ঢাকা | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ |
২৮ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা - এমডি নিয়োগ না দিলে প্রশাসক বসাবে

ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই,হচ্ছে না বোর্ড মিটিং, তবু ঋণ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই,হচ্ছে না বোর্ড মিটিং, তবু ঋণ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই,হচ্ছে না বোর্ড মিটিং, তবু ঋণ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ব্যাংকটি। এবার এমডি নিয়োগে চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে স্থায়ী এমডি নিয়োগ দিতে না পারলে প্রশাসক বসানো হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫-ক ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল জানান, আইন অনুযায়ী তাদের স্থায়ী এমডি নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘদিন এ পদ খালি রাখা যাবে না। এ ধরনের একটি নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনেও এটা বলা আছে। আইন অনুযায়ী তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫-ক ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের এমডি পদ একাধারে তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে এমডি পদ পূরণ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে, যিনি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। আইন অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংকটিতে প্রশাসক দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ঋণ বিতরণে অনিয়ম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) না থাকা, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিচালনা পর্ষদে শুরু হয়েছে বিবাদ। সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থায় ন্যাশনাল ব্যাংক। এর আগে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুল এমডির চলতি দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে সরিয়ে দিতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার তার মেয়াদ বাড়ান, যা কার্যকর হয় ১ এপ্রিল থেকে। কিন্তু বিষয়টি বিধি পরিপন্থি হওয়ায় তাকে চলতি দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে আরেকবার (৬ এপ্রিল) নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঐ নির্দেশের পর এ এস এম বুলবুলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আবদুল বারীকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয় ব্যাংকটির পর্ষদ। ২৮ এপ্রিল ব্যাংকটির স্থায়ী এমডি পদ শূন্য থাকার তিন মাস পূর্ণ হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংক চলছে অনেকটা সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘদিন এর চেয়ারম্যান ছিলেন জয়নুল হক সিকদার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। এরপর কোনো পর্ষদ সভা হয়নি। কিন্তু ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যেখানে বেশকিছু অনিয়মের ইঙ্গিত পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণত বড় ঋণ বোর্ড সভায় অনুমোদিত হতে হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর ব্যাংকটি নিজেদের একক নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছেন পরিচালক রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। তারা দুই জনই জয়নুল হক সিকদারের ছেলে। তবে মেয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) পারভীন হক সিকদারসহ অন্য পরিচালকরা চাচ্ছেন নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে। অনিয়ম করে ঋণ বিতরণসহ নানা কারণে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ব্যাংকটির পরিচালকদের মধ্যে দুটি পক্ষ হওয়ায় পর্ষদে বিবাদ শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুলের নিয়োগ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অনেক পরিচালকের।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এসব ঘটনা নজরে এলে গত ৫ এপ্রিল বেশকিছু তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া রংধনু বিল্ডার্স, দেশ টিভি, রূপায়ণ ও শান্তা এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে দেওয়া সব ঋণের দলিলাদি (ঋণ আবেদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত) এবং ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণীর কপি পাঠাতে বলা হয়। জানা গেছে, বিতরণ করা অনেক ঋণের নথি দেখাতে পারছে না ন্যাশনাল ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটি নতুন করে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ১১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণের ওপর প্রথম প্রান্তিকে সুদ যুক্ত হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। তবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র ৫২১ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির ৪০টি শাখা লোকসানে রয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend
Vention