ছয় মাস আগে নিজের আইফোনটি হারিয়েছিলেন ফাতেমে গদসি। তা-ও আবার আড়াই শ বর্গকিলোমিটারের এক লেকের তলায়। মাস ছয়েক পর মুঠোফোনে একটি এসএমএস পান, কেউ একজন তার ফোনটি খুঁজে পেয়েছেন। বিশ্বাস করার কথা নয়। বিশ্বাস তিনি করেনওনি। ভেবেছিলেন, নিশ্চয় কোনো বন্ধুর কাজ, মজা করছেন তাঁর সঙ্গে।
ফাতেমে থাকেন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। হ্যারিসন লেক সেখান থেকে খুব দূরে নয়। একসময় তাঁর মনে হলো, ব্যাপারটা পরখ করে দেখা দরকার। সত্যিও তো হতে পারে। এসএমএসে বলা হয়েছিল, চিলিওয়াক নামের জায়গা থেকে ফোন সংগ্রহ করতে হবে। সেখানে গেলেন। হারানো আইফোন ফিরে পেলেন। কানাডীয় সংবাদমাধ্যম সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাতেমের তখনো অবাক হওয়ার বাকি। খানিক বাদে দেখলেন, ফোনটি তখনো কার্যকর।
হ্যারিসন লেকের তলায় আইফোন ১১ মডেলের স্মার্টফোনটি খুঁজে পান ক্লেটন হেলকেনবার্গ ও তাঁর স্ত্রী হিদার। শখের বসে তাঁরা অদ্ভুত সব সামগ্রীর আশায় জলাশয়ের তলায় খুঁজে বেড়ান। বেশির ভাগ সময়ে আবর্জনা ছাড়া তেমন কিছু মেলে না। মূল্যবান কিছুর খোঁজ মেলে কদাচিৎ।
ওদিকে ফাতেমে ফোনটি হারিয়েছিলেন গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। টিউবের সাহায্যে তৈরি বাম্পার বোটে চড়ে ঘোরার সময় তাঁর আইফোন পানিতে পড়ে যায়। সে ঘটনার আগে নিজের হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলেছিলেন ফোনে। ফোন থেকে সেই ছবিগুলোও উদ্ধার হয়েছে।
ফাতেমে গদসি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম আর তখনই ফোনটি পানিতে পড়ে যায়।’
হ্যারিসন লেকের ওই অংশে রয়েছে ওয়াটার পার্ক। পার্কের কর্মীরা ফাতেমেকে বুঝিয়েছিলেন, এমন গভীর লেক থেকে কোনোভাবেই সেই ফোন উদ্ধার করা যাবে না।
এরপর আর কী! কেঁদেকেটে হতাশ হয়ে ফিরে যান ভ্যাঙ্কুভারে। পরে নতুন আরেকটি ফোন কিনে নেন। তবে ব্যাকআপ না থাকায় ছবি, ফোন নম্বরের তালিকা এবং অন্যান্য তথ্য হারাতে হয়েছিল।
জলাশয়ের নিচে মূল্যবান জিনিসপত্রের খোঁজে ডুব দিয়ে বেড়ান ক্লেটন হেলকেনবার্গ। সেসব অভিযানের ভিডিও ধারণ করে পোস্ট করেন ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত বহু ফোন তিনি খুঁজে পেয়েছেন, বেশির ভাগই ফিচার ফোন ধাঁচের। ফোন পেলে সচরাচর শুকানোর জন্য সিলিকার কন্টেইনারে রাখেন তিনি। ফাতেমের আইফোন ১১ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি সেটা বাড়ি নিয়ে গিয়ে ময়লা পরিষ্কার করার পর সেটি চালু হয়। ব্যাপারটি চমৎকার।’
মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন থেকে সিম কার্ড বের করে আরেকটি মুঠোফোনে প্রবেশ করান। এরপর যোগাযোগ হয় ফাতেমের সঙ্গে।
ফাতেমে বলেন, ‘শুরুতে আমি খুবই অবাক হয়েছি। যেন একটি জোম্বি ফোন আমার কাছে ফিরে এল। কারণ, হারিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপারটি আমি পুরোপুরি মেনে নিয়েছিলাম।’
ফাতেমে জানিয়েছেন, ফোনের মাইক্রোফোন ভেঙে গেছে আর স্পিকারে এখন শব্দ অদ্ভুত শোনায়। বাদবাকি সব ঠিকঠাক। তখনো ৯৬ শতাংশ ব্যাটারি ছিল। আনন্দের ব্যাপার তো বটেই। তবে তাঁর সবচেয়ে ভালো লেগেছে ক্লেটন হেলকেনবার্গের কাজ। ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে লোকটি কিছুই নেননি।