ঢাকা | বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ |
২৯ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

‘নগদ’ থেকে বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উধাও থামছেই না

‘নগদ’ থেকে বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উধাও থামছেই না
‘নগদ’ থেকে বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উধাও থামছেই না

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাথপুকুরিয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তির বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নগদ একাউন্ট থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারের জন্য তারা শনিবার ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের দারস্থ হন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছে।

ভাতাভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল ওহাবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাজন নামে এক কলেজছাত্র এই টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। ডাকবাংলা বাজারের নগদ’র এজেন্ট হবিবুর রহমানও স্বীকার করেছেন রাজন মাঝেমধ্যে এসে ভাতাভোগীদের টাকা উঠিয়ে নিয়ে যায়।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মাখন বিশ্বাস জানান, ভাতাভোগী নুরুল ইসলাম, ফেরদৌসি খাতুন, নুর আলম ও বাবুল হোসেন টাকা না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেন। তিনি সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছেন বাথপুকুরিয়া গ্রামের প্রায় ৬/৭ জন বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের ভাতার টাকা পাননি। বিষয়টি প্রযুক্তিগত ও জটিল হওয়ায় তিনি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে ভুক্তভোগীদের শনিবার থানায় ডেকে তাদের বক্তব্য শোনেন। ভাতাভোগীরা ইউপি মেম্বরের সহযোগী বাথপুকুরিয়া গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে রাজনকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দেন।

প্রতিবন্ধী ফেরদৌছি বেগম অভিযোগ করেন, রাজন তাদের বই ও সিমসহ মোবাইল নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে একাউন্টে কোনো টাকা নেই। টাকা তুলে দেয়ার কথা বলে দুইশ’ টাকাও নেয় রাজন।

একই কথা জানান বাথপুকুরিয়া গ্রামের বিধবা শামারুপ নেছা, আছিয়া বেগম, আমেনা খাতুন, প্রতিবন্ধী নুর আলম ও বাবুল। তাদের ভাষ্য, কলেজছাত্র রাজন টাকা উত্তোলনের কথা বলে নিজেই তাদের টাকা তুলে নিয়েছেন। এই টাকা তুলে তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছে।

আব্দুল খালেক নামে এক প্রতিবন্ধীর বাবা জানান, ব্যাংক থেকে যখন টাকা প্রদান করা হতো, তখন তাদের কোনো টাকা খোয়া যায়নি। মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর তাদের এলাকার বহু মানুষের ভাতা নগদ একাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কলেজছাত্র রাজন জানান, তিনি কারো টাকা উত্তোলন করেননি। সামনে নির্বাচন, তাই প্রতিপক্ষরা আমার তার ওপর এরকম মিথ্যা দায় চাপাচ্ছে।

স্থানীয় সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল ওহাব বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলাদলির কারণে এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ থানায় দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তার ওয়ার্ডেও নগদ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মাখন বিশ্বাস জানান, তারা যে টাকা পায়নি, এটা সত্য। এই টাকা কিভাবে তুলে নেয়া হয়েছে তা বিষদ তদন্তের বিষয় বলে জানান তিনি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহে শত শত মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কারা হতদরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তার রহস্য এখনো সমাজসেবা অধিদপ্তর জানাতে পারেনি। টাকার শোকে হতদরিদ্ররা আহাজারি করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

ঝিনাইদহ শহরের মদনমোহন পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিমল কুমার ঘোষাল অভিযোগ করেন, তার ০১৪০৩-০৫৮৬১১ নাম্বারের নগদ একাউন্ট থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় জিডি করেছেন। এখনো কোন প্রতিকার পাননি।

শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের হাসি রানী অভিযোগ করেন, তিনি নতুন ভাতাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু প্রথম কিস্তির টাকা তিনি পাননি। নগদ একাউন্ট চেক করে দেখেন তার টাকা কে বা কারা তুলে নিয়েছে।

ঝিনাইদহ পৌর এলাকার কালিকাপুর গ্রামের ফারজানা আফরিন এ্যানী জানান, অহসায় প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে আসছেন। তিনি নগদ একাউন্ট খোলার পর তার নগদ ০১৯৬৯১৯০১৪৩ নাম্বারের সাড়ে চার হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা আসে। কিন্তু উক্ত টাকা গত ৯ জুলাই কে বা কারা ০১৯০৬৪৯৩৩৯১ নাম্বারে ট্রান্সফার করে নেয়। এ ঘটনায় তিনি ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি জিডি (যার নং ৯৯২) করেছেন। কিন্তু এখনো টাকা ফিরে পাননি।

ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা জেলা থেকে এ রকম শত শত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু তাদেরকে কোন সহায়তা দিতে পারছে না তারা। কোনো কোনো উপজেলায় ৫% থেকে ১০% টাকা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লার ১৩৬ জন বয়স্ক, ৪ জন বিধবা, ২৩ জন প্রতিবন্ধী ও ৪ জনের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা তাদের নগদ একাউন্ট থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়। এই টাকার পরিমাণ প্রায় ৪৭ লাখ। অনেক ভাতাভোগীর একাউন্ট খোলার আগেই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

জেলা সমাজসেবা অফিসের হিসাবমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে চতুর্থ কিস্তির টাকা শৈলকুপায় ১২ জনের, সদর উপজেলায় ১৭ জনের, কালীগঞ্জে ৭ জনের, হরিণাকুন্ডুতে ১৪ জনের ও ঝিনাইদহ পৌরসভায় ১৫২ জনের উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় কিস্তির টাকা শৈলকুপায় ১৪ জনের, কোটচাঁদপুরে ৫ জনের, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৮ জনের, মহেশপুর উপজেলায় ১৫৯ জনের, কালীগঞ্জে ২৮ জনের ও হরিণাকুন্ডুতে ৪৯ জনের নগদ একাউন্ট থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, নগদ একাউন্ট খোলার পর নগদ কর্মীদের দেয়া গোপন পিন নাম্বার দিয়ে একাউন্টে প্রবেশ করতে পারেনি ভাতাভোগীরা। সমাজসেবা থেকে এমন অভিযোগ অধিদপ্তরে দিলে সব গোপন পিন ‘অটো রিসেট’ করে দেয়া হয়। পরে ভাতাভোগীরা গোপন পিন রিসেট করে দেখেন তাদের একাউন্টের টাকা আগেই তুলে নেয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ঝিনাইদহ থেকে ঠিক কত জনের টাকা নগদ একাউন্ট হ্যাক করে তুলে নেয়া হয়েছে, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে এক হাজার ভাতাভোগীকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে দিয়েছি। সেখান থেকে নগদ কর্তৃপক্ষের কাছে গেছে।

নগদ,নগদ একাউন্ট,মোবাইল ব্যাংকিং,ভাতার টাকা উধাও,প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উধাও,য়স্ক ভাতার টাকা উধাও,বিধবা ভাতার টাকা উধাও
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend