বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জনপ্রিয়তা কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে আইফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে। ২০১৭ সালে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থান দখল করে অ্যান্ড্রয়েড। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান আর সত্য নয়। আইওএসের পরে বাজারে এলেও বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ছিল অ্যান্ড্রয়েড। তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাপলের আইওএস এই স্থান দখল করে এবং প্রথমবারের মতো বাজারের ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার দখল করে এই অপারেটিং সিস্টেম। আর এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রয়েডের বাজার কমার প্রধান কারণ হলো, এই অপারেটিং সিস্টেমে চালিত ডিভাইসে কিশোর–কিশোরীদের অনাগ্রহ।
প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইকোসিস্টেম, বিজ্ঞাপন ও ডিভাইস ব্যবহারে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা— এই তিনটি কারণে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা কমছে।
কিশোর–কিশোরীদের গড় বয়স ১৬ ধরা হলে তাদের বেশির ভাগেরই জন্ম আইফোন বাজারে আসার পরেই ধরে নেওয়া যায়। জন্মের পর থেকেই তারা বাবা–মাকে আইওএস বা স্যামসাং ও এইচটিসির ডিভাইস ব্যবহার করতে দেখে অভ্যস্ত। নতুন ফোন পাওয়ার আগে বাবা–মার পুরোনো ডিভাইস সন্তানেরা ব্যবহার করে। ফলে কম বাজেটের অ্যান্ড্রয়েড ফোন প্রথমে হাতে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া ব্যবহারকারীরা সাধারণত নির্দিষ্ট ইকোসিস্টেমের আওতায় থাকতেই স্বস্তি বোধ করেন। তাই ফোন কেনার সময় আইফোন বেছে নেয় কিশোর–কিশোরীরা।
আইফোনের সিস্টেমে বাগও (ত্রুটি) কম থাকে। তাই অ্যান্ড্রয়েডে অনেক কাস্টমাইজেশনের সুযোগ থাকলেও তা কিশোর–কিশোরীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকতে পারছে না।
বিনিয়োগ কোম্পানি পাইপার স্যান্ডলার প্রায় এক মাস আগে কিশোর–কিশোরীদের নিয়ে এই দ্বিবার্ষিক জরিপ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল ও শ্রেণির ৯ হাজার কিশোর-কিশোরীদের ওপর জরিপ করা হয়। কিশোর–কিশোরী কোন শিল্পে আগ্রহী তা জানার চেষ্টা করা হয় এই জরিপের মাধ্যমে। যেমন–ভিডিও গেমে আগ্রহ বেড়েছে, ফ্যাশনের বিষয়ে কমে গেছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া যায় স্মার্টফোনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৭ শতাংশ কিশোর–কিশোরীর নিজস্ব আইফোন রয়েছে। আর পরেরবার স্মার্টফোন কিনলে কোনটি কিনবে এমন প্রশ্নে ৮৮ শতাংশই আইফোন কেনার কথা বলেছে।
পাইপার স্যান্ডলার জরিপে আরও উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৪ শতাংশ কিশোর–কিশোরীদের কাছে অ্যাপল ওয়াচ রয়েছে। প্রতি তিনজনের একজন এর জন্য দামি অ্যাক্সেসরিজও কিনে থাকে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর–কিশোরীদের কাছে ফোন কলের চেয়ে মেসেজিং জনপ্রিয়। আইফোনের বিক্রি বাড়াতে আইমেসেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২২ সালে ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে আইমেসেজ সম্পর্কে অবাক করা তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইমেসেজ যারা ব্যবহার করে না তাদের সামাজিকভাবে ছোট করে দেখা হয়। এটি কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই একটি ফিচারই আইফোনের জনপ্রিয়তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আইফোন ব্যবহার ৭৪ শতাংশে উঠে যায়। আর ২৪ বছরে বেশি বয়সীদের ৪০ শতাংশ আইফোন ব্যবহার করতেন।
আইফোনের বিজ্ঞাপনও অনেক অভিনব হয়। অ্যাপলের ডিভাইসে নিরাপদ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বলে প্রচার করা হয়, যা কিশোর–কিশোরীদের আকর্ষণ করে। গুগলের ক্রোমবুকের মতো ৩২৯ ডলারের আইপ্যাডকে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ’ হিসেবে প্রচার করতে সমর্থ হয়েছে অ্যাপল। তাই পড়ালেখার মান উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অভিভাবকেরা কম দামি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কিনে দেওয়ার পরিবর্তে সন্তানদের হাতে আইপ্যাড তুলে দেন।
তবে ট্যাবের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড স্লেট হিসেবে আমাজনের ফায়ার ট্যাবলেটগুলো শিশু–কিশোর বান্ধব হিসেবে প্রচার পেয়েছে। এরপরও এটি অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি দূর এগোতে পারছে না। আর ফায়ার ট্যাবলেট কখনোই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বলে বিজ্ঞাপন করা হয় না। যদিও এর অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড–ভিত্তিক।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন কিশোর–কিশোরী ও তরুণেরা পরিবেশ সম্পর্কে অনেক সচেতন। গুগল ও স্যামসাং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রচার–প্রচারণা করলেও এ বিষয়ে কোনো কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়নি। সেদিক থেকে অ্যাপল এ ক্ষেত্রে অনেক বিনিয়োগ করেছে। অ্যাপল ওয়াচ ৯ সিরিজকে কার্বন নিউট্রাল হিসেবে প্রচার করেছে অ্যাপল। এর ফলে ঘড়িটির বিক্রিও বেশি হয়েছে।
বর্তমান যুগের কিশোর–কিশোরীর কাছে যে অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে তা এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিশোর–কিশোরীদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চাহিদা আরও কমবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।