২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর গণপরিবহনে জনভোগান্তির শহর ঢাকায় চলতে শুরু করে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা উবার। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ডিজিটাল এই পরিবহন সেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তবে যাত্রীদের সেই স্বস্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তাদের অভিযোগ, উবার অ্যাপসে কল দেওয়ার সময় যে বিল দেখায়, ট্রিপ শেষে তার চেয়ে অনেক বেশি নেয়। এছাড়া অফিস শুরু বা শেষের সময়, কোনো উৎসব থাকলে, রাস্তায় সভা-সম্মেলন থাকলে বা বৃষ্টি হলেও ভাড়া বাড়িয়ে দেয় উবার। অভিযোগ করেও উবার থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। এই সবের অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে সারা পৃথিবীতে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম চলছে, উবারও তাই অনুসরণ করছে।
আফরিদা ইফরাত হিমিকা উবারের সেবা নেন নিয়মিত। তিনি বলেন, ‘একদিন জিগাতলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে আসার জন্য উবার অ্যাপে রিকোয়েস্ট পাঠাই। প্রথমে ডিসকাউন্টসহ ভাড়া দেখায় ৯৫ টাকা। কিন্তু গন্তব্যে এসে দেখি ভাড়া দেখাচ্ছে ৮৫০ টাকা। তবে পরে অতিরিক্ত টাকা অনলাইনে ক্রেডিট (ফেরত) দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান নামের নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘ধানমন্ডি থেকে এয়ারপোর্ট ভাড়া দেখাল ৪৯৫ টাকা। কিন্তু দেওয়ার সময় দিতে হলো ৭১৫ টাকা। রাত ছিল তখন সাড়ে ১২টা। হঠাৎ এভাবে ভাড়া বেড়ে গেলে তো যাত্রীরা বিপদে পড়ে যাবে। উবার অনেক বড় একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি। এদের কাছ থেকে এ ধরনের বিভ্রান্তির কারণে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীরা বিব্রত হচ্ছেন।’
রেহেনা রহমান অভিযোগ করেন, ‘একবার গন্তব্যে পৌঁছানোর পর চালক আমাকে জানালেন ভাড়া এসেছে ৩৩৫ টাকা। আমি ভাড়া দেখতে চাইলে তিনি আমকে বলেন, ম্যাডাম ট্রিপ কেটে দিয়েছি। তাকে টাকা দিয়ে বাসায় এসে দেখি, ডিসকাউন্ট ছিল তাই ভাড়া এসেছিল ১৫৫ টাকা। পরে উবারে অভিযোগ করেও টাকা ফেরত পাইনি।’
রাজিব বিশ্বাস রাজধানীর রামপুরা থেকে গাবতলি যাওয়ার জন্য উবার ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং অ্যাপে রিকোয়েস্ট পাঠান। চালক প্রথমে জানতে চান, কোথায় যাবেন? পরে গন্তব্য শুনে তিনি দূরে আছেন বলে রিকোয়েস্ট ক্যানসেল করে দিতে বলেন। পরে অন্য জনকে রিকোয়েস্ট পাঠান। তিনি গন্তব্য শুনে নানা অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া চান। হাসান আলী জানান, ‘খুব আর্জেন্ট হওয়ায় ২০০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিয়ে রাইড সেবা নিতে বাধ্য হই। এর ওপর আগের চালক না যাওয়ায় অ্যাপ থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলো।’
তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পরিবহন ধর্মঘট, বাসে অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে যানবাহনের সংকট থাকায় বেশি ভাড়ার পাশাপাশি যাত্রীরা চুক্তিতে চলতে বাধ্য হন। পরিবহন সংকটের অজুহাত দেখিয়ে চালকরা যাত্রীদের বাধ্য করেন বেশি ভাড়ায় চুক্তিতে চলাচল করতে।
রায়হান নামের নিয়মিত একজন উবার ব্যবহারকারী বলেন, ‘সকালে অফিস শুরু হওয়ার সময় উবারে একটি গন্তব্যে গেছি ৪৩৩ টকায়। দুপুরের দিকে কাজ শেষ করে, একই সেবায়, একই রুটে আগের গন্তব্যে ফিরেছি ২৬৩ টাকায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘একদিন অ্যাপে কল দিয়ে দেখলাম ভাড়া দেখাচ্ছে ১৫০ টাকা। তবে অন্য একটি কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় তখন যাওয়া হয়নি। ঘণ্টা খানেক পরে আবার রিকোয়েস্ট পাঠালাম একই গন্তব্যের জন্য। তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। দেখলাম ১৫০ টাকার ভাড়া ৩৫০ টাকা দেখাচ্ছে।’
উবার বা এ ধরনের রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বিকল্প কম থাকায় নীরবে মেনে নিচ্ছেন যাত্রীরা। সেবা নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ থাকলেও ঝামেলা এড়াতে অনেক যাত্রী সে পথে যান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক ই-মেইল বার্তায় ঢাকার উবার মুখপাত্র বলেন, ‘উবারে ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে আমরা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণ করি। একটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ট্রিপের আগেই এই ভাড়া গণনা করা হয়। এই গণনার সময় একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে গন্তব্যের আনুমানিক দূরত্ব, ট্রিপের সময়, স্থানীয় ট্র্যাফিকের ধরন, চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনা করা হয়।’
ই-মেইলে উবার মুখপাত্র আরও বলেন, ‘যখন রাইডের চাহিদা বেশি থাকে, তখন আমাদের ডায়নামিক প্রাইসিং মডেল অনুযায়ী ভাড়া বেশি হতে পারে যা রাইডারদের জন্য নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে এবং চালকদের পিক আওয়ারে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করে। উবার সবসময়ই বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় নিয়মের প্রতি অনুগত। সে অনুযায়ী কাজ করে এসেছে।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চে যাত্রা শুরু হয় উবারের। সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ উবার ব্যবহার করে সেবা নিচ্ছেন। উবার-সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে গেলো পাঁচ বছরে ৪৭ লাখের বেশি মানুষ উবারের মাধ্যমে সেবা নিয়েছে। বছরে সেবা নিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত ২ লাখের বেশি চালক উবার প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে।