গত বছর জুলাই মাসে ভার্চ্যুয়াল আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ফটোগ্রাফারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। একই মাসে অনলাইনে আলোকচিত্র, চিত্রকর্ম ও ভিডিও প্রদর্শনীর আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগ।
বছরখানেক আগেও কেউ কি ভেবেছিল, অনলাইনে আয়োজিত হবে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার, নবীনবরণ কিংবা বসন্ত উৎসব? এক মহামারি সব বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তিকে কতভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ধারণা আরও স্পষ্ট হয়েছে এই নতুন স্বাভাবিকে। চিরায়ত সেমিনার অনলাইন দুনিয়ায় নাম বদলে হয়েছে ওয়েবিনার। অনলাইনে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য কোন মাধ্যমগুলো কার্যকর।
অনলাইনে বড় কোনো আলোচনা সভা বা ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম জুম। সর্বোচ্চ ৩০০ জন মানুষের অংশগ্রহণে জুম মিটিংয়ের আয়োজন করা যায়। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১০০ জনের কম আর অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ৪০ মিনিটের কম হলে বিনা খরচে জুমে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়। তবে অংশগ্রহণকারী ও অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়লে জুমের গ্রাহক হতে হয়। অংশগ্রহণকারী সদস্যের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০০ জন ও অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে বাৎসরিক গ্রাহক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ৩৫০ মার্কিন ডলার (১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা)। জুমের গ্রাহক হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন তাদের ওয়েবসাইটে (zoom.us/pricing)। জুমে আয়োজিত ওয়েবিনার ফেসবুক ও ইউটিউব পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য প্রায় একই ধরনের সেবা মিলবে গুগল মিট, হ্যাংআউট, ওয়েবেক্সসহ বেশ কিছু মাধ্যমে।
ফেসবুকভিত্তিক লাইভ আলোচনা সভা আয়োজন করতে চাইলে স্ট্রিমইয়ার্ড (streamyard.com) নামের মাধ্যমটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিনা খরচে স্ট্রিমইয়ার্ডে সভা আয়োজন করলে সর্বোচ্চ ছয়জন একসঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারেন। স্ট্রিমইয়ার্ডে ‘গ্রিন স্ক্রিন’ সুবিধাও রয়েছে। এর মাধ্যমে ভিডিওতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে ভিন্ন কোনো দৃশ্যও ব্যবহার করতে পারেন। মাসিক বা বাৎসরিক গ্রাহক হলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ জন করা যায়। গ্রাহক হলে লাইভ ভিডিওতে লোগো যোগ করা যায়। এ ছাড়া ভিডিওটি হাই ডেফিনেশন বা উন্নতমানের ঝকঝকে ছবিতে রেকর্ডের সুবিধা রয়েছে। মাসিক ভিত্তিতে গ্রাহক হতে হলে খরচ পড়বে ২০-৪০ মার্কিন ডলার (১৭০০ থেকে ৩৪০০ টাকা)। ভিডিও রেকর্ডিং বা সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আরও উন্নতমানের শব্দ, ছবি ও অন্যান্য পেশাদারী সুবিধা পেতে চাইলে ওবিএস স্টুডিও (obsproject.com) সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো উইন্ডোজ অথবা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারে বিনা খরচে ওবিএস সফটওয়্যার ইনস্টল করে ব্যবহার করা যায়।
শাবিপ্রবি ও ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর জন্য কুনস্টম্যাট্রিক্স নামের একটি ভার্চ্যুয়াল গ্যালারি ব্যবহার করেছিলেন। ১০টি ছবি বা চিত্রকর্ম হলে গ্যালারিটি বিনা খরচে ব্যবহার করা যায়। ছবি বা চিত্রকর্মের সংখ্যা বাড়াতে হলে গ্রাহক হতে হবে। এতে মাসিক খরচ পড়বে ১২ থেকে ৬০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া আর্টস্টেপস ও সেলফ মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন ভার্চ্যুয়াল গ্যালারি ভাড়া নিয়ে অনলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করা যায়। তবে গত বছর ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা ইউটিউবেও একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। সব ছবি এক করে একটি ভিডিও তৈরি করেছিলেন তাঁরা। আপনিও চাইলে এ রকম নতুন নতুন সৃজনশীল উপায় উদ্ভাবন করতে পারেন।