পরিবারের কাছে তারা ফ্রিল্যান্সার। এলাকার মানুষ চেনে ‘নেট ব্যবসায়ী’ হিসেবে। অথচ একসময় তারা ছিলেন অটোচালক বা দিনমজুর। হঠাৎ তারা বনে যান ফ্রিল্যান্সার, একই সঙ্গে গড়ে তোলেন বাড়ি-গাড়ি।
এসব ফ্রিল্যান্সার মূলত নিষিদ্ধ অনলাইন স্ক্যামার। বিশেষ করে টিনএজার পর্ন, এডাল্ট সাইট এবং ডেটিং সাইট নিয়ে স্ক্যামাররা কাজ করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে এমন নিষিদ্ধ অনলাইন স্ক্যামিংয়ের তথ্য আসে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার টিমের কাছে। এরপর ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত প্রতারক বা স্ক্যামারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সোমবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডি সদর দপ্তরে মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আজাদুর রহমান। এর আগে শুত্রবার (৬ অক্টোবর) সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি টিম টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন হুমায়ন কবির, রুবেল আহমেদ, সেলিম রানা, সানি আহমেদ, রাজু আহমেদ, রাকিব খান ও আল-আমিন হাসান। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি প্রাইভেট কারসহ স্ক্যামিংয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়।
এডিসি আজাদুর রহমান বলেন, সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, আমেরিকার জনপ্রিয় ক্লাসিফায়েড এডাল্ট সাইটের আদলে মধুপুরের স্ক্যামাররা ক্লাসিফায়েড এডাল্ট ডেটিং সাইট তৈরি করে প্রতারণা করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
সিআইডি জানায়, বিশেষ করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা এখন স্ক্যামারদের স্বর্গরাজ্য। সহজ উপায়ে স্ক্যামিংয়ের মাধ্যমে রাতারাতি বিত্তশীল হওয়ার নেশায় মধুপুর উপজেলায় মাদক, জুয়াসহ বিভিন্ন রকম অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্ক্যামিংয়ে জড়িত চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্ক্যামাররা প্রথমে আমেরিকান মডেল, পর্নস্টার বা এস্কর্টদের নগ্ন ছবি, ভিডিও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেন। এরপর নিজেদের সাইটে আইপি হাইড করে সেগুলো পোস্ট দেন। ওই ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে নিজেদের এস্কর্ট হিসেবে দাবি করেন। যাদের এস্কর্ট সার্ভিস দরকার সেই ট্রাফিকরা (গ্রাহক) আগ্রহ প্রকাশ করলে দর-কষাকষি হয়। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম ডলার নিয়ে কেটে পড়ে স্ক্যামাররা। প্রয়োজনে কল ভেরিফেকশেনর জন্য এসব প্রতারক নারীদের ভাড়া করে থাকেন।
সিআইডি জানায়, আমেরিকার জনপ্রিয় ক্লাসিফায়েড সাইট ‘ব্যাক পেজ ডটকম’-এর আদলে মধুপুরের স্ক্যামাররা ক্লাসিফায়েড ডেটিং সাইট তৈরি করে প্রতারণামূলকভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। টু ব্যাক পেইজ ডটকম, ব্যাকলিস্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং স্কিপ দ্য গেইমস ডটকম সাইটগুলোর মালিক মধুপুরের কয়েকজন স্ক্যামার। তারা এখন শতকোটি টাকার মালিক।
এ ঘটনায় ডিএমপির পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে শনিবার একটি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।