ঢাকা | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ |
২৭ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা

২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা
২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারী এবং এর বাইরেও কীভাবে আমরা আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে উন্নতির ধারায় অব্যহত রাখতে পারি, সেই লক্ষ্যে ইজেনারেশন এবং আরটিভি যৌথভাবে "করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাইজেশন" শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করেছে। গত বুধবারে আয়োজিত ওয়েবিনারে সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি এবং সরকারি হাসপাতালসমূহের স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞরা তাদের মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উক্ত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দান করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেবিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল খান এবং ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইজেনারেশন গ্রুপের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল ইসলাম। উক্ত অয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ইজেনারেশন লি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশে ১৬ হাজার কমিউনিটি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু এবং ২ হাজারের বেশি হাসপাতালকে ডিজিটাল পদ্ধতির অধীনে নিয়ে আসা হবে বলে জানান। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি হাসপাতাল চিকিৎসাখাতে পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরোও বলেন, “সেন্ট্রালাইজড হেলথ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক হেলথ, মেডিসিন ও ডায়াগনসিস রেকর্ডগেুলো যেন সরকারি ও বেসিরকারি হাসপাতালের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ইন্টারঅপারেবল সিস্টেম ব্যবহারের মধ্যমে প্রত্যেক নাগরিক যেন তার হেলথ রেকর্ড ডিজিটালি সংরক্ষণ করতে পারেন সে উদ্যোগ নেয়া হবে।

ইজেনারেশন এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান তার বক্তব্যে বলেন, “ ইজেনারেশ এর অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা, কষ্ট দূর করা এবং অবস্থা উন্নত করা। আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে মহামারী মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে ক্লাউডে সংযুক্ত আই সি ইউ, টেলিমেডিসিন, টেলি-রেডিওলজি, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট ইত্যাদির মাধ্যমে জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে কাজ করছি।

আরটিভি এর প্রধান নির্বাহী এবং ওয়েবিনারের মডারেটর সৈয়দ আশিকুর রাহমান বলেন. “চিকিৎসা খাতে তথ্য প্রযুক্তির সক্ষমতা কাজে লাগানোর মাধ্যমে ঘরে বসে সারা দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা এবং পরামর্শ দেওয়া সম্ভব। এটি সম্ভাব্য সংক্রমণের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পারে এবং অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

ইজেনারেশন লি এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, “করোনাকালে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর স্বাস্থ্যসেবা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পনা এবং ইজেনারেশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ন্যাশনাল কোভিড ড্যাশবোর্ড তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে যার মাধ্যমে সকলেই উপকৃত হয়েছে। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, টেলিমেডিসিন ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা যথেষ্ট উন্নত পর্যায়ে চলে গেছে। ডিজিটাল হেলথের যথোপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে পুরো স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল শাখার অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বছরের পর বছর ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অটোমেশন এবং ডিজিটালাইজেশন আনতে আমরা ডিজিটাল স্বাস্থ্য নিতীমালা চূড়ান্ত করতে কাজ করছি। এটি আমাদের দেশের সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ ইসমাইল খান বলেছেন, “ একটা সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু স্বপ্ন মনে হলেও এখন এসে সবাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল দেখছে। স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে প্রায় সকল খাতেই সবাই ডিজিটাল সেবা নিচ্ছে। পাশাপাশি তিনি আরো জানান, “স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে প্রথমে প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে হবে, এরপর সেই খাত অনুযায়ী প্রয়োজন মাফিক দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের দক্ষ কর্মী এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা সমাধানের সমন্বয় ঘটলেই কেবলমাত্র এই খাতে সর্বোচ্চ সফলতা বয়ে আনা সম্ভব।”

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বাঙ্কিম হালদার, বলেছেন, "আমরা এমন একটি বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে হাসপাতালে এসে সেবা নিতে পারছে না মোবাইল অ্যাপস এবং মোবাইল হেলথ এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করতে আমাদের সহায়তা করেছে। আমাদের এখন হাসপাতালে একটি ইন্টারঅপেরাবল ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ড (EHR) প্রয়োজন। এটি আমাদের দেশের বিভিন্ন দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চিকিত্সকদের পরামর্শ নিতে সক্ষম করে তুলবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সায়েদুর রহমান বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে আমরা ভার্চুয়াল আউটডোর সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদের ইনস্টিটিউটকে আংশিক ডিজিটালাইজড করেতে সক্ষম হয়েছি। বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রোগীদের জন্য ভার্চুয়াল রাউন্ডের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরির প্রস্তুতিও চলছে। ”

উক্ত ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এ বি এম মুকসুদুল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এম আই এস, অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক হাসান শাও্ন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ রাব্বি প্রমুখ।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend