সিইও পরাগ আগরওয়াল ছাড়া বরখাস্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাকি দুজন হচ্ছেন, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার নেড সেগাল এবং আইনি নীতি, আস্থা ও নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা বিজয়া গাড্ডে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় ইলন মাস্ক জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনে নিয়েছেন তিনি। টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, আমার জন্য টুইটার কেনা সহজ ছিল বলে কিনেছি- ব্যাপারটি এমন নয়। আবার আমি টাকা কামানোর জন্যও টুইটার কিনিনি। বরং মানবতাকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য এ সংস্থাটি কিনেছি। কারণ মানবতাকে এগিয়ে নেয়ার যেকোনো পদক্ষেপের প্রতিই আমার অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে। এর আগেই অবশ্য টুইটার হ্যান্ডেলে নিজের পরিচয় বদলেছেন ইলন মাস্ক। নিজের প্রোফাইলে তিনি লিখেছেন, চিফ টুইট।
বিজ্ঞাপনদাতাদের উদ্দেশে লেখা এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, প্রিয় বিজ্ঞাপনদাতারা! কী কারণে টুইটার কিনেছি, তা পরিষ্কার করতে সম্ভব হলে আমি আপনাদের সবার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতাম। কেন আমি টুইটার কিনেছি এবং এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনদাতাদের সম্পর্কে আমার কী চিন্তা-ভাবনা, এসব নিয়ে বাজারে অনেক ধরনের অনুমান ও ধারণা রয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশই ভুল।
ইলন মাস্ক আরও বলেন, সভ্যতার ভবিষ্যতের স্বার্থেই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি ডিজিটাল টাউন স্কয়ার প্রয়োজন, যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে পারবে। এসব চিন্তাভাবনা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে অবশ্যই সেগুলো হতে হবে স্বাস্থ্যকর। সংঘর্ষ-সংঘাত উস্কে দিতে পারে এমন কোনো বিষয় বা তর্ক-বিতর্ককে অবশ্যই এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সমর্থন করা হবে না।
মার্কিন এই ধনকুবের বলেন, আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ হবে এবং সেখানে সবাইকে স্বাগতম। এটা এমন একটি জায়গা হবে, যেখানে প্রত্যেক ইউজার নিজের পছন্দের জায়গা খুঁজে পাবেন। যারা সিনেমা পছন্দ করেন, তাদের জন্য এখানে যেমন জায়গা থাকবে, আবার যারা ভিডিও গেম পছন্দ করেন, এখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন তারাও।
প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে মাস্ক বলেন, বর্তমানে প্রচলিত সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমগুলোর সবগুলো কোনো না কোনো উগ্র ডান বা বামপন্থার সমর্থক। তাদের ধারণা, বাণিজ্যের জন্য এই দুই নীতির কোনো একটিকে তাদের আকড়ে ধরতে হবে। এতে তারা কিছুটা আর্থিক লাভবান হয়, কিন্তু আলোচনার সুযোগ কিংবা ক্ষেত্র হারিয়ে যায়। আর এ কারণেই আমি টুইটার কিনেছি।
তবে মাস্ক এ-ও স্বীকার করে নেন যে, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও কিছুটা খুঁত থেকে যেতে পারে, তবে সেসব খুঁতকে অতিক্রমের চেষ্টা সবসময়ই করে যাবে টুইটার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহের মধ্যেই চলতি বছরের এপ্রিলে শোনা যায়, ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নিচ্ছেন। পরে মাস্কও এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিনছেন তিনি। কিন্তু পরে টুইটারের কিছু তথ্য নেওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কের পর টুইটার কিনবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষ তার নামে একটি মামলাও ঠুকে দেয়। অনেক কৌশল করেও মামলা ঠেকাতে পারেননি মাস্ক।
এক পর্যায়ে গত ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের চ্যান্সেরি আদালতের এক রায়ে বলা হয়, আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যেই টুইটার কিনতে হবে ইলন মাস্ককে এবং এটি কিনতে হবে পূর্ব প্রতিশ্রুত ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারেই। আদালতের রায় মেনে সময়সীমা পেরোনোর এক দিন আগেই টুইটার কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেন মাস্ক।
তবে দায়িত্ব নিয়েই টুইটারের সিইও পরাগ আগারওয়ালসহ তিন শীর্ষ নির্বাহীকে বরখাস্ত করেন ইলন মাস্ক। এর আগেও অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন, টুইটারে নানা পরিবর্তন আনতে হবে। তার অংশ হিসেবে সংস্থার প্রায় ৭৫ শতাংশ কর্মীকে ছাঁটাই করা হতে পারে। অবশ্য মাস্ক না কিনলেও টুইটারের কর্মী ছাঁটাই করা হতো। কারণ টুইটারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের শেষ নাগাদ কোম্পানির কর্মীদের বেতন থেকে ৮০ কোটি ডলার কাটছাঁটের পরিকল্পনা করেছে।