২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। শুরুর পর থেকেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে দেওয়া হয় একের পর এক আকর্ষণীয় অফার। ইভ্যালির এমন অবিশ্বাস্য অফার নিয়ে শুরুতে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনা থাকলেও গ্রাহকরা সেই অবিশ্বাস্য অফারে ঝুঁকে পড়ে। তড়িৎ গতিতে বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ীক কার্যক্রম।
বাইক, ফ্রিজ, ফার্নিচারসহ যাবতীয় সব পণ্যে মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি চলে ইভ্যালিতে। গ্রাহকরাও এমন মূল্য ছাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। শুরুতে রমরমা ব্যবসা করে ইভ্যালি।
আগে টাকা পরে পণ্য ডেলিভারি দিলেও শুরুতে গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন পণ্য ডেলিভারির সময় দীর্ঘ হতে থাকে এরপরই গ্রাহকদের কাছ থেকে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। অভিযোগের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইভ্যালির ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানে নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক মাস আগে ইভ্যালির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিলে কোম্পানির গোজামিলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপরই মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যেও ইভ্যালি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে জুলাইয়ের শুরুতে সরকার লকডাউন দিলে ইভ্যালির অফিস বন্ধ রাখা হয়। এরপরই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সমস্যা একের পর এক প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
লোক ঠকানোর অভিযোগ আর বিপুল দেনায় ডুবতে বসা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি এখন পেছনের সারির কর্মীদের বেতন বকেয়া রেখেই ‘বিদায় করতে’ শুরু করেছে। অর্থ সঙ্কটের কথা বলে তাদের ‘ভালো চাকরি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ’ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের কয়েকজন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ভোক্তাদের অব্যাহতভাবে ‘মিথ্যা আশ্বাস দিতে বাধ্য করা’, নিয়োগপত্র না দেওয়া এবং ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে বক্তব্য জানতে তাকে কয়েকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। ইভ্যালির একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
আলোচিত ওই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চেয়ারাম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, তাদের দেশত্যাগে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহক ইভ্যালির কাছে পণ্য কেনার জন্য বুকিং দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং বাবদ গ্রাহকরা ইভ্যালির কাছে ৩১১ কোটি টাকা পাবেন।
ক্ষুব্ধ এসব গ্রাহকদের দিনের পর দিন আশ্বাস দিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন, সে কথা বললেন সম্প্রতি ইভ্যালির কল সেন্টারের কাজ ছেড়ে আসা একজন, যিনি আগে গ্রামীণ ফোন, পাঠাওসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করেছেন।
তিনি বলেন, কাস্টমার কেয়ার হল ভোক্তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার জায়গা। কিন্তু ইভ্যালিতে দিনের পর দিন ক্রেতাদের অভিযোগ আর হাহুতাশ শুনতে শুনতে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ‘ট্রমার’ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কেউ ২ থেকে ৩ মাসের বেশি সময় কাজ করতে পারে না। কিন্তু যারা কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ, অর্থাৎ যাদেরকে সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হয় না, তারা ভালো থাকেন। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে কর্মীদের দিয়ে জোর করে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়ানো।
নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি জানান, প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা কল ধরে গেছি। দিনে দেড়শ কল ধরলে ১৪০টা কলেই গ্রাহকের কান্নাকাটি শুনতে হয়েছে। আমরা তাদেরকে উত্তর দিয়ে গেছি- আপনার পণ্যটি নিয়ে কাজ হচ্ছে, অচিরেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু আসলে কিছু হচ্ছে কিনা, তাও আমাদের জানা থাকত না।
চলতি বছরের জুলাই থেকে যখন করোনা বাড়তে থাকে তখন সরকার লকডাউন দিলে ইভ্যালির অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল। কর্মীদের অনেকে তখন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ বাসায় নিয়ে হোম অফিস করছিলেন। অফিস চালু হওয়ার কথা বলে গত সপ্তাহে তাদের কাছ থেকে মালামাল বুঝে নিয়েছে ইভ্যালি। এখন তাদের অন্যত্র চাকরি খুঁজতে বলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাকিব নামের একজন বলেন, ১৮০ জনের মতো কর্মী ছিল ইভ্যালির কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে। তাদের চাকরিতে আর না যেতে বলা হয়েছে। ইভ্যালি থেকে বলা হয়েছে আপানারা রিজাইন দিয়ে দেন। জব সুইচ করার চেষ্টা করেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এটা বিশ্বাসযোগ্য না। সূত্র: বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর