আজকের পৃথিবীতে কম্পিউটার প্রযুক্তি সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম হলেও আমরা জানি তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা নেই। কেমন হতো যদি, একটি কম্পিউটার কোন আলাদা সফটওয়্যার এর সাহায্য ছাড়াই আপনার কথা বুঝতে পারে এবং আপনার সাথে কথোপকথন সাজাতে পারে। আমাদের মতো কম্পিউটারও যদি নিজস্ব মনোভাব প্রকাশ করতে পারতো, তাহলে ঠিক কিভাবে লাভবান হতাম আমরা সবাই?
ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আসছে, প্রযুক্তি ও মানুষের মধ্যকার ব্যবধান সরাতে কাজ করা নতুন এক আবিষ্কার ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)।
পৃথিবী জুঁড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যাত্রা খুব বেশিদিনের না হলেও, বাংলাদেশের একটি প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টেলসেন্স এ.আই.’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করে আসছে গত আট বছর ধরে। এসকল গবেষণার মূল লক্ষ্য অনেকটা এক সুঁতায় গাঁথা, এবং তা হচ্ছে অসাধারণ সব স্বংয়ক্রিয় প্রযুক্তি তৈরি করা, যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং মেশিনগুলি বুদ্ধিমান পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। কিছু অসাধারণ মানবকেন্দ্রিক এ.আই পণ্য গঠন করতেও সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা যাকে আমরা জানি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ নামের মাধ্যমে, সেটি হচ্ছে এমন এক বিষয়বস্তু যা কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য মানুষের গুনাবলী ও স্বনির্ভরতার মত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। আমাদের বিশ্বাস আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এ জি আই) ভবিষ্যতকে একটি নতুন বিস্তার প্রদান করবে। এবং আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, ঠিক কিভাবে ইন্টেলসেন্স এ.আই. উল্লেখ্য সকল ক্ষেত্রে নিকট ভবিষ্যতে অগ্রসর ভূমিকা রাখতে চলেছে।
ইনটেলসেন্স-এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে এর কো-ফাউন্ডার ও সিইও মোঃ রুম্মান আরেফিন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও এর সকল প্রয়োগ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে— মানুষের চিন্তাধারার পরিসরকে প্রসারিত করা। প্রতিষ্ঠানটির প্রচেষ্টা এমন একটি সমাজ তৈরি করা যেখানে প্রযুক্তি এবং মানুষ পাশাপাশি কাজ করতে পারবে।
মোঃ রুম্মান আরেফিন,কো-ফাউন্ডার ও সিইও,ইন্টেলসেন্স এ.আই
একইসঙ্গে উদ্দেশ্য কঠোর পরিশ্রম, এবং নিখুঁত দক্ষতার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচাইতে সৃজনশীল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হয়ে উঠা— এর অন্যতম লক্ষ্য।
ইনটেলসেন্স এআই এর কার্যাবলি এবং সেবা সমূহ:
ইন্টেলসেন্স এআই এ, আমরা মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা, ও অন্যান্য শিল্প খাত এর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, স্পিচ রেকোগ্নিশন এবং বিগ ডেটা এনালেটিক্স নিয়ে কাজ করে। আমাদের পণ্যগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা মানবকেন্দ্রিক কিছু বিশেষ সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছে।
প্রযুক্তিযুগে বুদ্ধিমান হতে চাইলে সবার স্পিচ রিকগনেশন, ফেস রিকগ্নেশন, অবজেক্ট ডিটেকশন সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। আমরা এমন এক আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স তৈরি করার পেছনে কাজ করছি যা শেখার অ্যালগরিদম নিজেই উন্নত করতে পারে। অতএব, এটি শেখার মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করতে পারে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক ভাবে এটি যেভাবে শিখছে সেই প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে যার ফলে তার শেখার কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
১. হিয়া :আমরা সকলেই গুগল এসিস্টেন্ট অথবা সিরি এর নাম শুনেছি। এসকল প্রযুক্তি এর মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই কিবোর্ড এ স্পর্শ না করেই, শুধুমাত্র কথা বলে সঠিক তথ্য জানতে পারি। তবে, পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট থাকলেও, বাংলায় তা ছিল না বহুদিন। আর সেদিকেই লক্ষ্য রেখে ইন্টেলসেন্স নিয়ে এসেছে ‘হিয়া’, যা বাংলায় প্রথম ভয়েস-ভিত্তিক এ.আই. ড্রিভেন ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট। সহজভাবে বলতে, আপনি এই প্রযুক্তি এর মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন এখন বাংলায় শ্রশ্ন করবার মাধ্যমেই।
