চিপ উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি রফতানিতে চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দুই দেশের এ বিরোধের কারণে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চীনের বিকল্প খুঁজছে। আর এদিক থেকে তালিকার শীর্ষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া। খবর সিএনবিসি।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্রাংশে চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার হয়। আর এর উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ চলছে। যেখানে মার্কিন প্রশাসনের দাবি উন্নত প্রযুক্তি চীনকে সামরিক খাতে বেশি শক্তিশালী করে তুলবে।
এলএসই আইডিয়াসের ডিজিটাল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রকল্পের প্রধান কেন্ড্রিক চ্যান বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে মালয়েশিয়ার পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতাসহ সুপ্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো রয়েছে। বিশেষ করে অ্যাসেম্বল, পরীক্ষণ ও প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ◌দেশটির অভিজ্ঞতা অনেক সমৃদ্ধ।’
এর অাগে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ জায়ান্ট ইন্টেল, মালয়েশিয়ায় চিপ প্যাকেজিং ও পরীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। চলতি বছর থেকে সেখানে উৎপাদন শুরুর কথাও বলা হয়েছিল।
সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইন্টেল মালয়েশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইক কিয়ান চং বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী, সুপ্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো এবং শক্তিশালী সরবরাহ চেইস সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।’
১৯৭২ সালে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে প্রথম উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে ইন্টেল। এটি স্থাপনে ১৬ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল। কোম্পানিটি মালয়েশিয়ায় একটি সম্পূর্ণ পরীক্ষণ সুবিধার পাশাপাশি একটি উন্নয়ন ও নকশা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পেনাংয়ে নতুন একটি হাব চালু করেছে গ্লোবালফাউন্ড্রিজ। বৈশ্বিক পর্যায়ের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এ উদ্যোগ নেয় মার্কিন এ প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কোম্পানিটির উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
গ্লোবালফাউন্ড্রিজ সিঙ্গাপুরের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল ম্যানেজার ট্যান ইয়ু কং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার নীতির পাশাপাশি সরকার এবং ইনভেস্টপেনাংয়ের মতো অংশীদারদের সমর্থনের কারণে এখানে শক্তিশালী ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানির শীর্ষ চিপ উৎপাদনকারী কোম্পানি ইনফিনিয়ন ২০২২ সালের জুলাইয়ে কুলিমে ওয়াফার ফ্যাব্রিকেশন মডিউল নির্মাণের কথা জানিয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে কোম্পানিটি ক্ল্যাংয়ে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কথাও জানিয়েছে।
ইনসিগনিয়া ভেঞ্চার পার্টনার্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা অংশীদার ইংলান ট্যান বলেন, ‘মালয়েশিয়া সবসময়ই প্যাকেজিং, অ্যাসেম্বল ও পরীক্ষণের দিক থেকে দক্ষ। এছাড়া এখানে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে খরচও তুলনামূলক কম। এ কারণে রফতানি খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।’ তিনি আরো জানান, রিঙ্গিতের বিনিময় হার ভালো থাকায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে মালয়েশিয়া।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চিপ প্যাকেজিং, অ্যাসেম্বলি ও পরীক্ষণ পরিষেবার ১৩ শতাংশই মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। বৈশ্বিক পর্যায়ে চিপের চাহিদা নিম্নমুখী থাকলে ২০২৩ সালে মালয়েশিয়া থেকে সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের রফতানি দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ১৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।