বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি'র (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট’র সহায়তায় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ' বিল্ডিং মেন্টাল হেল্থ রেজিলিয়েন্স এগেইন্সট সাইবারবুলিং অ্যান্ড অনলাইন হার্মস' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটালভাবে সংযুক্ত বিশ্বে সাইবার জগতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের মানসিক ও মনোসামাজিক সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মোট ছয়টি সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০ অনুসারে সকল পর্যায়ে একটি টেকসই, অধিকারভিত্তিক, সামগ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আন্তঃখাত সমন্বয় বিবেচনায় সংবেদনশীল মানসিক এবং মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস ক্যাফে’র সহযোগিতায় ইউএনডিপি বাংলাদেশের 'পার্টনারশিপস ফর এ মোর টলারেন্ট, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ (পিটিআইবি) প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান 'মনের বন্ধু' প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন। সাইবারবুলিং এবং অনলাইনের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবের আঘাত সামলে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, নিজের মনের যত্ন এবং অন্যের প্রতি সহনশীল হওয়াসহ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী পর্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় সচিব মো. সামসুল আরেফিন অনলাইনে যুক্ত থেকে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেন। তিনি বলেন, 'এই উদ্যোগ শুধু ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও গ্রহণ করা দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এমন উদ্যোগগুলোই সহায়ক হবে।'
প্রশিক্ষণ কর্মশালা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিসিসি'র নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১), রণজিৎ কুমার বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয় অভিভাবকদের জন্যও প্রয়োজন। সবাই মিলেই আমরা আমাদের সাইবার জগতকে ভালো রাখতে পারি'।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার হাসিনা মমতাজ, প্রথম আলোর ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ জাবেদ সুলতান পিয়াস, মনের বন্ধু’র লিড মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কাজি রুমানা হক প্রমুখ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডা. হেলাল বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, “স্ট্রেঞ্জার ইজ আ ডেঞ্জার” । অনলাইনে আমরা বহু অপরিচিত মানুষের সামনে নিজেকে তুলে ধরি। তাই সাইবার দুনিয়ায় অচেনাদের নয়, বরং বন্ধুদের সহায়তায় নিজেকে ভালো রাখতে হবে।’
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশে গৃহীত উদ্যোগটি যৌথভাবে ইউএনডিপি-ডিপিপিএ'র বৈশ্বিক উদ্যোগ 'ইন্টেগ্রেটিং মেন্টাল হেলথ্ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট (এমএইচপিএসএস) ইন কনফ্লিক্ট প্রিভেনশন অ্যান্ড পিসবিল্ডিং' এর অংশ। এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস ক্যাফে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস (সিপিজে), ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), সিবিএম গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি ইনক্লুশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইউএন উইমেন।
উল্লেখ, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে পিটিআইবি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) জনাব মো: আবু সাঈদ, ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিষ্ট শীলা তাসনীম হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডোল্যান্ড, ইউএনডিপি'র প্রজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টোলম্যান, বাংলাদেশে জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার নাদিম ফরহাদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসের পক্ষে অন্তরা তাসনীম, মনের বন্ধু’র প্রধান নির্বাহী কর্মকতা তৌহিদা শিরোপাসহ পিস ক্যাফের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।