ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো এর পর্দা নামলো আজ। গত ১ এপ্রিল শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১ এর সমাপনী অনুষ্ঠান গতকাল৩ এপ্রিল, শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), আইডিয়া প্রকল্প, এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে কোভিড কালীন ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে তৃণমূলে গণমানুষের কাছে পৌঁছানোর কারণে এই সরকারের উপর মানুষের নতুন করে আস্থা তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস এর ফলে করোনা মহামারীতেও আমরা সাহসিকতার সাথে উত্তরণ লাভ করতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১ এর মাধ্যমে আমাদের যে অর্জন হয়েছে, তার মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণ করতে হবে। সেজন্য আইনের যে প্রয়োজন রয়েছে তা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, করোনা মহামারীর সমাপ্তি দেখতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এই করোনার পাশাপাশি আবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উষালগ্নে দাঁড়িয়ে আছে পুরো বিশ্ব। এমন একটি সময়ে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১ আয়োজন করে আমরা নিজেদের উদ্দেশ্যই জানান দিতে চেয়েছি। করোনা মহামারী মোকাবেলায় আমরা যেভাবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি, ফিজিক্যালি ডিসটেন্সড থেকেও ভার্চ্যুয়ালি কানেক্টেড থেকেছি; তেমনি করোনা পরবর্তী বিশ্বেও আমরা এগিয়ে যেতে চাই তথ্য-প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়েই।
তিনি আরো বলেন, দেশের গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, ক্লাউড টেকনোলজি, অটোনোমাস ভেহিকল, সিনথেটিক বায়োলজি, ভার্চ্যুয়াল অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবট, ব্লাক চেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং ও ইন্টারনেট অব থিংকস বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিতিতে গবেষণা পরিচালনা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে সাথে নিয়ে এই ধরণের গবেষণায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। উদ্ভাবিত পণ্যসমূহের মেধাসত্ত্ব নিশ্চিতে আইসিটি সেক্টর সহায়ক পেটেন্ট, কপিরাইট এবং ডিজাইন এ্যাক্ট করার জন্য তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি বলেন, করোনা মহামারীর সময়ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখা; শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে বসেই শিক্ষা দেওয়া; সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে দুস্থদেরকে অর্থ সহায়তা দেওয়া; এই সবকিছুই সম্ভব করা হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দেওয়ায় ঈর্ষণীয় সাফল্যই অর্জন করেছি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে এবারের এক্সপো আয়োজনের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কতৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, এনডিসি বলেন, তরুণদের আইসিটিতে দক্ষতা বাড়াতে দেশের ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। সবগুলো হাই-টেক পার্ক চালু হয়ে গেলে জেলা-উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরাও প্রযুক্তির সুফল পাবে। আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের তথা স্টার্ট-আপদের জন্য প্রতিটি পার্কের একটি ফ্লোর বিনা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা রাখছি, এর মাধ্যমে আমাদের স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলো নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং বিসিএস এর মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
সমাপনী দিনে চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাই-টেক ইনফ্রাসট্রাকচার এন্ড ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, মেড ইন বাংলাদেশ আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি, উইনিং ইন ক্যারিয়ার, ফোর্থ পিলার; ই-গভর্ন্যান্স অ্যান্ড স্মার্ট পাবলিক সার্ভিসেস’ শীর্ষক সেমিনারগুলোতে সরকারের নীতি নির্ধারক কর্মকর্তাসহ আইটি বিশেষজ্ঞরা আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এবারের এক্সপোতে ২১৭টি প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান/ ব্র্যান্ড ভার্চুয়ালি অংশগ্রহন করেছে। এক্সপো উপভোগ করার জন্য DDIExpo 2021 অ্যাপ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। অনলাইনে প্রায় ৩৭ লাখ দর্শনার্থী এই এক্সপোর সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ভার্চুয়ালি প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার দর্শনার্থীর অনলাইনে এক্সপো উপভোগ, প্রায় ৭৮ লাখ ভিডিও ভিউজ এবং অনলাইন এবং অ্যাপে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ দর্শনার্থীর কাছে এক্সপোর আহ্বান পৌঁছানো হয়েছিল। তিন দিনের এক্সপোতে ১০ টি সেমিনার, চারটি কর্মশালা এবং তিনটি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ২৫০ এরও বেশি আলোচকের বক্তব্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।