ঢাকা | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ |
২৮ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

আবর্ত এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

আবর্ত এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
আবর্ত এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

গতকাল সোমবার বিকালে গুলশানের আমারি ঢাকা হোটেলে আইসিটি পাইওনিয়ার ক্লাব “ডিজিটাল বিপ্লব ও বাংলাদেশ” শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভায় আব্দুল্লাহ এইচ কাফির “আবর্ত এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা” বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কামাল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আইবিসিএস প্রাইমেক্স সফটওয়্যার (বিডি) এর প্রধান নির্বাহী এ তৌহিদ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। বিসিএস এর প্রতিষ্ঠাতা কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আফতাব উল ইসলাম, দিদার হোসেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যারা বিসিএস এর সাথে যুক্ত ছিলেন তারাও এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এদের মধ্যে সাইপ্রোকো কম্পিউটার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফকাত হায়দার, সাইটেক কমিউনিকেশন্স লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দিন, টেকনোহ্যাভেন কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী হাবিবুল্লাহ এন করিম এবং বøকচেইন অ্যাকাডেমি ফর রিসার্চ, এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) এর প্রধান খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী অন্যতম।

আবর্ত এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বইটির লেখক আব্দুল্লাহ এইচ কাফি দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে ধরে কাজ করছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন এবং শীর্ষস্থানীয় ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে তিনিও অন্যতম। তাঁর নিজের কথা এবং বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা তিনি এই বইটিতে তুলে ধরেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে অদম্য প্রকাশ।

মোড়ক উন্মোচনকালে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৮৭ সালে আমি বিসিএস এর সাথে যুক্ত হই। তখন থেকেই আমি কাফিকে চিনি। ওই সময়ে অনেক বাঁধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির প্রসার হতে শুরু করে। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির শ্রেষ্ঠ অর্জন গুলো শেখ হাসিনার শাসনামলেই হয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারের রুপকল্প ২০২১ এর আওতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিকে দারুণভাবে শক্তিশালী করেছে। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে খুবই সামান্য কিছু মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করত। সেই অবস্থা থেকে আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রার এই ইতিহাসটা কাফি খুবই সুন্দরভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছে। আমি মনে করি, আজকের প্রজন্মের আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই ইতিহাসটা জানা দরকার। কাফির বইটা তাই সবার জন্যে অবশ্য পাঠ্য।”

বিসিএস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কামাল বলেন, “১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে কিন্তু ১৯৮০’র দশক পর্যন্ত এ দেশে কম্পিউটারের ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। তার উপরে তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে কম্পিউটারের মাধ্যমে দেশের যাবতীয় তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেই আমরা এবং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু তারপরেও আমরা হাল ছেড়ে দেই নি। সেই সময় আমার নেতৃত্বে যে গুটিকয়েক মানুষ এই ইন্ডাস্ট্রিকে গড়ে তোলার জন্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে কাফি ছিল অন্যতম। বিসিএস কে গড়ে তোলার পাশাপাশি কাফি চাকরি করেছে পরে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আমি খুবই আনন্দিত যে কাফি এরকম একটি বই প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকের তরুণ তরুণীরা এই বইটির মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিকের ইতিহাসটা জানতে পারবে।”

এ তৌহিদ বলেন, “ বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে গড়ে উঠল সে সম্পর্কে জানার কোন ভাল বই বা ওয়েবসাইট নেই। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিক পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে যৎসামান্য যা জানা যায় ততটুকুই। এই বিবেচনায় কাফির এই বইটি খুবই সময়পোযগী একটি পদক্ষেপ। আজকের তরুণ-তরুণীরা যারা বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান। তারা এই বইটি থেকে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। এছাড়াও যারা বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করতে চান তাদের জন্যেও এই বইটি খুবই কাজে দেবে।” অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু এবং দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কাউন্সিল (এসটিআরসি) এবং বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, “ আমরা বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পার করে এসেছি। আজকের এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে আমার এই বইটি পাঠকদের কাছে তুলে দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এটা আর অস্বীকার করবার উপায় নেই যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে।

এখনকার তরুণ- তরুণীরা স্মার্টফোন দিয়ে খুব সহজেই সারা বিশে^র সাথে যুক্ত হতে পারছেন কিন্তু ১৯৮০’র দশকে যখন আমরা তরুণ ছিলাম আমরা এটা কল্পনাও করতে পারতাম না। সেই এনালগ যুগ থেকে শুরু করে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করার এই যে যাত্রা সেটা সত্যিই খুবই দারুণ। অসংখ্য বাঁধা বিপত্তি জেনেও সেসময়ে হাতেগোণা কিছু মানুষ দেশের তথ্য ও যোগোযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির ভিতটি গড়ে দিয়েছিলেন। সেই মানুষগুলোর গল্পই আমি এই বইতে তুলে ধরেছি। আমি চাই আজকের প্রজন্ম এই মানুষগুলোকে চিনুক, জানুক।”

আব্দুল্লাহ এইচ কাফি ১৯৮০ সালে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯০ সালে তিনি জে এ এন অ্যাসোসিয়েটস প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। ২০০০-২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এশিয়া ওশেনিয়া অ লের বৃহত্তম আই টি ফেডারেশন অ্যাসোসিওতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৩-২০১৪ সালে অ্যাসোসিও’র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্যে জনাব কাফি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভূত স্বীকৃতি লাভ করেন। ২০১৮ সালে তিনি অ্যাসোসিও লাইফটাইম কনট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২০ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।

আবর্ত,এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ,আবদুল্লাহ এইচ কাফি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend
Vention