এ যেন সিনেমার কাহিনী। অজপাড়াগাঁ থেকে অনলাইন দুনিয়ায় প্রতারণা। মোবাইল ফোনে তথ্য নিয়ে, প্রবাসীদের ইমো হ্যাক করে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গোটা দেশে এই অপকর্মের নাটাই নাটোরে। জেলার কয়েকটি গ্রাম পরিচিত ইমো হ্যাকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে।
নাটোর জেলার বিলমারিয়া গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী বিজয় ও রাজমিস্ত্রী কিরণ। ফোন কলে ইমো হ্যাকিং এ ব্যস্ত এই দুইজন। আশপাশের গ্রামের হ্যাকার চক্রের সহায়তায় এ পথে পা বাড়ায় তারা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইমো নম্বর হ্যাক করে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। জানালেন হ্যাকিংয়ের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
এক থেকে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে বেনামে মোবাইলের সিম সংগ্রহ করে প্রতারক চক্রটি। প্রতারণার টাকা তোলা হয় দেশের বিভিন্ন জেলার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
এমনই প্রতারণার শিকার মেহেরপুরের শ্যামপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী নাজমুল। তার ইমো নম্বর হ্যাক করে স্ত্রী মাহাবুবার কাছে তার স্বামী পুলিশের হাতে আটক লিখে ম্যাসেজ দেয় প্রতারক চক্রটি। ছাড়তে দাবি করা হয় ৩ লাখ টাকা। মুক্তিপণের অর্থ পাঠানোর পর জানা যায়, সবকিছুই ভুয়া। স্বামী ছিলেন কর্মস্থলে। মাহাবুবার অভিযোগের সূত্র ধরেই বিজয় ও কিরণকে আটক করে মেহেরপুর গোয়েন্দা পুলিশ।
সৌদি প্রবাসী নাজমুলের স্ত্রী মাহাবুবা বলেন, ওরা একের পর এক নাম্বার দিতেই থাকছে যে, আরও লাগবে-আরও লাগবে। এভাবে দিতে দিতে যখন ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা হয়ে যায়, তারপর আমার স্বামী আমাকে ফোন দিয়েছে, জানতে পারি তার কিছু হয়নি। তখন জানতে পারি যে, ইমু হ্যাক করে তারা টাকা নিয়েছে।
এই সূত্র ধরে নাটোরের বিলমারিয়া, মোমনিপুর, বৈদনাথপুর, দুড়দুড়িয়া গ্রামে যায় চ্যানেল 24। কিন্তু ক্যামেরার সামনে বেশিরভাগই কথা বলতে রাজি হননি প্রতারক চক্রের ভয়ে।
পুলিশ বলছে, চক্রটিকে ধরতে অব্যাহত রয়েছে অভিযান। মেহেরপুর ডিবির ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে পুলিশ আটক করেছে। আটকের পর তারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। এর সঙ্গে জড়িত আরও একজনের নাম আমরা পেয়েছি। তাকে আটক করলে আরও নাম-ঠিকানা পাব।
আইটি বিশেষজ্ঞ মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক বলেন, সবাইকে সর্বোচ্চ সুপারিশ (হাইলি রিকমেন্ট) করবো যে, তারা যেন ‘টু ফ্যাক্টর স্টেপ ভেরিফিক্যাশন’ চালু করে এবং মেইল এড্রেস দেয়ার যে জায়গা আছে, সেখানে ই-মেইল যুক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, গেল ৬ মাসে শুধু মেহেরপুরেই ইমো হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।