ভারতের বন্দরের ইতিহাসে এ যাবত কালের সর্ববৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ এসে ভিড়েছে মুন্দ্রা বন্দরে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্দরটি আরও একটি রেকর্ড তৈরি করলো। এমএসসি আন্না নামের জাহাজটি গত ২৬ মে, ২০২৪ তারিখে মুন্দ্রা বন্দরে এসে নোঙর করে। এর মাধ্যমে দেশের বন্দর ও সমুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। আদানি বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এপিএসইজেড) ফ্ল্যাগশিপ এবং ভারতের বৃহত্তম বন্দর ও লজিস্টিকস কোম্পানি এই মুন্দ্রা বন্দর।
পুরো ৩৯৯.৯৮ মিটার (মোটামুটি চারটি ফুটবল মাঠের সমান) দৈর্ঘ্য এবং ১৯,২০০ টিইইউ (বিশ-ফুট ইউনিটের সমান) এর অসাধারণ সক্ষমতার একটি আকর্ষণীয় জাহাজ এমএসসি আন্না। এ কারণে এটিকে ভারতীয় বন্দরে নোঙর করা সবচেয়ে বড় সক্ষমতার কন্টেইনার জাহাজ বলা হচ্ছে। এর অ্যারাইভাল ড্রাফট (গভীরতা) হলো ১৬.৩ মিটার, যা শুধুমাত্র আদানির মুন্দ্রা বন্দরেই রাখা সম্ভব। কেননা ভারতের অন্য কোনো বন্দর এত গভীরতাসম্পন্ন জাহাজ রাখতে সক্ষম নয়। জাহাজটি যতদিন বন্দরে অবস্থান করবে, প্রত্যাশিত বিনিময় হবে ১২,৫০০ টিইইউ, যা মুন্দ্রা বন্দরের দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি বড় আকারের কার্গো পরিচালনার সক্ষমতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
গত বছরের জুলাই মাসে, পুরো ৩৯৯ মিটার ও ১৬,৬৫২ টিইউ এর সক্ষমতার এমভি এমএসসি হামবুর্গ আদানির মুন্দ্রা বন্দরে নোঙর করার মাধ্যমে একটি রেকর্ড তৈরি করে। এটি ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম কন্টেইনার জাহাজগুলোর মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ পরিচালনা করার সক্ষমতাসম্পন্ন বন্দর হিসেবে নিজের অবস্থানকে তুলে ধরে মুন্দ্রা।
আদানি’র মুন্দ্রা বন্দরের এ রেকর্ড-ব্রেকিং কৃতিত্ব ২০২৩ সালের শেষার্ধ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অক্টোবরে, এক মাসে ১৬ এমএমটি কার্গো ব্যবস্থাপনা করে ভারতে এমন ধরনের প্রথম বন্দর হয়ে ওঠে মুন্দ্রা। এছাড়াও, এর কন্টেইনার টার্মিনাল সিটি-৩ এক বছরে ৩ মিলিয়ন টিইইউ পরিচালনা করে প্রথমবারের মতো দেশটিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে। টার্মিনালটি নভেম্বর মাসে ৩ লাখ টিইইউ-এর মাসিক হ্যান্ডলিং রেকর্ডও অর্জন করেছে, যা ভারতের যে কোনো টার্মিনালের তুলনায় সর্বোচ্চ।
কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বিশ্বমানের সুবিধার জন্য মুন্দ্রা বন্দর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি একর জায়গা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ভারতের বৃহত্তম এ বাণিজ্যিক বন্দরটি। এতে বড় বড় জাহাজ নোঙরের উপযোগী গভীরতাসহ সব ধরনের আবহাওয়াজনিত সক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এখানে কার্গোর পণ্য সুচারুভাবে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় এবং জাহাজ সরানো বা নোঙর করা এমনকি চলাচলের সময়কেও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। তাই, বেশিরভাগ বৈশ্বিক শিপিং লাইনের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এ বন্দর।
মুন্দ্রায় এমএসসি আন্নার আগমন শুধু বড় ধরনের জাহাজ পরিচালনার জন্য এ বন্দরের সক্ষমতাকে তুলে ধরে না বরং ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেও প্রতিফলিত করে। আদানি বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এপিএসইজেড) নিজস্ব সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রসারিত করার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নেও কাজ করছে। তাই বলা যায়, বন্দরটি বিশ্বব্যাপী শিপিং এবং লজিস্টিক্স এর ক্ষেত্রে ক্রমাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত