ঢাকা | রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ |
২৬ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি তৈরিতে ‘প্রভাব বিনিয়োগ’ চায় ভিসিপিয়াব

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি তৈরিতে ‘প্রভাব বিনিয়োগ’ চায় ভিসিপিয়াব
ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি তৈরিতে ‘প্রভাব বিনিয়োগ’ চায় ভিসিপিয়াব

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিজ কমিশন (আইওএসকো) এর উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে সপ্তাহব্যাপী ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২১’ উদযাপন করছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) যৌথভাবে “প্রভাব বিনিয়োগঃ কোভিড পরবর্তী স্থিতিশীল অর্থনীতির লক্ষ্যে” শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রভাব বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমসের সমৃদ্ধিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। প্রভাব হচ্ছে যেকোন ব্যবসা বা উদ্যোগ পরিবেশগত (ইনভায়রনমেন্টাল), সামাজিক (সোশ্যাল) এবং সুশাসন (গভর্নেন্স) বা সংক্ষেপে ইএসজির মাধ্যমে কতটুক কল্যাণ সাধন করছে তার মানদন্ড। শুধুমাত্র ক্ষতিকারক বিষয়গুলোকে কমিয়ে আনা নয়, বরং উদ্যোক্তাদের প্রতিভা এবং উদ্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয়ভাবে ভালো ফলাফল তৈরি করার নামই হলো প্রভাব বা ইমপ্যাক্ট। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সময় ইএসজি উদ্যোগগুলোকে মাথায় রাখতে হবে, যেন উদ্যোক্তাগণ উদ্দেশ্য-চালিত ব্যবসার পরিচালনায় আগ্রহী হন যা কিনা ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে সাহায্য করবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মানুষের তৈরি সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সহজ নয়। সরকার, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, জনকল্যান এবং সামাজিক উদ্যোগের সাথে ব্যবসা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ নিতে হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলি রুবাইয়্যাত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি। আমাদের অর্থনীতির জন্য প্রভাব বিনিয়োগ খুবই জরুরী, কারণ এটি আর্থিক আয়ের পাশাপাশি ইতিবাচক সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরি করে। বাংলাদেশ এখন তার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে এরকম অবস্থানে রয়েছে যে এটি বিশ্বের প্রভাব বিনিয়োগের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) এর সভাপতি শামীম আহসান। এসময় তিনি বলেন, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে, বিশ্বের অধিকাংশ কোম্পানি অনতিবিলম্বে প্রভাব-ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করবে এবং বিশ্বের জনসংখ্যার বেশিরভাগই প্রভাব-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো পণ্য এবং সেবাসমূহ গ্রহণ করবে। এটি কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর ঝুঁকিপূর্ণতা হ্রাস করতে এবং একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে আমাদেরকে সাহায্য করবে। প্রভাব বিনিয়োগ যেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই সরকারি বিভাগ এবং সংস্থাগুলো যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত হবে এই ইকোসিস্টেমকে অনুকূল নীতিমালা এবং কর প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নুরুন নাহার বলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যবসার ঝুঁকি ও মুনাফার পাশাপাশি তা পরিবেশগত, সামাজিক এবং সুশাসনের মাধ্যমে কতটুক কল্যাণ সাধন করছে, তাও বিবেচনা করেন। এই কারণেই অনেক কোম্পানি এখন আর্থিক বিবরণীর পাশাপাশি তাদের “ইম্প্যাক্ট ওয়েটেড স্টেটমেন্ট” বা “প্রভাব-ভিত্তিক বিবরণী”-ও প্রস্তুত করছে। পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়ের প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই কম সুদে সবুজ পণ্য ও উদ্যোগে ্রিফিন্যান্স সহায়তা দিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, বিশেষ করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এই সম্পৃক্তটা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি খাত যৌথভাবে প্রভাব উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। ১৯৯১ সালের তুলনায় বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির পাঁচগুন অধিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রভাব বিনিয়োগের সুবিধা উপলব্ধি করতে আমাদের একটি প্রাণবন্ত পুঁজিবাজার দরকার।। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি খাতের সহায়তা বাংলাদেশ থেকেও টেসলা, ফেসবুক, গুগলের মতো কোম্পানিগুলো উঠে আসতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এককভাবে পৃথিবীর সব হুমকি মোকাবেলা করতে পারবেনা। মানুষের তৈরি সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকারের একার প্রচেষ্টাও যথেষ্ট নয়। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী একটি নতুন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তার জন্ম হয়। এই নতুন সিস্টেমই হল ‘প্রভাব বিনিয়োগ বা ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট’। এটি সরকার, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, জনকল্যান এবং সামাজিক উদ্যোগের সাথে ব্যবসা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের সেতুবন্ধন তৈরি করে। পুজি এবং উদ্ভাবনাকে একত্রিত করে ইএসসি সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ‘প্রভাব বিনিয়োগ বা ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ অতীব জরুরি।

গত কয়েক বছরে প্রভাব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশাল প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অগ্রযাত্রা এবং কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা এবং ফিনটেক খাতের পরিপূর্ণ সম্ভাবনার ফলে বাংলাদেশ প্রভাব বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলেও জানান বক্তারা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএসএসি কমিশনার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান ও প্রফেসর ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভুইয়া, বিএসিইসির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আজম, ভিসিপিয়াবের সহ-সভাপতি জিয়া ইউ আহেমদ, সিফ বাংলাদেশ ভেঞ্চারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মাহমুদ, মসলিন ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ হাফিজ, অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএইচ আসাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ প্রমুখ।

ভিসিপিয়াব
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend