দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও নাশকতার পরিকল্পনায় গত দুই বছরে দেশে দুই শতাধিক জ্যামার ও বুস্টার বিক্রির তথ্য পেয়েছে র্যাব। এদের বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও জেনেছে সংস্থাটি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জ্যামার, রিপিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টারসহ দুজনকে আটকের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন র্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। আটক হওয়া মো. আবু নোমান (২৮) ও সোহেল রানা (৩৭) এর কাছ থেকে কাছ থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যামার ৪টি, জ্যামার এন্টিনা ২৪টি, এসি অ্যাডাপ্টর ৪টি, পাওয়ার ক্যাবল ৩টি, মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার ৩টি, বুস্টারের আউটডোর এন্টিনা ৯টি, বুস্টারের ইনডোর এন্টিনা ২৬টি, বুস্টারের ক্যাবল ৩৭টি ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার (১৫ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে র্যাব।
কাদের কাছে এসব অবৈধ ডিভাইস বিক্রি করা হয়েছে প্রশ্নের উত্তরে র্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুই বছরে দুই শতাধিক জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয় করা হয়েছে। আমরা বিস্তারিত তালিকা পাইনি। তবে বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম আমরা জেনেছি। খুব শিগগিরই তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা আইপি ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টারসহ এর যন্ত্রাংশ লাইসেন্স ব্যতীত অবৈধভাবে বিক্রি করত। এদের মধ্যে নোমানের আইটিস্টল.কম.বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। অপরজন সোহেল রানার সোআইএম বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। এছাড়াও সোহেল রানার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও খুলনা জেলায় দুইটি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যামার, জ্যামার এন্টিনা, মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার, বুস্টার এর আউটডোর এন্টিনা, বুস্টার এর ইনডোর এন্টিনা এবং বুস্টার এর ক্যাবলসহ এর যন্ত্রাংশসমূহ মজুদ, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২১ (সংশোধনী ২০১০) এর লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, অবৈধ জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয়কারী চক্রের কতিপয় সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিনা অনুমতিতে এসব পণ্য বিক্রয় করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৩ এর একটি দল ও বিটিআরসির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শনিবার (১৪ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১টায় মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার অবৈধভাবে বিক্রয়কারী ওই দুজনকে আটক করা হয়।
র্যাব-৩ সিও বলেন, জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার টু-জি, থ্রি-জি ও ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। তাদের ক্রেতা বিভিন্ন বহুতল ভবনের বাসিন্দা ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ। অপরাধীরাও অপরাধ করার উদ্দেশে উচ্চ মূল্যে এসব অবৈধ পণ্য ক্রয় করে থাকে। বিক্রয় ও আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য কীভাবে দেশে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈধ আমদানিকারকদের মাধ্যমে অধিক পরিবহন মূল্য পরিশোধ করে বৈধ মালামালের আড়ালে তারা এসব অবৈধ যন্ত্রাংশ আমদানি করছে। এরপর চাহিদা মোতাবেক অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে আসছিল।
তিনি আরো জানান, বিটিআরসির অনুমোদন ব্যতীত এসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো অপরাধী নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করে অপরাধ সংগঠিত করলে ভিকটিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না। এভাবে অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করে নির্বিঘ্নে অপরাধ সংগঠিত করে পলায়ন করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও কোনো স্থানে জ্যামার থাকলে আশপাশের বহু গ্রাহক নেটওয়ার্ক সংযোগ পায় না। অবৈধ বুস্টার বা রিপিটারও একই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে।