রাজধানীতে বসে অনলাইনে ফরমাশ করা হয়েছিল। উপহার রাজশাহী থেকে পৌঁছে গেল চট্টগ্রামে। হালকা এক সেট গয়না পৌঁছে গেল প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ। করোনাকালের বাস্তবতার অনুগল্পের উদাহরণ হতে পারে এটা। দেশের বাইরে থেকে অনলাইন মাধ্যমে দেশি পণ্য কেনার ঘটনাও আছে। অনলাইনে কেনাকাটার ধারণাটি নতুন নয়। তবে করোনাকালে অনলাইন কেনাকাটার পরিসর বেড়েছে, গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে বৈকি। পোশাক, গয়না, খাবার, বই, এমনকি মাছ-মাংস পর্যন্ত পাওয়া যায় অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে।
অনলাইনে কিনব, পণ্যটি ভালো তো? বিশেষ করে পোশাকের ক্ষেত্রে। কাপড় হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে, ভালোভাবে দেখে তবেই না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই অনিশ্চয়তাময় প্রশ্ন জাগতে পারে অনেকের মনেই। যাঁরা অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত, তেমন একজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপ হলো মুঠোফোনে। অনলাইন কেনাকাটা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট তিনি। ৪–৫ বছর থেকে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন, তবে মহামারিকালে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন অনলাইন মাধ্যমে।
বলছিলাম নুসরাত জাহানের কথা। পেশায় চিকিৎসক এই নারী জানাচ্ছিলেন অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতার কথা। পরিস্থিতির বিচারে অনলাইন কেনাকাটাই শ্রেয় মনে করেন তিনি। তা ছাড়া সহকারী সার্জন হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা পর্যায়ে, প্রায় দেড় বছর ধরে। রাজধানীর মতো করে কেনাকাটার সুযোগ এমনিতেও সেখানে কম। তাই অনলাইন সেবার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সেই পৌঁছে যায় তাঁর প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সম্প্রতি কিনেছেন জুতাও। ডিজিটাল দোকানে কেনার আগে শাড়িটা পুরোপুরিভাবে দেখার সুযোগ মেলে না ঠিকই, তবে বিক্রেতা সহযোগিতা করলে ছবিতে অনেকটাই দেখে নেওয়া সম্ভব। তারপরও পোশাকটি হাতে পাওয়ার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বদলে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অল্প কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হলেও সেগুলোকেই অনলাইন কেনাকাটার অন্তরায় বলে মোটেও ভাবেন না তিনি।
দোকানে যাওয়া, বিক্রেতা ও অন্যান্য ক্রেতার সংস্পর্শে আসা, আসা-যাওয়ার সময়ও অন্যান্য অচেনা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা—সব মিলিয়ে করোনাকালে সরাসরি দোকান বা শোরুম থেকে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইন কেনাকাটাই নিরাপদ। স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য আরও যা মাথায় রাখতে পারেন—
l পণ্য গ্রহণ করার সময় ডেলিভারি করতে আসা ব্যক্তির খুব কাছে যাবেন না। অন্তত ৩ ফুট দূরে পণ্যটি রেখে দিতে বলতে পারেন তাঁকে। দুজনের জন্যই মাস্ক পরা আবশ্যক। মূল্য পরিশোধের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমই ভালো।
l নেওয়ার পর মোড়কটি ফেলে দিয়ে পণ্যটি জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে এরপর ব্যবহার করা উচিত।
ফ্যাশন হাউসগুলো অনলাইন সেবার ব্যবস্থা রাখছে এখন, পেজও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লা রিভের বিপণনপ্রধান আফরিনা হাবিব জানালেন, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন সেবা দিচ্ছে তাঁদের প্রতিষ্ঠান। গেল বছর সেই ব্যবস্থাটির বদৌলতে বেশ ভালোভাবেই সময়টা সামলে উঠেছিলেন তাঁরা। এবার আগে থেকেই আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তাঁরা, গ্রাহকের চাহিদা পূরণে আগের চেয়েও বেশি সচেষ্ট।
অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ জানালেন, তাঁদের অনলাইন সেবাও চলছে সাত বছরের বেশি সময় ধরে, তবে তা স্বল্প পরিসরে। মহামারি পরিস্থিতিতে অনলাইন সেবার গুরুত্ব বাড়ছে, তাঁরাও বাড়িয়েছেন অনলাইন সেবার পরিধি।
অনলাইনে কিনলে পোশাকটা ঠিকঠাক মাপে পাওয়া যাবে কি না, ব্র্যান্ডের সঠিক ওয়েবসাইট থেকে কেনা হচ্ছে কি না, এমন ভাবনা ভাবেন কেউ কেউ। তবে একবার কিনে অভিজ্ঞতা ভালো হলে আস্থা তৈরি হয় ক্রেতার মধ্যে।