মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যালান্স না থাকলেও এখন থেকে গ্রাহক ফেসবুক ও মেসেঞ্জার অ্যাপ শুধু টেক্সটের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া ফেসবুকের ডিসকভারি ব্রাউজারে ফ্রি ইন্টারনেট ব্রাউজিং সুবিধা চালু করা হয়েছে । উক্ত ব্রাউজারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা পাঠ্যভিত্তিক তথ্য যেমন-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত নির্দেশনা, অন্যান্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যসহ ফ্রি ডাটা সীমার মধ্যে বিভিন্ন ই-পরিষেবায় সংযুক্ত থাকতে পারবেন। অন্যদিকে, সকল অপারেটরের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে মোবাইল ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা, যা পহেলা মার্চ ২০২২ থেকে সব অপারেটর মেনে চলবে । উক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী যে কোনো অপারেটর এককালীন সর্বোচ্চ ৮৫ টি প্যাকেজ চালু রাখতে পারবে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে উল্লিখিত সেবাসমূহের শুভ উদ্ধোধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান । শুরুতে ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা ও ফ্রি ফেসবুক-মেসেঞ্জার ব্যবহার বিষয়ে বিশদ উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি: জে: মো: নাসিম পারভেজ ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় যে, দেশের সকল মোবাইল অপারেটরের তিন ধরনের প্যাকেজ থাকবে তার মধ্যে (১) নিয়মিত (Regular) প্যাকেজ (২) গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ (CCSP) প্যাকেজ (৩) রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) প্যাকেজ । একটি অপারেটরের নিয়মিত এবং গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ মিলিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ৮৫টি। তবে নিয়মিত অথবা গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ সংখ্যা এককভাবে ৫০ টির অধিক হতে পারবে না। মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহ রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ টি প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারবে। প্যাকেজের ভিন্নতা নির্ধারণে দুটি প্যাকেজের মধ্যে ন্যূনতম পার্থক্য হবে ১০০ এমবি ডাটা অথবা ১০ মিনিট টকটাইম অথবা উভয়ই। সকল প্যাকেজের মেয়াদ ০৩/০৭/১৫/৩০ দিন হিসেবে করতে হবে।
যে কোন নিয়মিত প্যাকেজ চালু করার পর বাজারে উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে ০১ (এক) মাস। যে কোন গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ চালু করার পর উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে ০৭ (সাত) দিন। এক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগণ উক্ত গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ বাতিল করার ১৫ (পনের) দিন পর বাতিলকৃত প্যাকেজ এর স্থলে নতুন গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ চালু করতে পারবেন। মোবাইল অপারেটর হতে যে কোন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ চালু করার পর উক্ত প্যাকেজের ন্যূনতম স্থায়িত্বকাল হবে ০৭ (সাত) দিন। তবে মাসে দুইবার অর্থাৎ ১৫ দিন পর পর এই ধরনের প্যাকেজগুলো চালু করার সুযোগ থাকবে।
এছাড়া, একজন গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের মেয়াদান্তে অব্যবহৃত ডাটা Carry Forward ( অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যোগ হওয়া ) হবে যদি গ্রাহক উক্ত প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবার পুর্বেই একই ডাটা প্যাকেজ (ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদ সহ) ক্রয় করেন। কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত Regular এবং CCSP প্যাকেজ সমূহ গ্রাহকরা মোবাইল অপারেটরের নির্দিস্ট অ্যাপস/ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম/ অপারেটর অনুমোদিত চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রয় করলে অপারেটরগণ প্যাকেজের উপর বোনাস (টেলিকম সার্ভিসঃ ডাটা, টক টাইম, এসএমএস) প্রদান করতে পারবে। তবে বোনাসসহ প্যাকেজের মূল্যমান প্যাকেজ তৈরির খরচ (Cost of the product) থেকে Negative হতে পারবে না।
গ্রাহক সুবিধার্থে মোবাইল অপারেটরকর্তৃক প্রদানকৃত সকল নিয়মিত (Regular) প্যাকেজের তালিকা (প্যাকেজের ID ও মূল্য) সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি গ্রাহককে অপারেটর কর্তৃক মাসিক রিচার্জ এবং ব্যয়ের তথ্য বিবরণী এসএমএস (বাংলায়) ও মোবাইল অপারেটরদের বিলিং পোর্টালে এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকের চাহিদার প্রেক্ষিতে ইমেইল এর মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। অপারেটর চাইলে বিনামূল্যে অথবা Floor Price (যখন উল্লেখ করা হবে) এ ডাটা প্রদান করতে পারবে এবং অপারেটর কর্তৃক একজন গ্রাহককে প্রতিদিন ৩ টির বেশি প্যাকেজ সংক্রান্ত প্রমোশনাল এসএমএস প্রদান করা যাবে না।
মোবাইল কানেক্টিভিটি জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, জনগণের কানেক্টটিভিটি বাড়াতে সারাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে এক দেশ এক রেট চালু করা হয়েছে এবং দুর্গম অঞ্চলে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। মার্চের মধ্যে অপারেটরদেরকে গ্রাহকের কাছে সব ধরণের বার্তা বাংলায় প্রেরণ করতে হবে বলেও জানান তিনি। ফেসবুক বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতামুলক আচরণ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উসকানিমুলক ছবি, ভিডিও ও পোস্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুকের সাথে কাজ করছে বিটিআরসি।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বলেন, ফ্রি ফেসবুক মেসেঞ্জার চালুর ফলে ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষও নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকার সুযোগ পাবে। প্রযুক্তির প্রসারের ফলে বর্তমানে সরকারি অফিসগুলো সহজে এবং দ্রুততম সময়ে মানুষকে সেবা দিতে পারছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী আজমান, রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ রশীদ, বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাইমুর রহমান , টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: সাহাব উদ্দিন , ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কানেক্টিভিটি এন্ড একসেস পলিসির প্রধান টম সি ভার্গেস।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে বিটিআরসি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে জানিয়ে সমাপনী বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার গত ১০ মাসে বিটিআরসির নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন। এ সময় তিনি অপারেটরদের ভ্যাট আদায় এবং টিভাস এর মাধ্যমে গ্রাহকের অর্থ কেটে নেওয়া সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ফোরজি তরঙ্গ নিলাম, সারাদেশে ব্রডব্যান্ডের এক দেশ এক রেট সেবা চালু, মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনে এনইআইআর বাস্তবায়ন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ফেসবুক ও ইউটিউবের নিবন্ধন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ে সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠনসহ নানা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫.২ কোটি এবং সর্বোচ্চ ফেসবুক ব্যবহারকারীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। ইউনিক মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা আনুমানিক ১০ কোটি অর্থাৎ প্রতি দুই জন মোবাইল গ্রাহকের বিপরীতে একজন গ্রাহক ফেসবুক ব্যবহার করে । দেশে মোট মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ২৭ হাজার (২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী)।