ঢাকা | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ |
২০ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

পরিবেশ অধিদপ্তরের নতুন বিধিমালা

মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ ই-বর্জ্য ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ পাবেন ব্যবহারকারীরা

মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ ই-বর্জ্য ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ পাবেন ব্যবহারকারীরা
মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ ই-বর্জ্য ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ পাবেন ব্যবহারকারীরা

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বা ই-বর্জ্য উত্পাদনকারী বা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকেই ফেরত নিতে হবে। আর ব্যবহারের পর নষ্ট বা বাতিল মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ ই-বর্জ্য ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ পাবেন ব্যবহারকারী। এমন শর্ত রেখেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’ প্রণয়ন করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহেই এটা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিধিমালার ফলে বিদেশ থেকে এখন আর কেউ পুরনো বা ব্যবহূত মোবাইল বা ল্যাপটপ আনতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফলে সরকারের এই বিধিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না।

কীভাবে এই আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে? জানতে চাইলে বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) মির্জা শওকত আলী ইত্তেফাককে বলেন, ‘এখন আমরা আইনটির বিষয়ে সবাইকে অবহিত করছি। আগামী মাসেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ ব্যবহারকারী ব্যবহূত ই-বর্জ্য ফেরত দিয়ে কত অর্থ পাবেন সেটা কে ঠিক করবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা বিধিমালায় রাখিনি। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে মোট মূল্যের এক বা দুই শতাংশ অর্থ ব্যবহারকারী পাবেন। অর্থাত্ ২০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা একটি ফোন ব্যবহারের পর ফেরত দেওয়া হলে ২০০ বা ৪০০ টাকা ব্যবহারকারী পাবেন। আলোচনা করেই এটা ঠিক করা হবে।’

বিধিমালার কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত, ২০১০)’ এর ১৫ (১) ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুই থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা দুই থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। মির্জা শওকত আলী বলেন, বিধিমালায় প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারকের ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নের প্রথম বছর প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারককে উত্পাদিত ই-বর্জ্যের ১০ শতাংশ সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় বছরে ২০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ৪০ শতাংশ ও পঞ্চম বছরে ৫০ শতাংশ ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এটা করেছি।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, সংগ্রহ কেন্দ্র, মেরামতকারী এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী ই-বর্জ্য ১৮০ দিনের বেশি মজুত রাখতে পারবে না। কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর আরো ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়াতে পারবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো পুরোনো বা ব্যবহূত ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করা বা দান-অনুদান বা অন্য কোনোভাবে বিদেশ থেকে আনা যাবে না। তবে গবেষণা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য অধিদপ্তরের অনাপত্তি নিয়ে গ্রহণ করা যাবে।

গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, প্রায় ৫০ হাজার শিশু এই বর্জ্য সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর যে পরিমাণ শিশুশ্রমিক মৃত্যুবরণ করে তার প্রায় ১৫ শতাংশ ই-বর্জ্যজনিত কারণে হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ই-বর্জ্য। গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। কিন্তু এই প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে। ফলে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উত্পাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করা গেলে সুফল মিলবে।

ই-বর্জ্য নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার সবগুলো দেশই সংকটে রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। এশিয়ার ই-বর্জ্য নিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস ইউনিভার্সিটি গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এশিয়ায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ১২টি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে, এই পাঁচ বছরে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টন। এদের মধ্যে চীনের অবস্থা ভয়াবহ। এই সময় তাদের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৮১ হাজার টন। যা পুরো এশিয়ার জন্য উদ্বেগের বলে বলা হচ্ছে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে বলেন, এর জন্য বিজনেস প্ল্যান বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রয়োজন। যাতে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। তাহলে এটা আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না। তার মতে, দিনে দিনে ই-বর্জ্য কমানো যাবে না, আমাদের ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহার আরো বাড়বে। পুরনো প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে যেতে হবে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাও করতে হবে।

দেশে সীমিত পরিসরে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এর একটি এনএইচ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হায়দার বলেন, টেলিকম অপারেটর থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা সীমিত পরিসরে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দিয়ে পুরোনো হ্যান্ডসেট কিনে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা করছি। তার মতে, এর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বড় আয়োজন দরকার।

মোবাইল ফোন,ল্যাপটপ,ই-বর্জ্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend