ঢাকা | রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
২৭ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার ডিজিটাল সংযোগ : প্রধানমন্ত্রী

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার ডিজিটাল সংযোগ : প্রধানমন্ত্রী
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার ডিজিটাল সংযোগ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ।তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাটি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩ এর উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তিন দিনের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাসমূহ প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকারি বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস এন্ড বিগ-ডাটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।’

ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর সিত্রাং ঘুর্ণিঝড়ের সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় বিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছেন।

এছাড়া তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশে^র স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তাঁর সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ, ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের পর এটি ১৩,২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না।সরকার প্রধান উল্লেখ করেন যে, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৯৫৬২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে যা জনগণ ও সরকারি অফিসগুলোতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

তিনি বলেন, সারাদেশে মোট ৮৬০০টি পোস্ট অফিসকে ডিজিটালে পরিণত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন,বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বৈষম্য এবং দামের পার্থক্য দূর করা হয়েছে।

প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশে ‘এক দেশ এক দরের’ একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বৈষম্যহীন ‘এক দেশ এক দর’ শুল্ক ব্যবস্থা চালু করার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাসোসিও (এএসওসিআইও)-২০২২ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, ২০২১ সালে ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ আর আগামী ২১০০ এ ডেল্টা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যেই সরকারের এই প্রযুক্তি এবং কানেকটিভিটির মহাসড়কে পা রাখলো। আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণেই এই ডিজিটাল সংযোগের বিকল্প নেই।

স্মার্ট বাংলাদেশের ‘স্মার্ট’ রূপকল্প তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আমাদের সামনে উপস্থিত শিশু, যাদের বয়স এখন ১৫-১৬, তারা মানবিক ও উন্নত সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এখানে স্মার্টনেস অর্থ হবে টিকে থকার জন্য সফট স্কিল অর্জন, প্রবলেম সলভিং দক্ষতা। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিকরা কাজে হবেন সৎ, মানবিক, পরমত সহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক ও সৃজনশীল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালি জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে আগামির প্রজন্মের ওপর। কারণ সবধরণের আধুনিক প্রযুক্তিলভ্য জ্ঞান তাদের কাছে আছে। ১৯৯২ সালে সাবমেরিন ক্যাবল গ্রহণ না করা আমরা প্রযুক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য পজিটিভ দিক হলো আমাদের তরুণের সংখ্যা বেশি। ইউরোপ আমেরিকার সমস্যা হলো তাদের ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট নেই। শিক্ষার আমুল পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির সাথে সমন্বয়ের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো সুবিধা হলো আউটসোসিংয়ে আমাদের তরুণরা খুব ভালো করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এসব আধুনিক প্রযুক্তি রোবটিক্স উন্নত সেবা ব্যবস্থা অ্যাপ নির্মাণসহ অসংখ্য কাজে ডিজিটাল সংযোগ দেশকে অনেকদুরে এগিয়ে নেবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহকেন্দ্রের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১১টি দেশের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিস সবধরণের যোগাযোগ হয়ে উঠেছে আরো সহজ মাত্র একটি স্মার্টফোন ও সংযোগের মাধ্যমে।এখন হাতের মুঠোয় এন্ডয়েড মোবাইলের মাধ্যমে সব বিল পেমেন্ট করা যায়। করোনার সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা খাত এমনকি অফিসও খুব সহজে চলেছে। ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন শপিং হয় ৬ লাখ মাসে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ তরুণদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছে।প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রযুক্তিগত সবধরণের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।

আইইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, পেপারলেস সিমলেস এবং ক্যাশলেস কানেকটিভিটি হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। বাংলাদেশের এনালগ প্রযুক্তি থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে; এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গ্রামে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে আমরা প্রস্তুত। এখন সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রত্যাশা করছি ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মেলার স্টল ঘুরে দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ৫জিসহ সর্বাধুনিক সব ফিচার ও উদ্ভাবন দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলার মূল আয়োজক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বাস্তবায়ন সহযোগী ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। তাদের সাথে থাকছে মোবাইল অপারেটর সংগঠন অ্যামটব। অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং। মেলার টাইটেনিয়াম স্পন্সর হুয়াওয়ে। ডায়মন্ড স্পন্সর জেডটিই করপোরেশন।

মেলায় মুজিব কর্নারে হলোগ্রাফির পাশাপাশি ভিআর হেডসেটে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ঘুরে আসতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ৫জি সুবিধার নানা খুঁটিনাটি তুলে ধর হবে গ্রাহকদের কাছে। ২০টি প্যাভিলিয়ন, ৩২টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৭টি স্টলে আইপিভি সিক্স সহ উচ্চ গতির ইন্টারনেটে বাংলাদেশের ডিজিটাল অভ্যূদয় তুলে ধরবে এক্সিবিটররা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন ও স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে তিন দিনের মেলায় থাকছে মোট ৮টি সেমিনার। ৪টি সেমিনার নিয়ে প্রথম বারের মতো মোবাইল কংগ্রেস করবে চার মোবাইল অপারেটর। মেলা প্রাঙ্গনেই থাকছে ইনোভেশন জোন। সেখানে আইওটি, রোবটিক এবং সম্ভাব্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন তুলে ধরবেন আগামীর দামাল উদ্ভাবকেরা।

১৪টি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ পদক। রচনা, চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, সেরা স্টল এবং সেরা উদ্ভাবকেরা পাবেন ডিজিটিাল বাংলাদেশ মেলা পুরস্কার।

স্মার্ট বাংলাদেশ,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩,ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend