নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও স্মার্ট হতে সকলের মধ্যে সচেতনতা ও প্রযুক্তি স্বাক্ষরতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন অংশীজনেরা।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এই দাবি জানান বক্তারা।
বাংলাদেশে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধে কাজ করছে বিটিআরসি। কিন্তু চাইলেই ইন্টারনেটের সবকিছু বন্ধ করা যায় না। তাই নিরাপদ ইন্টারনেটের স্বার্থে সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে কীভাবে ইন্টারনেট নিরাপদ রাখা যায় সেজন্য তিনি অংশীজনদের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করেছেন।
তিনি বলেছেন, ইন্টারনেটের অপব্যবহার করছে এ কথা সত্য। তবে ইন্টারনেট এর অধিক ব্যবহারের কারণে বর্তমান করুণা মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।
মৈত্র আরো বলেন, ফেসবুক টিকটক লাইকি সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি নেই। তারপরও আমরা তাদেরকে অনুরোধ করার পর তারা অনেক সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন আল-জাজিরা টেলিভিশন এর সেনাবাহিনীর প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে অপপ্রচার করা হয়েছিল তা আমাদের অনুরোধ এই তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি মহাসচিব ইমদাদুল হক বলেন, যে সময় দেশে দুটি আইএসপি ছিল সেই সময় থেকে আমি এ সেবায় যুক্ত। মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আমাদের সবসময় নির্দেশ দিয়েছেন যে যখনই ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে তা যেন নিরাপদ এবং সুরক্ষা বজায় রেখে প্রদান করা হয়। তবে পরিতাপের বিষয় হলো- আজ পর্যন্ত কোনো অভিভাবক বা গ্রাহক আমাদেরকে নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের অনুরোধ করেননি।
রবির চিফ রেগুলাটরি আফেয়ার্স ব্যারিস্টার শাহেদ আলম বলেন, দেশের ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা সংখ্যা বা প্রযুক্তি সম্পর্কে স্ব-নির্ভর জ্ঞান সমৃদ্ধ হবার সংখ্যা খুবই কম। আমাদের প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ইন্টারনেট প্রদানে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ ইন্টারনেট প্রদান করার জন্য প্রতিবছর আমাদের দেয়া হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরীর জন্য।
বাংলালিংকের চিফ রেগুলাটরি আফেয়ার্স তাইমুর রহমান বলেন, গত ১৭ মাসে ইন্টারনেটের কল্যাণে লেখাপড়া ও ভ্যাক্সিনেশন চলমান রাখা সম্ভব হয়েছিল। বহির্বিশ্বের প্রযুক্তি আমাদের দেশে বন্ধ করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ৩য় থেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত ইন্টারনেট শিক্ষাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন।
এছাড়াও জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য বিটিআরসিসহ অন্যান্যদের নিয়ে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্র চিন্তাবিদ মেজর ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, টিকটক এমন একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নারী পাচার করার অন্যতম মাধ্যম হয়ে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য জনগণকে সচেতন হবার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন সেফুদা নামক এক ব্যক্তি ইউটিউবে এসে যেভাবে অশ্লীল শব্দ বোমা ফাটায় এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
টিআরএনবির সভাপতি ও সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি রাশেদ মেহেদী বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের দাবি করবে ল্যাপটপ, ডিভাইস, সফটওয়্যার এর নিরাপত্তা জরুরী। অনেক সময় সরকারিভাবেই বিভিন্ন সাইট বন্ধ করে দেয়া হয় কিন্তু এটি সরকারকে মনে রাখতে হবে এ সকল সাইট বন্ধ করতে গিয়ে অনেক সময় নিজেদেরই ক্ষতি করা হচ্ছে। তিনি বিদেশি গেম পরিহার করে সরকারি ভাবেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়ে গেম তৈরি করার জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করা কোনো সঠিক সমাধান নয়, জনসচেতনতাই একমাত্র পারে অপব্যবহার থেকে মুক্তি দিতে। আমরা আগামী দিনের সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে করতে চাই তার জন্য আমাদের আরও দ্রুত গতির ইন্টারনেট এর প্রয়োজন রয়েছে। জেনে বিটিআরসি ও সকল অপারেটরদের একযোগে জনসচেতনতায় গড়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ফাইবার অ্যাট হোমের হেড অফ গ্লোবাল বিজনেস লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ রেজাউল করিম রিজভী, তরুণ প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন আনু, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের হেড অফ টেকনিক্যাল প্রকৌশলী মোঃ আবু সালেহ।
আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সাহেদা বেগম প্রমূখ।