বর্তমান ভারত ডিজিটাল বিপ্লবের পরের অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে। অ-ডিজিটাল ক্ষেত্রগুলিতেও ডিজিটাল ভারতের প্রভাব এখন অনস্বীকার্য। ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান’ হল এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গত ২২ মার্চ বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর আঞ্চলিক কার্যালয় তথা উদ্ভাবন কেন্দ্রটির সূচনাকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে তিনি ‘ভারত ৬জি’র খসড়াটিও একই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন। এছাড়াও, ৬জি-র গবেষণা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার একটি মঞ্চ এবং ‘কল বিফোর ইউ ডিগ’ অ্যাপটিরও সূচনা করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিনিউকেশন ইউনিয়ন অর্থাৎ, আইটিইউ হল জাতিসংঘের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত একটি বিশেষ সংস্থা। এ দেশে সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২২-এর মার্চ মাসে। এই কার্যালয়টি থেকে পরিষেবা দেওয়া হবে ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান এবং ইরানকে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সহযোগিতার এক নিবিড় বাতাবরণ গড়ে তোলা যাবে।
আইটিইউ-এর মহাসচিব মিসেস ডোরিন-বোগদান মার্টিন , ভারত এবং আইটিইউ-এর মধ্যে সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। এই অঞ্চলে আইটিইউ-এর উপস্থিতির ফলে উন্নত প্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রসার এবং শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টা জোরদার হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও, ডিজিটাল পরিষেবা, দক্ষতা বিকাশ, সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও তা বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। মিসেস মার্টিন বলেন, বিশ্বের যেক’টি দেশ অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী, ভারত তাদের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে থাকবে। এই রূপান্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নকে নতুন পথে চালিত করা সম্ভব হবে। বিশ্বের স্টার্ট-আপ উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেক’টি দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ভারত তার অন্যতম বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারতের দূরসঞ্চার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। ৬জি-র পরীক্ষানিরীক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত মঞ্চ এবং এই প্রযুক্তি সম্পর্কিত খসড়াটি ডিজিটাল ভারতকে নতুন করে উৎসাহ যোগাবে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও সমাধান প্রচেষ্টাতেও তা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ভারতের উদ্ভাবন প্রচেষ্টা, শিল্পোদ্যোগ এবং স্টার্ট-আপ স্থাপনের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সুযোগের প্রসার ঘটবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের এক নতুন বাতাবরণ গড়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মোদী বলেন, জি-২০-র সভাপতিত্বকালে যে দায়িত্বভার ভারতের ওপর অর্পিত হয়েছে তা পালন করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য আঞ্চলিক বিভেদকে কোনভাবেই প্রাধান্য দেওয়া হবে না। সাম্প্রতিক গ্লোবাল সাউথ শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে গ্লোবাল সাউথের লক্ষ্যই হল প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিভেদের সীমারেখা দ্রুত মুছে দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,২০১৪ সালের আগে এ দেশে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল যেখানে ৬ কোটি, এখন সেখানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটিতে। অন্যদিকে, ২০১৪-র আগে দেশে ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি। তুলনায় বর্তমানে এর সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮৫ কোটিতে।
তিনি বলেন, গত ৯ বছরে সরকারি এবং বেসরকারি প্রচেষ্টায় ভারতে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে ২৫ লক্ষ কিলোমিটার পরিধি জুড়ে। ২ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে যুক্ত করা হয়েছে এর মাধ্যমে। অন্যদিকে, ৫ লক্ষ সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে। ফলে, এখানে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে সাধারণ প্রযুক্তির তুলনায় আড়াইগুণ বেশি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে দ্রুত ৫জি ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাও আশানুরূপভাবেই সফল হয়েছে। মাত্র ১২০ দিনের মধ্যে দেশের ১২৫টি শহরে ৫জি পরিষেবার প্রসার ঘটেছে। এই পরিষেবার আওতায় বর্তমানে রয়েছে দেশের প্রায় ৩৫০টি জেলা।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান দশককে ‘ভারতের প্রযুক্তিগত দশক’ বলে বর্ণনা করে বলেন যে এ দেশের প্রযুক্তি ও দূরসঞ্চার যথেষ্ট স্বচ্ছ ও সুরক্ষিত। সুতরাং, দক্ষিণ এশিয়ার মিত্র দেশগুলি সর্বোচ্চ মাত্রায় এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।