প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে। বাঙালির সবচেয়ে মূল্যবান দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন গুলোকে আলোকসজ্জার মাধ্যমে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। ২০২১ সালের বিজয় দিবসের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনে স্বাধীন জাতির জন্য জীবন উৎসর্গকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদ তথা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান-মুক্তিযোদ্ধা, যাদের ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।
সপ্তাহব্যাপী বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ২১ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কনফারেন্স হল, ষ্টার টাওয়ার (৭ম তলা), ১২ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেলে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ক্লাব আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি অধিবেশনকে আরও বর্ণিল করে তুলে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য (কুমিল্লা-৬) জনাব এ.কে.এম বাহাউদ্দিন (বাহার)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর মাননীয় ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মোঃ রায়হান আজাদ ও মাননীয় কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইফফাত জাহান।
তিনি মন্তব্য করেন, বিভিন্ন শ্রেনীর গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়ে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে পূরণ করছে । তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতেই দায়বদ্ধ নন বরং ২০২১ সালে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী সম্পর্কে শিক্ষর্থীদের অবহিত করতে হবে, যাতে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ দ্রæত উন্নতি করছে এবং ভবিষ্যতেও এধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর মাননীয় ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মোঃ রায়হান আজাদ বক্তব্যে বলেন: আমরা বঙ্গবন্ধু ও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমাদের বীরদের সত্যিকার অর্থে সম্মান করার জন্য আমাদের সকল সমস্যা মোকাবেলা করে শান্তি, সাম্য ও সমৃদ্ধশালী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিণির্মানে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের এইধারাকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সাহসের প্রতীক, তাঁদের সম্মিলিত সাহস ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে উজ্জ¦ল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম করি।
বিশেষ অতিথি মাননীয় কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইফফাত জাহান বক্তব্যে বলেন: সকল জাতি ধর্মের মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি। যার কারণে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে, সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে আমাদের সকলকে জানতে হবে এবং তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তার লালিত স্বপ্নকে পূরণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর স্কুল জীবনের সাক্ষাৎ এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে তাঁকে ও তাঁর সহপাঠীদের অভ্যর্থনা জানান। সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর মাথায় হাত রেখে আশির্বাদ করেন এবং সকলকে আগামী দিনের সুনাগরিক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপদেশ প্রদান করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। বক্তব্যের শেষে তিনি বঙ্গবন্ধুর দুই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
গৌরবের এই দিনে মাননীয় প্রধান অতিথি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীবৃন্দের অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব নজরুল ইসলাম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আসাদ আলীর হাতে পদক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. এ.বি.এম. আব্দুল্লাহ কে ”প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পদক - ২০২১” প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্ত অভিভাবকবৃন্দ তাদের সন্তানদেরকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণের সুযোগ করে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতিচারণ করেন।
প্রফেসর ড. নাশিদ কামাল, ডিন স্কুল অব বিজনেস, তাঁর বক্তব্যে বলেন: বঙ্গবন্ধু তাঁকে তাঁর দাদা অব্বাস উদ্দিন আহমেদের আদর্শ অনুসরণ করতে উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর উপদেশকে স্মরণ করে দেশের জন্য প্রত্যেকের সেরাটা দিয়ে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগের জন্য তাঁর সকল সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ জানান। প্রফেসর এস.কে. মোঃ হাসানুজ্জামান, ডিন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রফেসর ড. শুভময় দত্ত, ডিন স্কুল অব সায়েন্স, এসোসিয়েট প্রফেসর ড. রায়হানা বেগমসহ অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচীতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্যান্যদের মধ্যে সকল বিভাগীয় প্রধান, অনুুষ্ঠানের পরিচালক, অনুষদ সদস্য, প্রশাসনিক প্রধান, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী মোল্লা। তিনি বলেন, এবারের বিজয় দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উৎযাপিত হচ্ছে। সেইসাথে তিনি ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের শেষান্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. নাসরিন আক্তার, চেয়ারপারসন, মানবিক বিভাগ এবং আহŸায়ক, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ক্লাব।
অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়