বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ৭ম’বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ৭ম বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড এর পুরষ্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১-এর উপদেষ্টা ও বেসিস এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান এবং বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর প্রধান বিচারক ও বেসিসের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাওলি, ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, ব্যাংক এশিয়ার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়া আরফিন, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ।
এবার বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর কার্যক্রম ২৭ অক্টোবর ২০২১ থেকে নিবন্ধনের মাধ্যমে শুরু হয় এবং ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময়ে চৌদ্দ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এর নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে থেকে অভিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে ধাপে ধাপে যাচাই বাছাই করে, প্রতিষ্ঠান পর্যায় ও ব্যক্তি পর্যায়, এ দুটি ভাগে, ৭ ক্যাটাগরিতে মোট ৯৯টি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ২০ টি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৯টি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে, আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৫টি, স্টার্টআপ বিভাগে ৫টি এবং এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স বিভাগে ১০টি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আর ব্যাক্তি পর্যায়ে ৬৩ জেলায় ৬৩ জনকে, ব্যক্তি নারী বিভাগে ৫ জনকে, জাতীয় শীর্ষ ১০ জন আউটসোর্সারকে এবং বিশেষভাবে সক্ষম ১ জনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
প্রথমবারের মতো বেসিস এবার বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।বাংলাদেশে যারা বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি আছেন, তারাও যে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে এটি তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন, ফ্রীল্যান্সারদের এমন ভাবে উৎসাহী করতে হবে যাতে তাদের দেখে আগামী প্রজন্ম উৎসাহিত হয়। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আমাদের ফান্ডিং এর প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন, তবে ট্রেডিশনাল ফান্ডিং দিয়ে তা হবে না-তরুনদের জন্য ব্যাংকগুলোকে আলাদা উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সি-পাওয়ার নামে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ফ্রীল্যান্সারদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চায় আর এর জন্য তিনি বেসিস এর মাধ্যমে ফ্রীল্যান্সারদের তাদের প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য আহ্ববান জানান। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শীঘ্রই বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বিজনেস সৃষ্টির সূতিকাগার বলে অভিহিত করেন। আর দেশের তরুণদের সাফল্যের গল্পগুলো নিয়েই সরকার সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিজাইন তৈরি করছে সরকার।
বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতিমধ্যে এ খাতে অর্জিত আয়ের উপর ১০% নগদ প্রণোদনা চালু করেছে। তিনি এই নগদ প্রণোদনা ২০%-এ উন্নীত করার অনুরোধ জানান। নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য সরকারের সাথে বেসিস একাত্ম হয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উদ্ভাবনের পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ আরও জোরদার করতে হবে বলে মনে করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে যেসব বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের দেশীয় সফটওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিষেবা সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে বেসিস সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কারণ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণে বেসিসের পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে লক্ষ্য রেখে, মেধাবী কয়েকজনকে একত্রিত হয়ে একটি ছোট আউটসোসিং কোম্পানী গঠন করে মিলিয়ন ডলার অর্জন করার জন্য তিনি প্রতিযোগীদের প্রতি আহবান জানান। বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি জনাব ফারহানা এ রহমান