ই-কমার্স কোম্পানি ধামাকাশপিং ডটকম গ্রাহকদের থেকে অগ্রিম নেওয়া অর্থ অন্যান্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে ধারণা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ধামাকা যদি সত্যিই টাকা পাচার করে থাকে, তাহলে কী পরিমাণ পাচার করেছে?- এমন প্রশ্ন করা হলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, "এনিয়ে তদন্ত চলছে, আমরা কিছু কিছু প্রমাণও পাচ্ছি। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে চাই না।"
"আমি যদি বলি তারা টাকা পাচার করেছে, তাহলে কতো টাকা পাচার করেছে?- আপনি সে প্রশ্ন আবার করবেন। তাই আমি আপনাকে প্রশ্ন করার আগেই থামিয়ে দিচ্ছি," যোগ করেন কামরুল।
তবে সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ধামাকার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসে সিআইডি বাদী হয়ে মামলা করবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, "ধামাকা ইতোমধ্যে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরিয়েছে- তার প্রমাণ মিলেছে। কোম্পানির বিজনেস মডেলেও সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা তথ্য চেয়েছিলাম। তথ্যগুলো এরমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। এখন সেগুলো যাচাই-বাচাই চলছে।"
সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, ধামাকার মতো বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি গ্রাহকদের থেকে নেওয়া অর্থ অন্যান্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডাবল ভাউচার, সিগনেচার কার্ড ও বিগ বিলিয়ন রিটার্নস এবং অস্বাভাবিক মূল্য ছাড়ের ফাঁদে ফেলে হাজার হাজার গ্রাহকদের প্রতারিত করছে। এই প্রতারিত অর্থ আত্নসাৎ করতে অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে ব্যবসা শুরু করে ধামাকা শপিং। এরপর ৪০-৫০ শতাংশের মতো বড় অংকের মূল্যছাড়ের অফারের মাধ্যমে কোম্পানিটি গ্রাহকদের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম নিয়েছে।
কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুসারে, বিভিন্ন পণ্যে তারা এখন ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। তবে বাইক ও মোটরকারের মতো দামি পণ্যে এখন মাত্র ১০ শতাংশ ছাড়ের অফার চলছে।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, "আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে আলেশা মার্টসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের টাকা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বিক্রির টাকা সরাসরি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে।"
আলেশা মার্টে পণ্য বিক্রির টাকা সরাসরি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ট একাউন্টে যাওয়ার অকাট্য প্রমাণ পেয়েছেন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটকে দেখা যাচ্ছে তারা ছদ্মবেশী ফর্মে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী কোন অবস্থাতেই তারা এটা করতে পারে না।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ কাজে সহায়তা করছে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
আলোচিত ১৪টি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির সঙ্গে ইতোমধ্যে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বন্ধ করেছে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো যখন তাদের সঙ্গে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে- তখন বুঝতে হবে, ব্যাংক তাদের সঙ্গে ব্যবসা নিরাপদ মনে করছে না। ব্যাংকগুলোর লেনদেন বন্ধের বিষয়টিও তদন্তে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এদিকে অর্থ পাচার ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধামাকাশপিং ডটকমের মুখ্য পরিচালনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম রানা বলেন, "এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং হিসাবরক্ষণ ও আর্থিক বিভাগের প্রধান এব্যাপারে জানাতে পারবে।" "কোন সরবরাহককে কী পরিমাণ অর্থ দিতে হবে আমি শুধু সেই চাহিদাপত্র পাঠাই। হিসাবরক্ষণ বিভাগ আমার অধীনে থাকলে আমি এব্যাপারে আপনাদের তথ্য দিতে পারতাম," যোগ করেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, "আগামী রোববার ব্যক্তিগত আয়কর ফাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য সহকারে আমাকে সিআইডি কার্যালয়ে যেতে বলা হয়েছে।"
তবে ধামাকা শপের হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস- আমিনুর হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সুত্র -দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড