাগ বিনিয়োগ এসেছে ২০০০ সালের পর, গত ২০ বছরে। এই খাতের কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০টিই গত দুই দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিসিএমইএ জানায়, দেশে সিরামিক পণ্যের বাজার ৭ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকার। তার মধ্যে টাইলসের বাজারই ৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকার। তৈজসপত্র ও স্যানিটারিওয়্যারের চেয়ে বাজার কয়েক গুণ বড় হওয়ায় গত চার-পাঁচ বছরে টাইলসে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। সব মিলিয়ে টাইলসে ৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিগুলো।

ছয় দশক আগে এ ভূখণ্ডে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়। তবে টাইলসের যাত্রাটা শুরু হয় আরও পরে। ১৯৯৩ সালে দেশে প্রথম টাইলস কারখানা স্থাপিত হয়। নাম—মধুমতি সিরামিকস। তারপর একে একে বাজারে আসে আরএকে, সিবিসি, মীর, গ্রেটওয়াল, আকিজ, স্টার, ডিবিএল, শেলটেকসহ বেশ কিছু কোম্পানি। গত বছর টাইলস উৎপাদন শুরু করে ফ্রেশ সিরামিক ও তুষার সিরামিক। বর্তমানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আছে বিএইচএল নামের আরেকটি কোম্পানি। তারা হবিগঞ্জে কারখানা করেছে। একই জেলায় টাইলসের আরেকটি কারখানা করছে আহসান গ্রুপ।

আবাসন খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শেলটেক। তিন দশকের যাত্রায় অন্য অনেক খাতের ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করেছে তারা। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোলায় তাদের কারখানার একটি ইউনিটে মেঝে (ফ্লোর) ও দেয়ালের (ওয়াল) টাইলস উৎপাদন শুরু হয়। তখন তাদের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট। পরে আরও দুটি ইউনিট চালু হয়। বর্তমানে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা দিনে ৪ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট।

শেলটেক সিরামিকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান বলেন, ‘করোনার ধাক্কা কাটিয়ে টাইলসের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে কাঁচামাল আমদানি নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছি আমরা। জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। আবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণেও ইউরোপ থেকে কাঁচামাল কিনতে ক্রয়াদেশ দেওয়া যাচ্ছে না।’

চিনি, ভোজ্যতেল, সিমেন্টসহ নানা খাতে সফলতার পর টাইলসের ব্যবসায় নেমেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই। ‘ফ্রেশ সিরামিকস’ ব্র্যান্ড নামে গত বছর সেপ্টেম্বরে টাইলস বাজারজাত করতে শুরু করে মেঘনা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা ঘাটের আষাঢ়িয়ার চরে ৫০০ কোটি টাকার আধুনিক কারখানায় টাইলস উৎপাদন করছে মেঘনা গ্রুপ। সেখানে প্রতিদিন ৩৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস উৎপাদন হচ্ছে।

মেঘনা সিরামিকের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো. কাউছার আলম বলেন, ‘বাজারে চাহিদা থাকায় উৎপাদনক্ষমতার শতভাগ কাজে লাগিয়ে টাইলস উৎপাদন করছি আমরা।’

এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে সিরামিকশিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, সিরামিক কারখানায় পণ্য প্রস্তুতে কিলন বা চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। সেই হিসাবে এই শিল্পে গ্যাস একটি অন্যতম কাঁচামাল। পণ্য উৎপাদনে ১০-১১ শতাংশ খরচই গ্যাসের পেছনে হয়।

জানতে চাইলে বিসিএমইএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দেশে টাইলসের বাজার প্রতিদিনই বাড়ছে। কারণ, শহরের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন শুরু হয়ে গেছে। আগামী দিনেও উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। দেশের উদ্যোক্তারা যেভাবে বিনিয়োগ করছেন, তাতে খুব শিগগিরই আমদানি হওয়া টাইলসের পরিমাণ কমে আসবে।

সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুতের দাম যদি দ্বিগুণ বেড়ে যায়, তাহলে সিরামিকশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।তখন আমদানি হওয়া টাইলসের তুলনায় দেশীয় টাইলসের দাম বেশি হয়ে যাবে।তাতে যেটি হবে, আমদানি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে।দেশীয় উদ্যোক্তাদের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকি মুখে পড়বে।সিরামিক পণ্য উৎপাদনের সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।সেই বিবেচনায় সিরামিকশিল্পের ভবিষ্যৎ গ্যাস-বিদ্যুতের দামের ওপর নির্ভর করছে।তাই গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি থেকে সিরামিক খাতকে বাইরে রাখতে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

সিরামিক,টাইলসে,৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend