টানা ১৫ মাস ধরে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে সহসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না সরকারের এমন সিদ্ধান্তও আছে। করোনা সংক্রমণ বর্তমানে ৮ শতাংশ। আবার ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পরামর্শ কোভিড-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির।
এছাড়া স্কুল খোলার আগে শিক্ষার্থীদেরও করোনার টিকা দিতে চায় সরকার। এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে সহসা যে খুলছে- এমন ধারণা করছেন অনেকেই।
অন্যদিকে গত শিক্ষাবর্ষে লেখাপড়া হয়নি। কিছু না জেনেই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। আরা চলতি শিক্ষাবর্ষেরও প্রায় অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই স্কুল খুলতে দেরি হলে কী হবে, এমন প্রশ্ন এখন সবার। মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, স্কুল খুলতে দেরি হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে রাখার জন্য অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রমে আরো জোর দেওয়া হবে। বর্তমানে অনলাইন ক্লাস করার ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি, সমস্যা রয়েছে তা দূর করা হবে। এছাড়া রেডিও এবং টেলিভিশনেও পাঠদানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সব শিক্ষার্থী যাতে টেলিশিনের মাধ্যমে পাঠদান দেখতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে ক্লাসের কার্যক্রম চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। টেলিভিশনে ক্লাস চালু হলেও তা দেখতে পারেনি অধিকাংশ শিক্ষার্থী। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শুরুতে অনলাইনে ক্লাসের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও এখন নেই। এখন উপস্থিতি ১০ শতাংশেরও কম। বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া মফস্সলের শিক্ষার্থীরা একেবারে পিছিয়ে আছে। আবার বই দেখে খাতায় লিখে অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখল, শিখন ফল কতটুকু অর্জন করল তাও সুনির্দিষ্ট নয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনা যদি না কমে বা যদি কমেও আমাদের তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা হবে। অনলাইন ক্লাস, টিভি ক্লাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট। এই তিনটি বিষয়ে আরো ভালোভাবে জোর দেওয়া হবে। সব শিক্ষার্থী যাতে এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হবে।
মাউশির কর্মকর্তারা মনে করেন, অনলাইন বিষয়টি এখন পুরোনো হয়ে যাওয়াতে উত্সাহে হয়তো কারো কারো ভাটা পড়ছে। উত্সাহ কমেছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে উত্সাহ না কমে। সবাই যেন এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। মাউশি মনে করে, গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য যে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছিল তাতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে সবাই। এ কারণে এই পদ্ধতিও চালু রাখা হবে এবং আরো গুরুত্ব দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের যে অ্যাসাইমেন্ট দেওয়া হয়েছিল তা কতটা কার্যকর হয়েছে, শিখন ফল কতটুকু অর্জন হয়েছে সে বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে যে, যারা স্কুলে আসবে না তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বছর যারা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল তারা কোনো কিছু না শিখেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠছে। নতুন শ্রেণিতে ভর্তির পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো পাঠদান পায়নি। শিক্ষার্থীদের এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে। যে বিষয়গুলো সম্পর্কে কোনো ধারণাই পায়নি সে ক্ষেত্রে কী হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, আমরা প্রত্যেক ক্লাসের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে দিয়েছি। যেটা একেবারেই না পড়লে নয়, সেটাই শুধু পড়ানো হবে।