২. টেন্স Speech :টেন্স Speech হচ্ছে একটি অটোমেটিক স্পিচ রিকগনিশ প্রযুক্তি, যা ইন্টেলসেন্স এর নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রযুক্তি এর মাধ্যমে আপনি টেক্সট-কে স্পিচে, এবং স্পিচকে টেক্সটে পরিবর্তন করতে পারবেন প্রায় নির্ভুলতা সহ। ধরুন আপনি একটি আর্টিকেল বাংলায় লিখতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনার কাছে লেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, সেই ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই সেন্সস্পিচের সাহায্য নিতে পারেন। এমনকি টেন্স speech- এন্ড নির্ভুলতা একটি বিশ্বব্যাপী মান ধারণ করেছে।
৩. সেন্সবট :বর্ধমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যথাযথ কাস্টমার সার্ভিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিন শেষে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাস্টমার সার্ভিস তাদের ক্রেতামূলকে ধরে রাখে, এবং ব্যবসায় এই সঠিক কাস্টমার সার্ভিসিং-এ সহযোগীতা করতে চলে এসেছে ‘সেন্সবট’।
‘সেন্সবট’ একটি ডিপ্ললার্নিং ভিত্তিক চ্যাটবট। বর্তমানে আমরা যত ধরণের চ্যাটবট দেখছি, সেগুলো মূলত রুল-বেইজড চ্যাটবট, অর্থাত্, সেই পথ শুধু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে যেগুলোর তথ্য তাকে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে, এ.আই. ভিত্তিক ‘সেন্সবট’ যেকোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে কোনো কালক্ষেপন করা ছাড়াই, এবং এর মাধ্যমে কাস্টমার অনুভব করতে পারবে একটি বাস্তব কথোপকথনের ধারাবাহিকতা। এনএলপি ব্যবহার করার কারণে এই চ্যাটবট বাংলা, ইংরেজি এর পাশাপাশি বাংলিশ (মিশ্রিত) ইনপুটও পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে।
৪. সেন্স-ইন্সাইটস :বর্তমান যুগে সাধারণত তথ্য সব প্রকল্প সফলতা নির্ণয় করে। প্রযুক্তির বিকাশে খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভূমিকা বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার, এবং সেখানে নতুনধারা যোগ করতে চলে এসেছে ‘সেন্স-ইন্সাইটস’। সেন্স-ইন্সাইটস মূলত একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা আমরা কোন একটি ব্রান্ড অথবা কোম্পানি সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করতে পারি এবং জানতে পারি যে— গত কয়েক মাস অথবা বছরে তাদের কর্মকাণ্ড কতটা কার্যকর ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যান্ড এবং কোম্পানিকে সাহায্য করতে এ ধরণের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও, ইন্টেলসেন্স এর অতিরিক্ত সেবার মধ্যে থাকছে— সেন্স-স্কোর, সেন্স-ড্রাইভ এবং ভি-সেন্স।
আচ্ছা, তাহলে ঠিক কিভাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলাভজনক ও কল্যাণকর কাজে ব্যবহূত হতে সক্ষম? অনেকভাবেই। বেশিরভাগ মানুষের ধারনা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি শুধুমাত্র লাভজনক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ইন্টেলসেন্স এ.আই. বিশ্বাস করে তাদের ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ ভিত্তিক প্রযুক্তি যেকোনো সমস্যাকে সমাধান করার জন্য বেশ কিছু নতুন উপায় বের করতে সাহায্য করে এবং ফলশ্রুতিতে মানুষের জীবনকে আরো উন্নত এবং সহজ করে তোলে। কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর পূর্বাভাস থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন - সকল ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর উপর্যুক্ত প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে একটি নতুন আঙ্গিকে। ধারণা করা হয়, ২০২৬ এর মধ্যে সম্পন্ন আন্তর্জাতিক এ.আই. শিল্প সর্বমোট ২৯৯.৬৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার এর মার্কেট তৈরি করবে। একইসঙ্গে, ইনটেলসেন্স এ.আই. বিশাল সংখ্যক আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে সেবা দেবার মাধ্যমে, বাংলাদেশকে বর্হিবিশ্বে একটি উচ্চ অবস্থানে উপস্থাপন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।