গত ২৫ মার্চ ২০২২,শুক্রবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরস্থ বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’তে বাংলাদেশের প্রথম নিরাপত্তা নজরদারী সরঞ্জামের উৎপাদন কারখানা উদ্বোধন হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ প্রধান অতিথি হিসেবে এই কারখানার উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং হিকভিশন সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হুগো হুয়াং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এক্সেল টেকনোলজিস্ লি. এবং এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম সাহা।
উদ্বোধনকৃত এই কারখানায় বিশ্বের এক নম্বর নিরাপত্তা নজরদারী সলিউশন ব্র্যান্ড ‘হিকভিশন’-এরঅত্যাধুনিক নিরাপত্তা নজরদারী যন্ত্রপাতি তৈরি হবে। বাংলাদেশে হিকভিশনের প্রথম ও জাতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক্সেল টেকনোলজিস্ লি.-এর সহযোগী কোম্পানী এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লি. বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’র সেবা ভবনে প্রাথমিক পর্যায়েরএই কারখানা স্থাপন করেছে। চীনের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা নজরদারী সমাধান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানহিকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি কো. লি. এতে কারিগরী সহায়তা প্রদান করে।
উদ্বোধনী অুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে বাংলাদেশের প্রথম নিরাপত্তা নজরদারী সরঞ্জামের উৎপাদন কারখানা উদ্বোধন করতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই উৎপাদন কারখানা স্থাপন তার সম্যকউদাহরণ, আর হিকভিশনের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা নজরদারী পণ্য বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে, এটি আমাদের জন্য এক বিশাল অর্জন। এভাবে এখন আমাদের দেশে অনেক ডিভাইস তৈরি হওয়ার ফলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি গতি পাচ্ছে। এ কারণে খুব শীঘ্রই সরকার ‘মেইড ইন বাংলাদেশ নীতিমালা’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। মূলতজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছেন বলেই আজ আমাদেরএতসব অর্জন সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার টেন্ডারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যাতে করে দেশে তৈরি পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয়, উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী করা যায়। অন্যদিকে, সরকারি দপ্তরগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সরকার প্রায় তিন হাজার পাবলিক সার্ভিস দিচ্ছে, যেসবের মধ্যে অধিকাংশেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে বিধায় এই বিভাগ পরপর দু’বছর দেশের সেরা মন্ত্রণালয় নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। তিনি বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ এবং এক্সেল ও হিকভিশনের যৌথ উদ্যোগের উত্তরোত্তর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ তার বক্তব্যের শুরুতে ২৫ মার্চ কালরাত্রি এবং ২৬ মার্চস্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতির পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশের প্রথম এবং সবেচেয়ে বড় হাই-টেক পার্কের নামকরণ করা হয়েছে- ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়েপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের দেশে গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাতকেএকটি ইকোসিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।ইকোসিস্টেমের প্রাথমিক স্তর দেশেরভবিষ্যত নাগরিকদেরকে দক্ষ মানবসম্প হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে তেরো হাজার স্কুলে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আরও পঁচিশ হাজার ল্যাব স্থাপন করে দেশের প্রতিটি স্কুলে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। এসব স্কুলে প্রাথমিক পর্যায় হতেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির উপর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।অন্যদিকেএকটি ক্রসকাটিং খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিকে অন্য সকল খাতে ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফলগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। তিনি বলেন,বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ইকোসিস্টেম এবং ক্রসকাটিং কার্যক্রমেরঅপরিহার্য অংশ। অন্যদিকে, আমরা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত এবং তাদেরকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি। তাই কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বেশ কিছুহাই-টেক পার্কে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যন্ডের ল্যাপটপ সহ অন্যান্য ডিভাইস তৈরি শুরু হয়েছে। তাই এখানে যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। হাই-টেক পার্কগুলোতে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হলে বাংলাদেশ আইসিটি পণ্য উৎপাদনের হাবে পরিণত হবে, ৭৫% যুবক জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হবে এবং মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে আমরা শতবর্ষ পূর্তিতে এক নম্বর উন্নত জাতিতে পরিণত হব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।তিনি এক্সেল এবং হিকভিশন কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’তে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা নজরদারী যন্ত্রপাতি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের অপর বিশেষ অতিথি, হিকভিশন সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হুগো হুয়াং বলেন- আজ হিকশিভনের জন্য একটি অত্যন্ত খুশির দিন। কারণ, চীনের বাইরে ব্রাজিল ও ভারতেরপর তৃতীয় দেশ হিসেবেবাংলাদেশে হিকশিভন ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদন শুরু হলো। এতে কারিগরী সহায়তাদান করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি জানান, হিকভিশন বিশ্বের এক নম্বর নিরাপত্তা নজরদারী যন্ত্রপাতি নির্মাতা হলেও অন্যান্য হাই-টেক পণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সেবা প্রদান করছে, যেমন- রোবটিক্স, আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এসব ক্ষেত্রে হিকভিশন সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক’ সিটি’তে হিকভিশন ব্যান্ডের নজরদারী পণ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য তথ্যপযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এক্সেল টেকনোলজিস্ লি. এবং এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম সাহা বলেন- বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তেবাংলাদেশের প্রথম নিরাপত্তা নজরদারী সরঞ্জামের উৎপাদন কারখানা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের আইসিটি শিল্প এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর অগ্রগিতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি বলেন-এই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ারজন্য আইসিটি ডিভিশন এবং বাংলাদেশ হাই-কেট পার্ক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। প্রসঙ্গততিনি আরও বলেন- প্রাথমিক পর্যায়ের এ শিল্প কারখানাকে বৃহদাকারে রূপদানের জন্য এখানে আমাদেরকে ইজারাদানকৃত দুই একর জমির উন্নয় কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে অধিক পরিমাণে হিকভিশন সিকিউরিটি ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক স্টোরেজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ উৎপাদন শুরু করা যাবে। তাতে নিরাপত্তা নজরদারী যন্ত্রপাতির দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে অচিরেই রপ্তানী করা যাবে। তাছাড়া পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে এখানে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং, টেলিকম, এআই ও রোবটিক্স যন্ত্রপাতি উৎপাদন করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে শিল্পবিনিয়োগকারীবৃন্দ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানশেষে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে বৃহদাকারে নিরাপত্তা নজরদারী যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কিং, টেলিকম, এআই ও রোবটিক্স যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য কারখানা স্থাপনের নিমিত্তে এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লি.-এর নামে ইজারাদানকৃত দুই একর জমির মাটিভরাটসহ উন্নয়ন কাজের সূচনা করা হয়।