পরের বার কেউ যখন জানতে চাইবে,“টেল মি এবাউট ইউরসেলফ” তখন এই উত্তর যেভাবে দিবেন!
ইন্টারভিউ করার সময় সময় শত শত প্রার্থীকে এই প্রশ্ন করেছি, কিন্ত খুব কম ক্ষেত্রেই মনের মত উত্তর পেয়েছি। আপনার সম্পর্কে বলুন,শোনা মাত্রই গড় গড় করে সেই সব কথা বলতে থাকে যেগুলো সেই বাক্তি ইন্টারভিউ রুমে ঢুকার ঠিক আগে তার সিভি তে আমি দেখে নিয়েছি!জীবনে যতবার ইন্টার্ভিউ দিবেন বা নিবেন এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হবে জানার পরেও আমরা প্রায় সকলেই তেমন সিরিয়াসলি এই প্রশ্নের জন্য নিজেকে তৈরি করিনা। ফলে প্রশ্নটা শোনা মাত্রই প্রথমে ঘাবড়ে যাই, এর পরে সেই কথা গুলি বলতে থাকি যেগুলো সিভিতে অলরেডি দেওয়া আছে।
প্রশ্নটাকে ভয় না পেয়ে ধরে নিন এই প্রশ্নটা করা হয়েছে আপনার নিজেকে প্রোমট করার চমৎকার একটা অপারচুনিটি হিসেবে, আর এটাই আপনার বড় সুযোগ নিজেকে তুলে ধরার জন্য, ভুলেও এই সুযোগ কে পাশ কাটিয়ে যাবেননা। এই প্রশ্নের মাধ্যমে কেউ আপনার জীবনের ধারাবিবরণী শুনতে চাচ্ছেনা কিংবা তাঁরা জানতে চাননা আপনার কলেজ এর গ্রেড কিংবা আপনার বর্তমান কাজের ডেজিগনেশনও জানতে চাইছেননা।
সে আপনি চাকরীর ইন্টার্ভিউতে থাকুন, কিংবা কোন নতুন ক্লায়েন্টের সাথে বিজনেস মিটিঙে অথবা প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তার সাথে প্রথমবারের মত ওয়ান টু ওয়ান মিটিংই হোক না কেন, মনে রাখবেন এটাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ নিজেকে শানিয়ে তুলে ধরার। এটা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, আপনার একমপ্লিশ্মেন্ট এবং আপনি যা করেন বা করতে সক্ষম তার গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরার দুই বা তিন মিনিটের বিজ্ঞাপন দেয়ার একটি মহা সুযোগ।
আপনার লক্ষ্য থাকবে এই প্রশ্নটিকে একটা ডিপ কনভারসেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একটা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের শুরুতে পরিণত করা। আগে থেকেই ঠিক করে নিন তিনটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেপস- ১) প্রশ্নকর্তাকে এনগেজ করুন, ২) আপনার ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন এবং ৩) বোঝান,কেন আপনাকেই তাঁদের দরকার। এরপর প্রশ্নকর্তার চাহিদা মত করে আপনার উত্তর গুলো সাজিয়ে ফেলুন। আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে প্রশ্নকর্তার প্রয়োজনের সাথে কানেক্ট করার উপায় খুঁজে বের করুন।
এনগেজ দ্যা অডিএন্স
আপনি বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে আছেন বা আপনার ডেজিগনেশন কি সেটার উপর খুব বেশী জোর না দিয়ে বরং চেষ্টা করুন আপনি কি কাজ করেন এবং আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানে কিভাবে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ- সংক্ষেপে তুলে ধরুন। এর ফলে একটা সহজ আলাপচারীতার সুযোগ তৈরি হবে। ইন্টারভিউএর বা মিটিঙের আগে আপনার উচিত প্রশ্নকর্তা বা তাঁদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব রিসার্চ করা যাতে করে আপনার এক্সপার্টিজ কে তাঁদের প্রয়োজনের সাথে সহজেই কানেক্ট করাতে পারেন। আপনার দক্ষতা ও তাঁদের চাহিদাকে একটা পয়েন্টে নিয়ে আসাটাই জরুরী। ইন্টারভিউয়ার পুরোপুরি মনযোগী হবেন আপনার প্রতি।
উদাহারন স্বরূপঃ
আমি কাজ করছি আমার বর্তমান কোম্পানির কাস্টমার এক্সপেরিএন্সের সাটিস্ফ্যাকশন ইনডেক্স নিয়ে,যেসব কাস্টমার “মোটামুটি সন্তস্ট” কিভাবে তাঁদেরকে “অত্যন্ত সন্তস্ট” ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসা যায় এবং তাঁদের কে “অত্যন্ত লয়াল” কাস্টমারে পরিণত করা যায়।
আমি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কোম্পানিগুলোকে সাম্প্রতিক সোলারউইন্ডস হ্যাক এবং অন্যান্য হুমকির জবাব দিতে সাহায্য করছি।
