দেশের ৪৯ টি উদ্ভাবনকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে গত শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে জিপিএইচ ইস্পাতের সৌজন্যে আয়োজিত বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডের ৫ম আসর। এসপায়ার টু ইনোভেট – এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিলো বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভ। ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে একটি জমকালো গালা আয়োজনের মাধ্যমে ২৬ টি বিজয়ী এবং ২৩ টি অনারেবল মেনশন সম্মাননায় এই বছরের সেরা উদ্ভাবন গুলোর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। এর পূর্বে সকালে বাংলাদেশ বিজনেস ইনোভেশন সামিট এর ৪র্থ আসরটি অনুষ্ঠিত হয়।
একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে আয়োজিত ৩য় বাংলাদেশ ইনোভেশন ফেস্টের মূল আয়োজন ছিলো এই সামিট এবং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি।
এই বছর পুরস্কার বিতরণী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি।
মাননীয় প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, “এই বছর ফেস্টটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ এর রূপকল্প অনুসরণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত যে, আজকের এই আয়োজনে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে উদ্ভাবনের শীর্ষস্থানীয় কিছু বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ একাধিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমি নিশ্চিত যে এই আলোচনা এবং মত বিনিময় গুলো আমাদের সামগ্রিকভাবে উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
প্রায় ৫ শতাধিক পেশাদার ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমাগমে ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডের এইবারের আয়োজনটি ছিলো পরিপূর্ণ।
এবারের সংস্করণে পুরস্কারের জন্য প্রায় ১০০ টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০০ এর অধিক নমিনেশন জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯টি জুরি সেশনের মাধ্যমে ২১ টি ক্যাটেগরিতে ৪৯ টি ইনোভেশনকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। জুরি প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করেন দেশের সম্মানিত একাধিক ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের প্রয়োজনীয় প্রতিটি সেক্টরে পরিচালিত এবং উদ্ভাবিত ইনোভেশন গুলোকে জনসমুক্ষে তুলে ধরার মাধ্যমে স্বীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে স্বীকৃতি প্রদানের একটি উপলক্ষ বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড আয়োজনটি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা শরিফুল ইসলাম বলেন, "আমাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই ইনোভেশন বা উদ্ভাবন দ্বারা ব্যপকভাবে প্রভাবিত। আজকের এই সম্মাননাটি সেই বাস্তবতাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি সেক্টরে একটি উদ্ভাবনী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে যেখানে
আমরা উদ্ভাবনকে লালন করতে পারি। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে এই প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।”
সামিটের স্বাগত বক্তৃতায় জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, “আমরা জিপিএইচ ইস্পাতে কর্মরত সকলে বিশ্বাস করি উদ্ভাবন হচ্ছে দেশ এবং দেশের বিভিন্ন শিল্পের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অবলম্বন। উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের এ যাবৎ অর্জিত সকল প্রবৃদ্ধি এবং ব্যবহৃত সকল কার্যকর পন্থাকে নিয়ে আমাদের পুনরায় ভাবতে হবে। আজকে উপস্থিত আমাদের সকলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক দায়িত্ব হচ্ছে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে একটি কার্যকর উদ্ভাবনী অবকাঠামো গড়ে তোলা।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে উদ্ভাবন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের একটি রুপরেখা নির্মানে এই বছরের সামিটটি অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের সামিটের মূল আয়োজনে ছিলো ৩টি কিনোট সেশন, ৪টি প্যানেল ডিসকাশন, ৩টি ইনসাইট সেশন এবং ১টি কেস স্টাডি।
এবারের সামিটে কিনোট বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেনঃ প্রফেসর কুন-পিয়ো লি, ডিন, স্কুল অব ডিজাইন; সোয়াইর চেয়ার প্রফেসর, ডিজাইন; অ্যালেক্স ওং সিউ ওয়াহ গিগি ওং ফুক চি প্রফেসর, প্রোডাক্ট ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্য হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি; প্রফেসর ইশতিয়াক পাশা মাহমুদ, হেড অব ডিপার্ট্মেন্ট, স্ট্র্যাটেজি এন্ড পলিসি, এনইউএস বিজনেস স্কুল, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর; ডঃ ইউসরে বদির, এসোসিয়েট প্রফেসর, ফ্যাকাল্টি ডিরেক্টর, পিএইচডি এন্ড ডিবিএ প্রোগ্রামস, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
এছাড়াও সামিটের বিভিন্ন আলোচনায় বক্তা হিসেবে ছিলেন, আনির চৌধুরী, পলিসি অ্যাডভাইজার, এসপায়ার টু ইনোভেট – এটুআই; ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এসপায়ার টু ইনোভেট – এটুআই; ড. রুবাইয়াত ইসলাম সাদাত, বিজনেস মেন্টর, এক্সপ্রেনিউরস ইনকিউবেটর; ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মুলিটিক ল্যাবস, জিএমবিএইচ; ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মুলিটিক এনার্জি সলিউশন লিমিটেড, বাংলাদেশ; ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন, চিফ ইনোভেশন অফিসার, মিনিস্ট্রি অব ফরেন আফেয়ার্স, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; আসিফ ইকবাল, গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, হামিদ গ্রুপ সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও সামিটটির উল্লেখযোগ্য আকর্ষন ছিলো দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আলোচনা্য অনুষ্ঠিত “এমপাওয়ারিং ইয়ুথ থ্রু ইনোভেশন” শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনটি।
বাংলাদেশ ইনোভেশন ফেস্ট ২০২৩ হচ্ছে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের একটি উদ্যোগ। ইভেন্টটি আয়োজন এবং পরিচালনায় যুক্ত ছিলো বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। সাপোর্টেড বাই - গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড; ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি; স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার - জেনারেশন আনলিমিটেড; হসপিটালিটি পার্টনার - লা মেরিডিয়ান, ঢাকা; টেকনোলজি পার্টনার - আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড; পিআর পার্টনার - ব্যাকপেজ পিআর।