যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ক্রয় আদেশ দিয়ে গ্রাহকেরা পণ্য পাননি বা টাকা ফেরত পাননি, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০ দিন পর থেকে কঠোর হবে সরকার। আইনানুগ ব্যবস্থা বা মামলা এড়াতে চাইলে এবং সরকারের সহযোগিতা চাইলে তাদের উচিত হবে ৩১ মার্চের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
আজ সোমবার সচিবালয়ে দুই ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান শ্রেষ্ঠ ডটকম ও আলিফ ওয়ার্ল্ডের পেমেন্ট গেটওয়েতে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ ডটকমের ১১ জন গ্রাহককে ১৭ লাখ টাকা ও আলিফ ওয়ার্ল্ডের ২১ জন গ্রাহককে ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। গ্রাহক ও ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের বাইরে তৃতীয় পক্ষ, অর্থাৎ অর্থ পরিশোধ সেবাদানকারী (পেমেন্ট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব টাকা আটকে ছিল।
সফিকুজ্জামান বলেন, আগেই বলা হয়েছিল, যেসব ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান আবার ব্যবসায় ফিরতে চায়, তাদের সহযোগিতা করবে সরকার। তবে যেসব গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে, সেগুলো আগে পরিশোধ করতে হবে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের টাকা আংশিক ফেরত দেওয়া হয়েছে, যেমন আটটি প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আজ আরও দুটি প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার মধ্যে এল, বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।
৩৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ আছে উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিলাম। তাঁদের অনেকে মামলার মধ্যে আছেন, অনেকে আছেন লুকিয়ে। আমরা আগেই আহ্বান করেছি, ৩১ মার্চের মধ্যে আপনারা আসুন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল ও ই-ক্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাদের সাহায্য করতে চাই।’
সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতেই হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যবসা করতে ফিরে আসে, সব সহযোগিতা আমরা করব। ১০ দিনের মধ্যে যোগাযোগ না করলে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে তালিকা দেব।’
আগামী মাসে কারিগরি কমিটির বৈঠক করে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আটকে থাকা টাকা যেন সাত দিনের মধ্যে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোকে নির্দেশনা দেব।’
বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কার্যক্রমের গতি কম বলে অভিযোগ আছে। কী কারণে পেমেন্ট গেটওয়ের কাজের গতি কম, এ বিষয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, তাদের গতি কম হওয়ার কথা নয়। কী হচ্ছে তা দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হবে। আমার পে, সূর্য পে ও বড় আরও একটি প্রতিষ্ঠান, তাদের বিষয়ে দেখা দরকার। এ গেটওয়েগুলো যদি হাওয়া হয়ে যায়, তাহলে তো আর কিছু থাকবে না।
গেটওয়েগুলোতে কত টাকা আটকে আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রয় আদেশ দেওয়ার পর বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।