আপনি যখন এইভাবে নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করবেন তখন প্রশ্নকর্তার জন্য আপনাকে প্রশ্ন করা অনেক সহজ হয়ে যায় এবং আপনার কনভারসেশন তখন ভাল ভাবে আগাতে থাকে। প্রশ্নকর্তাকে আপনি এনগেজ করে ফেলেছেন! রাইট?আর আপনাকে প্রশ্ন করার মানেই হল নিজেকে আরও ভাল ভাবে উপস্থাপনের করার সুযোগ।
বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করুন
এখন সময় হয়েছে আপনার সম্পর্কে আরও যা জানানোর আছে তা শেয়ার করার, যা প্রশ্নকর্তার বা নিয়োগকর্তার জানা উচিত। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, জীবনের অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা থেকে হাইলাইটস বর্ণনা করুন যা আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে এবং এই ক্ষেত্রে আপনার জ্ঞানকে প্রদর্শন করে। যেমন ধরুন,যে জিনিসটা আপনাকে অনুপ্রাণিত করে এই ফিল্ডে নিয়ে এসেছে, আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পড়াশোনা করেছেন, কিংবা কোন বড় প্রজেক্টে কাজ করেছেন, অথবা আপনি যে সব জায়গায় বাস করেছেন, ইত্যাদি। আর আপনার কাজে কিভাবে আপনি বাকিদের চেয়ে সেরা বা কোয়ালিফায়েড?
উদাহরণস্বরূপ:
আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং একই সাথে একজন এমেচার অ্যাথলেট, ফলে এই দুটো বিষয়ের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় করে আমি আর্টিফিশিয়াল বডি পার্ট তৈরি করার জন্য নতুন টেকনোলজি ডেভেলপ করতে পারি।
একটি ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট কন্সাল্টিং কোম্পানিতে দুই বছর কাজ করার কারণে ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্পর্কে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা,ভারতে নতুন বাজার তৈরি করতে বেশ হেল্পফুল হবে।
টেল পিপল হোয়াই দে শুড কেয়ার
এই পর্যায়ে আপনি ইতিমধ্যে কনভারসেশন স্টার্ট করেছেন, আপনার এক্সপারটিজও ব্যাখ্যা করেছেন। এবার বিগ পিকচার কনসেপ্ট এর মাধ্যমে তুলে ধরুন হোয়াই দে শুড কেয়ার। যেমনঃ
“আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এখন প্রতিনিয়তই নানা ভাবে আমাদের হেল্প করছে এবং সামনে এর হিউজ পটেনশিয়াল রয়েছে। আমার কাজ ও অভিজ্ঞতা এই প্রক্রিয়ায় আমাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।“
“পান্ডেমিকের কারণে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ফলে অনেক কর্মীদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আমাদের কোম্পানির তৈরি করা প্রোগ্রাম “Online” কর্মীদের মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে খুব ভাল ভূমিকা রাখছে”।
যেকোন ইন্টারভিউএর অবধারিত প্রশ্ন,“টেল মি এবাউট ইয়োরসেলফ” এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হোল, নিজেকে এর জন্য প্রস্তত করা।
আলোচনার প্রথমেই যদি আপনার কোম্পানির নাম বা আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে তাহলে সেটাকে প্রধান্য দিন কিংবা যদি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, আপনার একমপ্লিশ্মেন্ট ইত্যাদি উঠে আসে সেটাকে আলোচনায় নিয়ে আসুন।
আপনাকে কনফিডেন্ট থাকতে হবে আপনার এই আলোচনায়। ইতস্তত করা বা নার্ভাস হয়ে পড়া একটা বড় সমস্যা ইন্টার্ভিউয়ের জন্য। কাজেই আপনাকে সময় নিয়ে প্রস্ততি নিতে হবে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য।
আগে ঠিক করুন আপনি কিভাবে তিনটা স্টেপে নিজেকে তুলে ধরবেন,তার পরে রিহার্সাল করুনআয়নার সামনে কিংবা মোবাইলের ক্যামেরার সামনে। তারপর দেখুন আপনার মন মত হচ্ছে কিনা আপনার উত্তর। প্রয়োজনে বারবার রিহার্সাল দিন। হাসিমুখে এই উত্তর দেয়ার সময় আপনার অভিবাক্তিই বলে দেবে আপনি কেমন করছেন।
মনে রাখবেন,এই ওপেন এন্ডেড প্রশ্নের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এটি আপনাকে আপনার সেরা বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরার সুযোগ দেয় এবং নিশ্চিত করে বাকি সকলকে রেখে কেন তাঁরা আপনাকেই সিলেক্ট করবে।