যুক্তরাষ্ট্র কার্যত হুয়াওয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই ) চিপসেটের ব্যবহার সব দেশে, এমনকি হুয়াওয়ের নিজ দেশ চীনেও নিষিদ্ধ করেছে। এটি মূলত চীনের সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির অগ্রগতিতে বাধার এক বৃহৎ প্রচেষ্টারই অংশ, যা বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম কানুনের প্রতিরোধে সক্ষম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি (বিআইএস) ১৩ মে ২০২৫ ঘোষণা করেছে, “বিশ্বের যেকোনো স্থানে হুয়াওয়ের হুয়াওয়ে অ্যাসেন্ড চিপসেট ব্যবহার করলেই তা মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে।”
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, “এই পদক্ষেপের ফলে হুয়াওয়ের জন্য শক্তিশালী এআই এবং স্মার্টফোন চিপসেট তৈরি করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।”
চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন এআই চিপসেট চোরাচালানের প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে বিআইএস আমেরিকান কোম্পানিগুলোর সাপ্লাই চেইন সুরক্ষায় নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এটি কার্যত এনভিডিয়া এবং এএমডি-এর মতো এআই চিপ নির্মাতাদের জন্য একটি রপ্তানি অফ গাইডলাইন হিসেবেই কাজ করবে।
এছাড়াও, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি ব্যুরো জনসাধারণকে সতর্ক করার পরিকল্পনা করছে—যদি মার্কিন এআই চিপ চীনা এআই মডেলে ব্যবহার করা হয়, তার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে।
এই ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন বিআইএস বাতিল করেছে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে চালু হওয়া “দেশভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এআই চিপসেট রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতি”, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১৫ মে থেকে।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি, বাইডেন প্রশাসন পরিকল্পনা করেছিল দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে—মিত্র, সাধারণ, ও প্রতিপক্ষ—তাদের জন্য এআই চিপসেট রপ্তানিতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম প্রয়োগ করা হবে।
বিআইএস এই বাইডেন-যুগের নীতির সমালোচনা করে বলেছে, “এটি আমেরিকান উদ্ভাবনের গতিরোধ করতো এবং কোম্পানিগুলোর ওপর অপ্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রনিক বোঝা চাপিয়ে দিত।” তারা আরও যোগ করে, “ডজনখানেক দেশকে দ্বিতীয় স্তরে নামিয়ে দেওয়া কূটনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারতো।”
তবে, নতুন এই নীতিই কি হুয়াওয়ে-সহ চীনের এআই চিপসেট প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা সত্যিই থামাতে পারবে? তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
কারণ, হুয়াওয়ে এখন নিশানা করছে চীনের সেইসব দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে—যারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এনভিডিয়া -এর চিপসেট কিনতে পারছে না—এবং তারা কিছু ক্ষেত্রে সফলতাও দেখাচ্ছে।
একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “হুয়াওয়ের চিপসেটের চীনের বাইরের বাজারে এমনিতেই তেমন চাহিদা ছিল না, তাই সেগুলোর বৈশ্বিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আদৌ কতটা প্রভাব পড়বে—তা বলা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, “যেহেতু চীনের মধ্যে আমেরিকান চিপসেট পাওয়া দিনকে দিন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে, তাই হুয়াওয়ের চিপসেটের ঘরোয়া চাহিদা আরও বেড়ে যেতে পারে।”
নিষিদ্ধ কার্যক্রমগুলির মধ্যে রয়েছে বিশেষ করে চীন ভিত্তিক সংস্থাগুলির জন্য এই ধরনের চিপ ব্যবহার করে এআই মডেল ট্রেনিং, ।বিশেষ করে, অ্যাসেন্ড ৯১০বি, ৯১০সি, এবং ৯১০ডি চিপগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত মাসে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছিল যে, হুয়াওয়ে অ্যাসেন্ড ৯১০ডি চিপের পরীক্ষা করার জন্য গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ করছে, যা এনভিডিয়া এর এইচ ১০০ চিপের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে ধরা হচ্ছে। এই এইচ ১০০ চিপটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে চীন থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল।
হুয়াওয়ে ৫জি চিপ আমদানি থেকে বিরত, এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি ব্যাপকভাবে চীন এর চিপ নির্মাতা শিল্পকে সবচেয়ে উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা আমদানিতে বাধা দিচ্ছে।
বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞায় পড়েও, ২০২৩ সালের আগস্টে প্রযুক্তি দুনিয়াকে চমকে দেয় হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব Kirin 9000s চিপসেট দ্বারা চালিত মোবাইল ফোন— Mate 60 Pro উন্মোচন করে।
এই ঘরোয়া প্রসেসরটি ডিজাইন করেছে হুয়াওয়ের নিজস্ব চিপ ইউনিট HiSilicon, আর তৈরি করেছে চীনা চিপ নির্মাতা SMIC, ৭ ন্যানোমিটার প্রক্রিয়ায়।
এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এসেছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়ে—যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যে চলমান ক্ষতিকর বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তাপ কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; সেই যুদ্ধ, যার সূচনা হয়েছিল মূল ভূখণ্ড চীনের পণ্যে ব্যাপক শুল্কারোপের মধ্য দিয়ে।