ফারিয়া মাহজাবিন সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার এর একজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তিনি সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার থেকে সফল ভাবে ব্যসিক কম্পিউটার এর প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেছেন পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফ্রিল্যন্সিং এর প্রশিক্ষন গ্রহন করছেন।
মাত্র দশম শ্রেনীতে পড়–য়া ফারিয়ার স্বপ্ন তিনি একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবেন। তবে মাত্র তিন মাস আগেও ফারিয়ার স্বপ্নটা এমন পরিস্কার ছিলনা। খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারানো ফারিয়ার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় আর্থিক অনটনে। খুব অল্প বয়সে ফারিয়াকে যোগদিতে হয় চাকুরিতে। চাকুরি চলাকালিন সময়ও ফারিয়া স্বপ্ন দেখতো লেখাপড়া করার, বিশেষ করে কম্পিউটার প্রশিক্ষন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে প্রশিক্ষন নিতে চাইতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোজ নিতেন, কিন্তু আর্থিক সমস্যা থাকায় মানসম্পন্ন প্রশিক্ষন নেওয়ার সুযোগ পাননি। গত তিন মাস আগেই সম্ভাবনা আইসিটির প্রকল্পের খোঁজ পান এবং সম্ভাবনা আইসিটি প্রকল্প থেকে বেসিক কম্পিউটার এর প্রশিক্ষন সফল ভাবে শেষ করে যোগদেন গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফ্রিল্যন্সিং কোর্সে। নাম মাত্রমূল্যে অভিজ্ঞ মেন্টর দ্বারা প্রশিক্ষন গ্রহন করায় মাত্র দুই মাসেই বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ফারিয়া।
ফারিয়ার মতো একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সুমাইয়া। কালশি গুদারাঘাট বস্তির একচিলতে টিনের ঘরে যেখানে আলোর দেখা পাওয়া ভার সেখানে প্রযুক্তির আলো জীবন আলোকিত করার স্বপ্ন তো নিছকেই স্বপ্ন মাত্র। নিছক এই স্বপ্নকে সুমাইয়া সত্যি করেছেন সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার এর মাধ্যমে। সুমাইয়ার -ফারিয়ার মতো প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী বিগত এক বছরে প্রশিক্ষন নিয়েছে সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার থেকে।
হাজার বাঁধা বিপত্তি সত্যেও যারা স্বপ্ন দেখে প্রযুক্তির আলোয় নিজেদের আলোকিত করবার, দেশকে সমৃদ্ধ করবার।
সম্ভাবনা আইসিটি প্রকল্পটি সামাজিক এবং যুব উন্নয়ন মুলক সংস্থা সম্ভাবনার একটি উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সম্পর্কে এর উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুন। বিভিন্ন সমিক্ষা থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। বিগত দুই বছরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন। দেশের স্বল্প ও মধ্য আয়ের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির মাঝে বেকারত্ব হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষ জনবলের অভাবে পিছিয়ে পরছে দেশ। বেকারত্বের এই অভিশাপ থেকে দেশ তথা শিক্ষিত তরুন সমাজকে রক্ষা করতে হলে শিক্ষার পাশাপাশি করিগরি প্রশিক্ষন, যুগোপযোগি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন প্রদান করার ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের প্রকল্পটি দেশের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে অর্থনিতিকে করবে শক্তিশালী ’’
তিনি আরো বলেন, সম্ভাবনা বিশ্বাস করে মানুষের স্থায়ী জীবন মান উন্নয়নে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে মানবিক কারণে নানা ধরনের কাজে সংযুক্ত হলেও, চলমান থাকে সকল স্থায়ী প্রকল্প গুলো। আমরা সম্ভাবনা'কে গড়েছি একটি ইকো সিস্টেম এর মডেল হিসেবে যেখানে একই ছাদের নিচে একজন সুবিধা বঞ্চিত শিশুর পরিবারের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। একদিকে শিশুর জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষা অন্যদিকে মায়ের জন্য রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন। আবার সে পরিবারের বেকার যুবকটির জন্য রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের সুযোগ।পরিবারের জন্য আরও আছে ব্যবসা জন্য সহায়তা। আমরা বিশ্বাস করি সকলে এভাবে চেষ্টা করলে আমাদের দেশকে আক্ষরিক অর্থেই স্বাবলম্বী করা সম্ভব।উল্লেখ্য ‘সম্ভাবনা’র পথ চলা শুরু হয় ২০১১ সালে। সূচনালগ্ন থেকে সংগঠনটি দেশে দারিদ্র ও পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান বিগত ১২ বছরে সাফল্যের সাথে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য ‘পুষ্পকলি স্কুল’, সুবিধা বঞ্চিত নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বি করতে ‘অনিন্দিত নারী’ ও যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘স্বনির্ভর’ প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠির বিনামূল্যে আইটি প্রশিক্ষন প্রদানের লক্ষ্যে সম্ভাবনা সম্প্রতি ‘সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার’ নামে একটি নতুন উদ্দ্যোগ হাতে নিয়েছে। “প্রযুক্তির অধিকার আলোকিত জীবনের অঙ্গিকার” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশের সকল স্তরের মানুষের মাঝে প্রযুক্তি আলো পৌছে দিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত, কর্মহারানো, শিক্ষা বঞ্চিত নারী ও পুরুষদের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টারে ভর্তী হতে যোগাযোগঃ পুষ্পকলি স্কুল,বাসাঃ৪০, রোডঃ৩৩, ব্লকঃই, সেকশনঃ১২, মিরপুর, ঢাকাঃ১২১৬। প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ঠিকানা: সম্ভাবনা আইসিটি সেন্টার, বাসাঃ৩৬ , রোডঃ৩৩, ব্লকঃই, সেকশনঃ১২, মিরপুর, ঢাকাঃ১২১৬।