বলেন, প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে আমাদেরও সেভাবে দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যারা কাজ করছেন তাদেরকে দৃশ্যমান করা ও স্বীকৃতি প্রদান, রপ্তানিতে তাদের অবদান তুলে ধরা, ব্যক্তিগতভাবে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছেন তারা যাতে কোম্পানি তৈরির মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে পারেন সেটাই এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, আউটসোর্সিং এর সাথে জড়িত ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে বেসিসের উদ্যোগে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান প্রত্যেক বছর অব্যাহত থাকবে।
প্রতিষ্ঠান বিভাগে বিজয়ী- বিজেআইটি লিমিটেড; সার্ভিসইঞ্জিন লিমিটেড; ক্রাফটসমেন লি; এমডি ইনফোটেক; ব্যাকবন লিমিটেড।
স্টার্টআপ বিভাগে বিজয়ী- অ্যাপন্যাপ টেকনোলজিস লিমিটেড; আরাফিন মিডিয়া; কাটিং এজার; থিমফিক; ক্রিয়েটিভিটিক্স সফটওয়্যার লি.।
এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স বিভাগে বিজয়ী- সিকিউর লিংক সার্ভিস বাংলাদেশ লিমিটেড; ব্রেন স্টেশন ২৩ লিমিটেড; সেফালো বাংলাদেশ লি.; গ্রাফিকপিপল লিমিটেড; ডাবলইউ থ্রী ইঞ্জিনিয়ার্স লি; মনস্টার ল্যাব বাংলাদেশ লিমিটেড; ইক্সোরা সলিউশন লিমিটেড; ডেটা এক্সেঞ্জ; এ আর কমিউনিকেশনস; এস্টিম সফট লিমিটেড।
ব্যাক্তি পর্যায়ে- জেলা পর্যায়ে বিজয়ী- এফএম রিফাতুল আলম; মোঃ মহিবুল্লাহ আল মামুন; সুজিত কৃষ্ণ কুন্ডু; মোঃ মিজানুর রহমান; মোঃ নাজমুল হক; মোঃ রাসেল মিয়া ;মোঃ হারুনুর রশিদ ;এমডি নাসির আহমেদ ;রাহাত আহমেদ ;ইনামুল হক ;এমডি জিয়াউল হক ;নাজমুল কবির; মোঃ নাজমুস সাকিব; মোঃ মাহামুদুল হাসান; সৈয়দ মশিউর রহমান; আবদুল্লাহ আল ফারুক; মোঃ রকিবুল হাসান; সাব্বির আহমেদ রবিন; জহিরুল ইসলাম; শাহনূর; বিলাল ইসলাম; খালিদ হাসান; এমডি ফয়সাল মৃধা রনি; এমডি মাহফুজুর রহমান; মোঃ আতিয়ার রহমান; সুমন কান্তি দাস; কাজী রাশেদুল ইসলাম; মোঃ আরিফুর রহমান; মাহফুজ মোহাম্মদ লুৎফুল ইয়াজদানী; মোঃ তানভীর হাসান; মাসুদ কামাল জিশান; এমডি রাজিব হোসেন; আবির মাহমুদ; সজল কুমার সরকার; শ্রীবিজয় চৌহান; জুয়েল রানা; নুসরাত জাহান লস্কর; কে এম সায়েম; মোহাম্মদ নাজমুল হাসান আকন্দ; জি এম রাব্বুল হাসান; কৌশিক বিশ্বাস; মোঃ মাসুদ রানা; সুমন চন্দ্র সাহা; মোঃ মাসুম প্রামানিক; জুয়েল রানা; মোঃ রায়হান মিয়া; আমজাদ হোসেন; পি এম আশিকুর রহমান; এস এম রাফসান জনি প্রধান; আবদুর রব আখন্দ; মোঃ সাকিব; হাবিবুর রহমান; মোঃ আবুল হাসান; এমডি ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ; আফতাব হোসেন; সুশান্ত কুমার চৌধুরী; সাজেদা সুলতানা; সাদি রহমান; মোঃ আলসান শারিয়া; আবদুল্লাহ আল ফয়সাল; ফারজুক আহমেদ; আসলাম মিয়া; আরিফ হোসেন।
নারী বিভাগে বিজয়ী- সুচনা আক্তার; নাহিদ আক্তার; উম্মে হাবিবা নাজনীন; জান্নাতুল ফেরদৌস; সাবিনা আক্তার।
জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ ১০ জন বিজয়ী - মোঃ শাকিল হোসেন; এমডি সেলিম রেজা বাবুল; মঈন উদ্দিন আহমেদ; এমডি সোহেল রানা; মনিরুল ইসলাম; কে এইচ মুসফিকুর রহমান মেমো; রোকন সরকার; ফয়সাল আহমেদ; মোঃ সাইফুল্লাহ বিন আশরাফ; দেবতোষ দে।
বিশেষভাবে সক্ষম ক্যাটাগরিতে ১ জন বিজয়ী - অনিক মাহমুদ। বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো সরকারের ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করা। পাশাপাশি যারা এখন ব্যক্তি পর্যায়ে আউটসোর্সিং কাজে নিয়োজিত তারা যেন অদূর ভবিষ্যতে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কোম্পানি গঠন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে পারে। কারণ সরকার এখন রপ্তানি আয়ের উপর যে ১০% নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে তা কেবল কোম্পানিগুলোই নিতে সক্ষম। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আউটসোর্সিং পরিষেবাগুলির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক প্রতিভাবান উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তিরা কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ও সমাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে মানুষের বেকারত্ব দূরীকরণে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে, প্রযুক্তি সেবার বিভিন্ন খাতে পেশাদারি কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ এর আয়োজন করা হয়। ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ এর প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে ছিলো ব্যাংক এশিয়া এবং সার্বিক সহযোগীতায় ছিলো মাস্টারকার্ড, আইবিপিসি এবং এলআইসিটি।