দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে কাল বুধবার (১৫ নভেম্বর)। তফসিল ঘোষণার পর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য তফসিলের পর নাশকতা ঠেকাতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর ওপরে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। একইসঙ্গে ঢাকার ভেতরে এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর নাশকতা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আমরা সব ধরনের নাশকতা ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করবো। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এ জন্য আইনানুগভাবে সবকিছুই করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর এদিন সন্ধ্যায় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ওই ভাষণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণা দিতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনের আগে বেশি সহিংসতা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা শহরে। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বগুড়ায় সহিংসতা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় মোট ৬২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর বিভাগে ১৫টি, ওয়ারী বিভাগে ১৩টি, মতিঝিল বিভাগে ১০টি, তেজগাঁও বিভাগে ৮টি, রমনা বিভাগে ৬টি, গুলশানে ৫টি, লালবাগে ৩টি, উত্তরা বিভাগে ২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া থানা এলাকা হিসেবে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৯টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ডিএমপির সদর দফতরে দিনভর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঢাকার ৫০ থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মনিটরিং সেলের মামলাগুলো নিয়ে বৈঠক হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা। তবে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনার পুরো সময়টাতেই বিএনপির চলমান আন্দোলন, অবরোধ ও তফসিলের পর সম্ভাব্য নাশকতা এবং সহিংসতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, ডিএমপি কমিশনার আইনের মধ্যে থেকে সহিংসতা ঠেকানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনও অবস্থাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক প্রচারণা হয়—এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং গুলি চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধীনস্থদের গণগ্রেফতার না করে সুনির্দিষ্টভাবে নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্তদের গ্রেফতারে জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকায় বাসে আগুন ঠেকানোকে জোর দিয়ে প্রতিটি ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই যেন চলমান সহিংসতার পরিধি আর না বাড়ে সেজন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সহিংসতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বেশি প্রচারণা পেতে পারে। এ জন্য সহিংসতার পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, যেকোনও মূল্যে সহিংসতা বন্ধ করার প্রতি জোর দিতে বলা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত কমিশনার পর্যায়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, চলমান সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশের তৎপরতা প্রশংসনীয়। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কেউ যেন গ্রেফতার-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, চলমান অবরোধে আগের মতোই রাজধানী ঢাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে বুধবার (১৫ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা হলে সন্ধ্যায় প্রয়োজনে আরও বেশি ফোর্স মোতায়েন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সহিংসতা হতে পারে, সেসব এলাকায় পোশাকধারী পুলিশি টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি করার নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।