৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অভিজাত রোসা ফসেট্স ও বাথওয়্যার পণ্য নিয়ে এসেছে আকিজ গ্রুপের অঙ্গসংগঠন আকিজ বাথওয়্যার।
মঙ্গলবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোসা ফসেট্স এবং বাথওয়্যার-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রার উদ্বোধন করা হয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালে এ কারখানাটি গড়ে তোলা হচ্ছে।
আকিজের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে তাদের কারখানায় ৬০ হাজার পিস পানির কল, ওয়াশার, ঝরনা ও স্নানের পোশাক রাখার স্ট্যান্ড তৈরি হবে। আকিজ বাথওয়্যারের কারখানায় কর্মসংস্থান হবে ৫০০-এর বেশি শ্রমিকের।
প্রতিষ্ঠানটি আকিজ সিরামিকের রোসা ব্র্যান্ড নামেই এসব বাথওয়্যারসামগ্রী বাজারজাত করবে। প্রাথমিকভাবে বছরে ২০০ থেকে ২২০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কোম্পানিটি। ভবিষ্যতে সেন্সরযুক্ত পানির কল বানানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আকিজ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এসকে বশির উদ্দিন বলেন, আকিজ সবসময় গ্রাহকদের সেরা পণ্যটিই দিতে চায়। এই প্রোডাক্ট লঞ্চ করতে আমাদের প্রায় ৪ বছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে প্রথম দেড় বছর আমরা রিসার্চ করেছি। আমরা মনে করি, বর্তমানে বাজারে যে পণ্য আছে, দেশের কাস্টমাররা এর চেয়ে অনেক ভালো পণ্য পাওয়াটা ডিজার্ভ করে। আমরা সেরাটা দিতেই কাজ করে যাচ্ছি।
ইংল্যান্ডের বাজারে ফসেট্স এক্সপোর্ট করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আশা করছি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ থেকে আমরাই প্রথম এই পণ্য রপ্তানি করবো।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আকিজ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের পরিচালক মোঃ খোরশেদ আলম, আকিজ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের ডিএমডি শামসুদ্দিন আহমেদ, আকিজ বাথওয়্যারের হেড অব সেলস মোস্তাফিজুল আরেফিন, রোসার ব্র্যান্ড লিড গোলাম রব্বানী এবং আকিজ বাথওয়্যারের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
আকিজ বাথওয়্যারের ডিলার এবং বিশিষ্ট স্থপতিরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান বাবু, আখি আলমগীরসহ বিভিন্ন শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।
খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর পানির কল (ট্যাপ, ওয়াশার, ঝরনা) ও স্নানের পোশাক রাখার স্ট্যান্ডের বাজারটি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার, এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫%।
তবে এই বাজারের ৫১% এর বেশি আমদানি করা বিদেশি পণ্যের দখলে। বাকিটা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে। তবে বাজারে ব্র্যান্ডের বাথওয়্যারসামগ্রী হাতে গোনা।
বর্তমানে এ বাজারে উল্লেখযোগ্য ব্রান্ডের মধ্যে রয়েছে শরিফ, সাত্তার, তানভীর, আরএফএল ও রাজা। দেশের প্রতিষ্ঠিত বড় শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে এই বাজারে প্রথম প্রবেশ করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এখন নতুন করে আকিজ বাথওয়্যার বড় বিনিয়োগ নিয়ে এলো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫০টি কোম্পানি প্লাস্টিক, ইস্পাত ও ধাতব কল এবং শাওয়ারহেড তৈরি করে। এই কোম্পানিগুলির পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বিব কক পানির ট্যাপ, ঝরনা, ওয়াটার ক্লোজেট কমোড, বেসিন ট্যাপ এবং স্কোয়াট টয়লেট ট্যাপ।
আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট বা ব্যয়বহুল হোটেল এবং রিসর্টের ক্ষেত্রে, স্যানিটারি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইতালি, জার্মানি, কোরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন এবং তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হয়। সস্তা ও নিম্নমানের পণ্যও চীন থেকে আমদানি করা হয়। সামগ্রিকভাবে, দেশে বিক্রি হওয়া মোট স্যানিটারি ফিটিংসের ৫০% এর বেশি বিদেশি পণ্য।
বর্তমানে, কোনো দেশীয় কোম্পানি ট্যাপ উৎপাদন করেন না। স্থানীয় বাজারে, ১৯৭৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা শরীফ মেটাল প্রথম কোম্পানি। কোম্পানিটি ৩০টিরও বেশি ধরনের টয়াপ তৈরি করে এবং এর বাজার শেয়ার ১০% এর সামান্য কম।
ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির তথ্য বলছে, একটি ত্রুটিপূর্ণ ট্যাপ থেকে প্রতি সেকেন্ডে এক ফোঁটা করে বছরে প্রায় ৩,০০০ গ্যালন পানি নষ্ট হয়, যা প্রায় ১৮০ বার গোসল করার জন্য যথেষ্ট। একটি ভাল ট্যাপ বেছে নেওয়া ওয়াশরুমে স্যাতস্যেতে ভাব কমানোর সাথে সাথে পানির অপচয় রোধ করে।