সৌদি আরবের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ বছর পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) রপ্তানিকারকদের সামনে ৩৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হাতছানি দিচ্ছে। সেটা বাস্তোয়িত হলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ নতুন বাণিজ্য মাইলফলকে পৌঁছাবে। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আইটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে রেকর্ড গড়েছে পাকিস্তান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। এই আয় আগের ১২ মাসের গড় ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চেয়েও বেশি ছিল।
এই আয় বৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের সহায়ক নীতির অবদান রেখেছে বলে জানান রপ্তানিকারকেরা। এসব নীতি স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে দেশে অর্থ ফিরিয়ে আনতে উৎসাহিত করেছে। এর আওতায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসামরিক-সামরিক হাইব্রিড ফোরাম ও বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কাউন্সিল গঠিত হয়।
এর পাশাপাশি গত ৪–৭ মার্চ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত লিপ টেক এক্সিবিশনে কয়েক ডজন পাকিস্তানি আইটি সংস্থা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা ও পণ্য উপস্থাপন করে। এর ফলে সৌদি আরব পাকিস্তানে সঙ্গে চুক্তিতে উৎসাহিত হয়, দুই দেশের বৃহত্তর বাণিজ্য সম্পর্ক নিশ্চিত হয়।
পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জোহাইব খান আরব নিউজকে বলেন, ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারের প্রকল্পগুলোর চুক্তি মেলাতেই সম্পন্ন হয়েছে। আর ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য চুক্তির পরিকল্পনা হয়েছে। ২০২৩ সালের লিপ এক্সিবেশন থেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৯০০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়।
জোহাইব খানের দাবি, ওই মেলার সময় বিজনেস টু বিজনেস চুক্তির পাশাপাশি পাকিস্তানি কোম্পানিগুলোর সামনে ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ব্যবসার পথ খুলেছে। তার হিসাবে, গত দুই বছরে সৌদি আরবে ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত আইটি রপ্তানি বেড়েছে। যেসব পাকিস্তানি সম্প্রতি সৌদি আরব, কুয়েত ও দুবাইতে প্রযুক্তি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল তারা সেখানে তাদের কোম্পানি নিবন্ধন করেছে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পাকিস্তানের আইটি রপ্তানি বাৎসরিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ২০০ কোটি ডলার হয়েছে, যা আগের একই সময়ে ১৭০ কোটি ডলার ছিল।
খান বলেন, ‘এ বছর আমরা ৩১৫ কোটি ডলার থেকে ৩৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করব এবং পরের বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলারে নির্ধারণ করা হবে। কারণ ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সুবিধার ফলে বিদেশে থাকা আমাদের কোম্পানিগুলোর অর্থ পাকিস্তানে চলে আসবে।’
করাচিভিত্তিক টপলাইন সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানিকারকদের বিশেষায়িত বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টের রপ্তানি আয় জমা রাখার সীমা শিথিল করার পর এই হিসাবে আইটি খাতের রপ্তানি আয় জমা ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। এর ফলে আইটি সংস্থাগুলো বিদেশে উপার্জিত অর্থ দেশের অ্যাকাউন্টে রাখতে উৎসাহিত হচ্ছে।
খান বলেন, রপ্তানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন ব্যবস্থা আগামী বছরগুলোতে আরও সুফল দেবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক করপোরেট ডেবিট কার্ড চালু করেছে। সেগুলোর ব্যবহারও শুরু হবে। এসব কার্ড রপ্তানিকারকদের বিদেশি অ্যাকাউন্টে রাখা অর্থ আনতে অনুমতি দেবে। কারণ এসব কার্ড ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সমর্থন করে।
এর আগে রপ্তানিকারকেরা পাকিস্তান থেকে বিদেশি কোম্পানি বা ব্যক্তিদের কাছে সরাসরি অর্থ দিতে পারতেন না। ক্রস বর্ডার পেমেন্টের অনুমতি দেওয়ায় রপ্তানি আয় বিদেশে রাখার কোনো কারণ থাকবে না।
পাকিস্তান সরকারও আইটি রপ্তানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, দেশটির আইটি রপ্তানি এ বছর ৩৫০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের কম্পিউটার সফটওয়্যারের বাজার বেড়েছে। এর আকার এখন প্রায় ৩২০ কোটি ডলার। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তির বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরে এ খাতে মোট রপ্তানির আয়ের ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ এসেছে আমেরিকা থেকে।
মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সেন্টার, কারিগরি সেবা, কল সেন্টার ও টেলিকম কোম্পানির জন্য আইটি সেবা নিয়ে তৈরি পাকিস্তানের আইটি খাত। যেখানে আইটি সেবার ৬০ শতাংশই নেয় আন্তর্জাতিক খদ্দেররা। এই খাতের প্রবৃদ্ধির বড় অংশের পেছনে ফ্রিল্যান্সার ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।