গতকাল রাতে চরম বাজার পরিস্থিতির কথা বলে এমটিএফই অ্যাপে থাকা লক্ষ বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টের ডলার গায়েব করে দিয়েছে অ্যাপটি উপরন্ত সব অ্যাকাউন্টে ঋণাত্মক সংখ্যা দেখাচ্ছে অর্থাৎ যার অ্যাকাউন্টে ১২০০ ডলার ছিল এখন তার অ্যাকাউন্টে দেখাচ্ছে -২৭০ ডলার। MTFE নিজেদের একটি ব্রোকার হিসেবে দাবি করে বলছে, ঋণাত্মক অংশ MTFE গ্রুপ ব্রোকারেজ বিভাগ নেতিবাচক অ্যাকাউন্ট সম্পদের সাথে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার পরে বিনিময়ে পরিশোধ করা হবে।
MTFE গ্রুপ ব্রোকারেজ বিভাগ এখন সমস্ত বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করছে, অ্যাকাউন্টের সম্পদের পরিমাণ চেক করুন এবং নিশ্চিত করুন, যদি আপনার অ্যাকাউন্টের সম্পদ ঋণাত্মক হয়, অনুগ্রহ করে২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যালেন্স তৈরি করুন, অন্যথায় আপনি ব্রোকারেজ ট্রেডিং পরিষেবাগুলি উপভোগ করা চালিয়ে যেতে পারবেন না, এবং এমটিএফই গ্রুপের আইন বিভাগ আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করবে এবং ঋণাত্মক অংশ এক্সচেঞ্জে পরিশোধ করবে।
মোঃ রেদোয়ান ইসলাম রওশন নামে একজন ভুক্তভোগী বলছেন ,'এইগুলা সব সাজানো গল্প।একবারে যদি বলে স্ক্যাম হয়েছে তাহলে অনেকের হার্টের প্রবলেম হবে।তাই এদিক ওদিক নিউজ দিয়ে একটু হালকা করে নিয়ে উধাও হবে।এখনো যারা ভাবতেছে যে এইটা আগের মত ফিরে আসবে তারা অন্য গ্রহের লোক।MTFE ভাল করেই জানে যে আমি যদি একবার ডলার উইথড্র করার পারমিশন দেই তাহলে বাঙালিরা আমাকে দেউলিয়া বানাবে।আশানিয়ে বেঁচে থাকায় ভাল এক সময় আস্তে আস্তে ব্যাথা হালকা হয়ে যাবে।'
সঞ্জিব কুমার রয় নামে আরেক ভুক্তভোগী বলছেন,'প্রথম ভাবছিলাম চুরি করবে নাহ,, এখন ওরা ডাকাতি করে ফেলছে। তারা বলতেছে যে পরিমাণ ডলার নেভেটিভ আছে ঐটা তাড়াতাড়ি রিচার্জ করেন, নাইলে এমটিএফি আপনার কাছ থেকে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে ঐ ডলার আদায় করে নিবে।তারা পরিকল্পিত বাটপারি করেছে প্ল্যান মাফিক। যেন আইনি জটিলতায় না পরতে হয় তাই এত নাটক। সবাইকে লস দেখিয়ে সব নিয়ে গেছে।এটাকে scem বলা যায় না কারণ তাদের ওয়েবসাটই & এপস সচল রেখেছে, যেনো ভবিষ্যতেও বাটপারি করতে পারে। সাবধান হোন। সব বাদ দিয়ে নিজের কাজ করুণ। ১০০% বাটপারি হইছে।'
বিদেশি অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ-এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দুবাই থেকে। দুবাইয়ে বসে সারা দেশে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে মাসুদ আল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি কুমিল্লায়। বেশির ভাগ সময়ই তিনি দুবাইয়ে থাকেন। তার হাত ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই প্রতারণা শুরু করেন শিবগঞ্জ উপজেলার তরিকুল ইসলাম। এই তরিকুল ইসলাম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়েছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকা। রাজশাহী ও ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পুরো রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত প্রতারক তরিকুল ইসলামের নেটওয়ার্ক। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষকে কোটিপতি বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এমটিএফই’তে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা সদস্যরা বলছেন, তরিকুল ইসলামের ডাউনে ৪০জন সিইও কাজ করছেন।
সেখান থেকে প্রতিমাসে কমিশন পাচ্ছেন কোটি টাকা। প্রতারণার টাকায় তিনি দেশ-বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন। খুব গোপনে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তরিকুল ইসলামের সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনলাইন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান এমটিএফই’র মাধ্যমে প্রতারণায় জড়িত প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তি। যাদের অনেকেই পূর্বে ডেসটিনিতে কাজ করতেন। ডেসটিনি, যুবক, মধুমতি এনজিও’র ভয়াবহ প্রতারণার পর ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সমপ্রতি বড় ধরনের প্রতারণা করে পিএলসি আলটিমা নামে একটি বিদেশি অ্যাপ্স। তবে আগের প্রতারণার সব প্রতিষ্ঠানকে ছাড়িয়ে একই কৌশলে প্রতারণা করে চলছে এমটিএফই। অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সারা দেশে এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
আবার এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে কেউ কেউ কোটিপতিও বনে যাচ্ছেন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল সম্পদ বা মুদ্রার বিনিময়, স্থানান্তর বা ট্রেড নিষিদ্ধ করেছে। নির্দেশনা অমান্য করে কেউ এ ধরনের লেনদেন করলে, তা হবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ করলে হতে পারে ৭ বছরের জেল বা আর্থিক জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এমটিএফই’তে বিনিয়োগ করেছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এমটিএফই’র অন্তত ২০ জন সিইও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। যারা সিইও হওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০০ জনকে বিনিয়োগ করিয়েছেন। এক এক জন সিইও প্রায় দেড় কোটি টাকা করে বিনিয়োগ দেখাতে পারলে তিনি সিইও হিসেবে কোম্পানিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ফলে অনেক অল্প শিক্ষিত মানুষও এমটিএফই’র সিইও পরিচয় দিচ্ছেন।
এদের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। প্রায় সপ্তাহ থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ উত্তোলন করতে পারছে না গ্রাহকরা। অ্যাপসে নিজ অ্যাকাউন্টে ভার্চ্যুয়াল ডলার দেখেই দিন পার করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি ৪ মাস আগেই এমটিএফই ছেড়ে দিয়েছি। র্যাব’র এক কর্মকর্তা আমাকে এমন প্রতারণার কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন। সেই দিন থেকে আমি কোনো প্রোগ্রাম করিনি। আমি আগেই বুঝতে পেরেছি যে, এটা স্ক্যাম করতে পারে। এজন্য আমি যাদের জয়েন করিয়ে ছিলাম তাদের পরিষ্কারভাবে বিনিয়োগ উঠিয়ে নিতে বলেছি। তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, একজনের ১০০ জন ট্রেডার হলে সিইও হয়। অনেক গণ্ড মূর্খও সিইও পদ পেয়েছেন এমটিএফই’র। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মিনিমাম ১০ জন সিইও আছে। এছাড়া আমার কাছে আর কোনো তথ্য নাই। তবে এমটিএফই’তে এখনও অনেকে কাজ করছে বলে স্বীকার করেন তিনি।