মাইক্রোসফটের সর্বশেষ সংস্করণের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১ বাজারে আসার পর বিশেষ করে তুলনামূলক পুরোনো কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কিছুটা নাখোশ।
কারণ এই অপারেটিং সিস্টেম পুরোনো হার্ডওয়্যার সমর্থন করে না। ফলে তাঁদের উইন্ডোজ ১০–ই ভরসা।
২০২৫ সালের অক্টোবরে উইন্ডোজ ১০–এর সমর্থন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট। তার মানে, এরপর থেকে পুরোনো কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা আর নিরাপদ থাকবে না। ফলে মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক পিসি নির্মাতাদের জন্য হার্ডওয়্যার আপগ্রেডের একটি বড় চক্র হতে যাচ্ছে। এতে নতুন বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে সেই সঙ্গে বিপুল ইলেকট্রনিক বর্জ্যের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ক্যানালিসের হিসাবে, উইন্ডোজ ১১–এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে প্রায় ২৪ কোটি পিসি অব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ এর ফলে এই পুরোনো কম্পিউটারগুলোর বেশির ভাগই চলে যাবে ভাগাড়ে।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ বাজারে আসে উইন্ডোজ ১১। নতুন সংস্করণের এই অপারেটিং সিস্টেম বাজারে কিন্তু নতুন পিসি বিক্রিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ এটি সস্তা ও পুরোনো হার্ডওয়্যারের জন্য উপযুক্ত নয়।
এখন ২০২৫ সালের শেষ দিকে উইন্ডোজ ১০ সমর্থনের সমাপ্তি ঘটলে বর্তমান অস্থির পিসি বাজারের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা সিস্টেম আপগ্রেডে বাধ্য হবেন। সেই সঙ্গে উইন্ডোজ ১০ সমর্থন পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যমান অসংখ্য ডিভাইসের ব্যবহারযোগ্যতা হারাতে পারে।
এই পরিবর্তনটি বাজার পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে। ক্যানালিস ২০২৪ সালে পিসি বাজারের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। কারণ গ্রাহকেরা পুরোনো পিসি বাদ দিয়ে উইন্ডোজ ১১ এবং সম্ভাব্য উইন্ডোজ ১২ সমর্থনযোগ্য পিসি কিনবেন।
উইন্ডোজ ১১ অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর জন্য অবশ্যই ৬৪ বিট প্রসেসর লাগে। মাইক্রোসফট ‘সমর্থিত সিপিইউ’ ছাড়া এই সিস্টেম ইনস্টল করা যায় না। এ ছাড়া ন্যূনতম ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজের পাশাপাশি ইউইএফআই ফার্মওয়্যারসহ পুরোনো বায়োসের (BIOS) পরিবর্তে সুরক্ষিত বুট সক্ষমতার মাদারবোর্ড প্রয়োজন হয়।
উন্নত নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলো টিপিএম ২.০। যেখানে উইন্ডোজ ১০ টিপিএম ১.২ সমর্থন করে। এ ছাড়া, উইন্ডোজ ১১–এর জন্য ডব্লিউডিডিএম ২.এক্স ড্রাইভারসহ ডিরেক্টএক্স ১২ সমর্থিত জিপিইউ লাগে। অনেক সিস্টেম এখনো সেকেলে সিপিইউয়ে চলে। এ ছাড়া ইউইএফআই–এর পরিবর্তে BIOS ব্যবহার করছে কোনো সিকিউরবুট সমর্থন ছাড়াই।
ক্যানালিসের হিসাবে, বর্তমানে ২৪ কোটি পিসি উইন্ডোজ ১১–এর প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করে না। ফলে ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর উইন্ডোজ ১০–এর সমর্থন বন্ধ হয়ে গেলে এসব পিসি আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।
এই উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০–এর জন্য বর্ধিত নিরাপত্তা হালনাগাদ সুবিধা ঘোষণা করেছে। তবে টাকার বিনিময়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে। উইন্ডোজ ৭ এবং উইন্ডোজ ৮.১–এর জন্যও একই পদক্ষেপ নিয়েছিল মাইক্রোসফট। তবে হালনাগাদের সম্ভাব্য ব্যয় অনেক ব্যবহাকারীকেই ডিভাইস আপগ্রেডে উৎসাহিত করতে পারে।
ফলে ২০২৫ সালে বিপুল ইলেকট্রনিক বর্জ্যের সংকট তৈরির আশঙ্কা থাকছেই। ক্যানালিস বলছে, ই–বর্জ্য কমানোর জন্য বেশি স্থায়িত্বের, মেরামতযোগ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস ও সফটওয়্যার তৈরির ওপর জোর দেওয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদি সফটওয়্যার সমর্থনের সঙ্গে মিলিত এই পদ্ধতি প্রযুক্তি খাতে আরও টেকসই এবং চক্রাকার অর্থনীতিকে উৎসাহিত করে ডিভাইসগুলোর ব্যবহারযোগ্য আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যেতে পারে।