পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে সমবায় অধিদফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরুসহ তার সহযোগীদের ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল-তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় কারসাজি প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে আবুল খায়ের হিরুসহ তার সহযোগীদের অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের দাম ছিল ৬৮ টাকা। তার এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারটির দাম কারসাজি করে বাড়িয়ে নেওয়া হয় ১১৬ টাকায়।
এর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের দেড় কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
এদিকে, ওই বছরের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন।
তার আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আইপিডিসি, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন সু, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে আবুল খায়ের হিরু, তার সহযোগী হিসেবে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান, তার কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং, ডিআইটি কো-অপারেটিভ এবং দেশ আইডিয়াল ট্রাস্টকে মোট ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী মো. এ.জি. মাহমুদ, একই ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী ও তার ভাই মো. সাইফ উল্লাহ এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। তারা সবাই শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
প্রসঙ্গত, জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তম কল সেন্টার পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৯ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ২১টি। সর্বশেষ চলতি হিসাব বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০.০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৯৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৪.৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের শেয়ার সর্বশেষ ৬০.১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৬ শতাংশ নগদ ও ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করেছে।