ঢাকা | রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
১৯ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে হলিউডে তথ্যচিত্র

২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে হলিউডে তথ্যচিত্র
২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে হলিউডে তথ্যচিত্র

৭ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রিজার্ভ চুরি এবং হ্যাকারদের একটি টাইপিংয়ের ভুলে দৈবক্রমে কীভাবে আরও অর্থ আটকে গিয়েছিল, সেই গল্প নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে হলিউডে।

ব্যাংকিং খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনা পুরো বিশ্বে সাড়া ফেলে, ব্যাংক খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে নাড়াচাড়া শুরু হয়।

প্রযুক্তি খাতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ভার্জ’ জানিয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ নামের তথ্যচিত্রটি মুক্তি পাবে আগামী ১৫ অগাস্ট।

ড্যানিয়েল গর্ডন পরিচালিত এ তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে। জুরাসিক ওয়ার্ল্ড, মেমোরি, হ্যালোউন কিলস, নো টাইম টু ডাই, বিস্ট, ও সর্বশেষ ইরান-আফগানিস্তান নিয়ে নির্মিত ‘কান্দাহার’ এর মত সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র হলিউডে এসেছে ইউনিভার্সাল পিকচার্সের মাধ্যমে।

ওই সাইবার হামলা কতটা মারাত্মক ছিল এবং বিশ্বের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কেন তখন বার বার সতর্ক করেছিলেন সেসব উঠে এসেছে এই ডকুমিন্টোরিতে, যার ট্রেইলার ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

ভার্জ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ব্যাংক লেনদেনের বার্তা আদানপ্রদানের সেবা সুইফটের স্পর্শকাতর ও কঠোর গোপনীয়তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, ব্যবহারকারীদের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে হ্যাকাররা কীভবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নিয়েছিল, তার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে এ ডকুমেন্টারিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সাইবার অপরাধের বৃহত্তর চিত্রটি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও লেখক মিশা গ্লেনির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইবার অপরাধ কতটা ধারালো হয়ে উঠেছে, সেই চিত্রও এসেছে।

মিশা গ্লেনির ভাষ্য, সমন্বিত এই সাইবার অপরাধ মহামারী, গণবিধ্বংসী অস্ত্র ও জলবায়ু পরিবর্তনের মত একই ধরনের হুমকির সৃষ্টি করছে পৃথিবীর মানুষের জন্য।

ভার্জ লিখেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সময় হ্যাকারদের আংশিক ব্যর্থতা এবং পরের আক্রমণগুলোর জন্য হ্যাকাররা কীভাবে নিজেদের আরও দক্ষ করে তুলেছে, সেটি জানার আগ্রহই যে কাউকে এ ডকুমেন্টারিতে চোখ রাখতে উৎসাহিত করবে।

২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে এক মাস পর, ফিলিপিন্সের সংবাদ মাধ্যমের খবরে। তখন বিশ্বজুড়ে ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছিল।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।

এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে।

এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।

তিন বছর পর ২০১৯ সালে ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। রায়ে বলা হয়, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার’ ওই আদালতের নেই।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনও।

রিজার্ভ চুরির ওই ঘটনার জেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সে সময় ঢাকার মতিঝিল থানাতেও একটি মামলা হয়, যার তদন্ত প্রতিবেদন গত সাত বছরেও জমা পড়েনি।

রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো বিরুদ্ধেই কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের সবারই নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি হয়েছে। অনেকে চাকরি শেষে অবসরেও গেছেন।

রিজার্ভ চুরি,বাংলাদেশ ব্যাংক,৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রিজার্ভ চুরি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend