দেশের যুবসম্প্রদায়ের মাঝে বেকারত্বের উচ্চহার বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বেকারত্বের এই সমস্যা তরুণদের অফুরান প্রাণশক্তি ও অমিত সম্ভাবনা বিকাশের পথকেও রুদ্ধ করে। তাই কর্মহীন তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করার অংশ হিসেবে ‘ইউনিলিভার ফ্রন্টলাইনার্স একাডেমি’ (ইউএফএ) চালু করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)। বেকারদের জন্য এটিই ইউনিলিভারের প্রথম কোনো প্ল্যাটফর্ম যেখানে মাধ্যমিক পাস তরুণরাও প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
দেশের বেকার তরুণদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন শিল্পের বাজারে সামনের সারির বিক্রয় ও বিপণনকর্মী হিসেবে চাকরি পেতে তাদেরকে সহায়তা করাই ‘ইউনিলিভার ফ্রন্টলাইনার্স একাডেমি’র লক্ষ্য। এছাড়া সারাবিশ্বে এক কোটি তরুণের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অধিকতর ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরির যে সামাজিক প্রতিশ্রুতি ইউনিলিভারের রয়েছে, সেটির সঙ্গেও এই উদ্যোগ সঙ্গতিপূর্ণ। এই একাডেমির প্রথম ব্যাচের ৩৪ প্রশিক্ষণার্থী তাদের ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন করার পাশাপাশি ইউনিলিভারের ডিস্ট্রিবিউটর লাইনে ইতিমধ্যেই চাকরি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (৮ নভেম্বর, ২০২১) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত ‘ডিভাইন ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড কোম্পানি’-তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উক্ত ৩৪ প্রশিক্ষণার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ। ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং ডিরেক্টর তানজিন ফেরদৌস, সিনিয়র টেরিটরি ম্যানেজার মুশফিক শাহরিয়ার, সিডি অ্যান্ড ডিএফএফ ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মো. আহসানুল কবির পলাশ চৌধুরী সহ অনেকেই এসময় উপস্থিত ছিলেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশেরই বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বিশাল সংখ্যক এই তরুণপ্রাণ দেশটিকে জনসংখ্যাগত দিক থেকেও বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছে। বাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদাও রয়েছে, কিন্তু উপযুক্ত দক্ষতা না থাকায় তরুণরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এই ইস্যুটি বেশ প্রাসঙ্গিক। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য মতে, করোনা মহামারির কারণে সারাবিশ্বে তরুণ বেকারত্বের হার বেড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাই তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের প্রয়াসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলো ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এই কর্মসূচির প্রথম ধাপ শুরু হয় গত ১০ অক্টোবর। দশম শ্রেণি পাস করা ৭০ জন বেকার তরুণ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন। এরপর লিখিত পরীক্ষায় তাদের বিশ্লেষণমূলক বুদ্ধিমত্তা যাচাই এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আবেদনকারীদের যোগাযোগ দক্ষতা ও চাকরির যোগ্যতা বিবেচনাপূর্বক মোট ৩৬ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। এরপর টানা দুই সপ্তাহ তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে তারা সেলস অফিসার হবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছেন। প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো: ব্যবসায়িক বোঝাপড়া, চ্যানেল ব্যবস্থাপনা, ইনসেন্টিভ প্রোগ্রাম, মার্চেন্ডাইজিং ইত্যাদি। অধিকন্তু, প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণ প্রদান, অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগাতে মার্কেট পরিদর্শনের ব্যবস্থা, শিক্ষনবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ প্রদান এবং বাস্তব কাজের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা প্রদানের সমন্বয়ে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এছাড়া ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যেসব জায়গায় কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তরুণ প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সেসব জায়গায় কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সম-মনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউনিলিভার, যাতে ‘ইউনিলিভার ফ্রন্টলাইনার্স একাডেমি’ থেকে সনদপ্রাপ্ত তরুণরা ঐসব প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ পান।
এদিকে, আরো ৪৩জন প্রশিক্ষাণার্থীকে নিয়ে জয়পুরহাট জেলায় একাডেমির দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিন মাস পরপর এই ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে সফলতার পর পাকিস্তান ও আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশে এই কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ইউনিলিভার। পাকিস্তানে গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রোগ্রামটি চালু হয়েছে। আর আফ্রিকাতেও শিগগিরই এটি শুরু করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং ডিরেক্টর তানজিন ফেরদৌস বলেন, “ঢাকায় পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগের সফলতার ধারাবাহিকতায় এখন আমরা পাকিস্তান ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও প্রথম ধাপে একই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।”
কর্মসূচিটিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষামূলক এই কর্মসূচি থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, ইউনিলিভার ফ্রন্টলাইনার্স একাডেমি তার প্রশিক্ষণার্থী, বিশেষত: নারীদের জন্য এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, যেখানে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগেই তারা বাস্তব কাজের প্রাথমিক ধারণা ও চাকরির অভিজ্ঞতা নিতে সক্ষম হচ্ছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের টিমে নারীরা দ্বিগুণ অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করছি।”
ইউনিলিভার তার নতুন এই একাডেমির কার্যক্রম আরো বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গেও কাজ করার কথা ভাবছে, যা প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বব্যাপী এক কোটি তরুণের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অধিকতর ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরির সামাজিক প্রতিশ্রুতি পূরণেও গতি সঞ্চার করবে।