ভালো নেই নোকিয়ার অবস্থা। ফিনল্যান্ডভিত্তিক এই মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবার বিশ্বব্যাপী ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে এ কর্মী ছাঁটাই করবে কোম্পানিটি। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে কোন অঞ্চল থেকে এই সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হবে, তা স্পষ্ট করেনি নোকিয়া। বর্তমানে ৫–জি নেটওয়ার্কে মনোযোগ দেওয়া ছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডিজিটাল অবকাঠামোগত গবেষণায় বেশি বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে নোকিয়া।
বিশ্বজুড়ে এখন নকিয়ার কর্মীসংখ্যা ৯০ হাজার। ২০১৫ সাল থেকেই কোম্পানিটি কর্মী ছাঁটাই করে আসছে। এখন পর্যন্ত হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এবার ৬০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কোম্পানিটি আবারও ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিল।
নোকিয়ার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘এই অবস্থাটা এখন শুধুই অনুমান। এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। আমরা এখন শুধু স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদের বিষয়টি জানিয়ে রাখছি। তবে যেখানে যেখানে আলোচনার প্রয়োজন পড়বে, শিগগিরই সেসব আলোচনা শুরুর ব্যাপারে আমরা আশবাদী।’
২০২০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে প্রায় ৪০ হাজার, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০ হাজার ৫০০, চীনে ১৩ হাজার ৭০০, উত্তর আমেরিকায় ১২ হাজার ও লাতিন অঞ্চলে ৩ হাজার ৭০০ কর্মী কাজ করছেন নোকিয়ার।
নতুন ছাঁটাই কর্মসূচি অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডে কোম্পানিটির সদর দপ্তরের আনুমানিক ৩০০ কর্মীকে এবার ছাঁটাই করা হতে পারে। গত বছর ফ্রান্সে সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই করেছিল নোকিয়া। কয়েক বছর ধরে প্রায় সব দেশে কোম্পানিটি কর্মী ছাঁটাই করে চলেছে।
নোকিয়ার প্রধান নির্বাহী পেক্কা লান্ডমার্ক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন সিদ্ধান্তগুলো কখনো হালকাভাবে নেওয়া হয় না। এই প্রক্রিয়ায় সবার প্রতি (যাঁদের ছাঁটাই করা হবে) কোম্পানির পক্ষ থেকে সহযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে আমি অগ্রাধিকার দেব।’
গত বছর দায়িত্ব নেন পেক্কা লান্ডমার্ক। এরপর ৫–জি লক্ষ্য পূরণে বাধা হতে পারে, এমন বিষয়গুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন তিনি। সুইডেনের টেলিকম কোম্পানি এরিকসন এবং চীনের হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নোকিয়ার পারফরম্যান্সকে বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য তাঁর।
নোকিয়া একসময় বিশ্বের বৃহত্তম হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক ছিল, তবে অ্যাপল-এর আইফোন এবং স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারে উপযোগী টাচস্ক্রিন ফোনগুলোর জনপ্রিয়তা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল এই কোম্পানি। পলে ধীরে ধীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তীব্রভাবে হেরে যায় তারা।
তবে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস উপলক্ষে ‘এক্স’, ‘এক্স প্লাস’ ও ‘এক্সএল’ নামে অ্যান্ড্রয়েডের কাস্টমাইজড সংস্করণের তিনটি ফোন উন্মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন ধরেই নোকিয়া অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর স্মার্টফোন আনবে বলে প্রযুক্তি বিশ্বে আলোচনা হচ্ছিল।